কোরবানির ঈদের মাত্র এক দিন বাকি। শেষ সময়ে দর কষাকষিতে জমেছে রাজশাহীর পশুর হাট। হাটে ছোট, মাঝারি এবং বড় আকারের গরু পর্যাপ্ত থাকায় ক্রেতারা সামর্থ্য অনুযায়ী কিনছেন। তবে হাটে মাঝারি আকারের গরুর চাহিদা বেশি বলে জানা গেছে।

কোরবানির পশুর হাটে বরাবরই ক্রেতাদের দাম নিয়ে অভিযোগ থাকলেও বিক্রেতরা বলছেন, গো খাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় লালন-পালন খরচ বেড়েছে। তবে কোরবানির পশু ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে।  

সিটি পশুর হাটের পর রাজশাহীর দ্বিতীয় বৃহৎ পশুর হাট বসে পুঠিয়া উপজেলার বানেশ্বরে। মঙ্গলবার (২৭ জুন) বানেশ্বরে হাট বার। কোরবানি উপলক্ষ্যে বানেশ্বর হাট কলেজ মাঠে বসেছে পশুর হাট। হাটে দুপুর সাড়ে ১২টার পর থেকে নসিমন, করিমন, ভটভটিতে কোরবানির পশু নিয়ে আসতে শুরু করেন খামারি ও ব্যবসায়ীরা। দুপুর ১টার পরে কলেজ মাঠের সিংহভাগ ভরে যায় কোরবানির পশুতে। দুপুর আড়াইটার পর পুরোদমে জমে ওঠে পশু কেনাবেচা।

হাট থেকে ১ লাখ ৭২ হাজার টাকায় গরু কিনেছেন মিনহাজুল ইসলাম। তিনি ছাড়াও হাটে কোরবানির পশু পছন্দ করতে এসেছেন পাঁচজন ভাগিদার। সবার সম্মতিতে কিনেছেন গরুটি। 

মিনহাজুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুপুর ১টার দিকে এসে পুরো হাট ঘুরেছি। পছন্দ হচ্ছে গরু, তবে দাম মিলছে না। পাঁচটা গরুর দাম নিয়ে মালিকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা বেশি দাম চাচ্ছেন, তাই গরু নেওয়া হয়নি। সর্বশেষ এই গরুটা সবার পছন্দ হয়েছে। মাংস যা হয় হোক, পছন্দ হয়েছে তাই গরু কিনেছি আমরা।

রাজশাহীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে গরু কেনেন ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম। তারা কয়েকজন মিলে গরু কেনাবেচার  ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা শুধু কোরবানিকে কেন্দ্র করে গরু কেনেন না,  সারাবছর গরু কেনাবেচার ব্যবসা করে থাকেন। 

সাইদুল ইসলামের সহযোগী জমসেদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে গরু কিনে থাকি। এরপর সেই গরুগুলো রাজশাহীর বিভিন্ন হাটে বিক্রি করি। এটা আমাদের পেশা ধরে নিতে পারেন। কোরবানির সময়ে বেশি গরু কিনে থাকি। কখনো কেনা গরুগুলো বাড়িতে নিয়ে যাই। আবার কখনো গরুর মালিকের বাড়িতে রাখি। সুবিধা মতো সরাসরি হাটে নিয়ে বিক্রি করি গরু।

বাঘার মণিকগ্রাম থেকে দুটি গরু হাটে বিক্রি করতে নিয়ে এসেছেন সাজ্জাদ হোসেন। তিনি বলেন, একটা গরু বিক্রি করেছি ১ লাখ ৯২ হাজার টাকায়। আরেকটি ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। নিজের গরু বিক্রি শেষে কোরবানির জন্য গরু দেখছি। কমবেশি করে আজকেই কিনবো গরু। আর সময় নেই।

গরুর ক্রেতা আবদুল গণি বলেন, আমার তিন ভাই মিলে একটা গরু কোরবানি দেব। গত বছরের চেয়ে এই বছর গরুর দাম বেশি। যে টার্গেট নিয়ে হাটে এসেছিলাম,তার থেকে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা বেশি লাগছে। হাটে গরু ছোট হলেও দামের দিক দিয়ে বড়। 

গরুর খামারি রাফাতুল ইসলাম বলেন, খামারে ছয়টি গরু বিক্রির উপযোগী ছিল। খামার থেকেই দুইটা গরু বিক্রি হয়েছে। সেই গরুগুলো এলাকার মানুষ কিনেছেন। বাকি চারটা গরু হাটে বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছি। তবে গাড়িতে (নসিমন) সমস্যা হওয়ার কারণে হাটে আসতে কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। তারপরও হাটে ঢুকেই একটা গরু বিক্রি করতে পেরেছি। আশা করছি এই তিনটাও বিক্রি হয়ে যাবে।

তিনি বলেন, গতবারের চেয়ে এবার গরুর দাম বেশি বলছেন সবাই। কিন্তু গরুর লালন পালন খরচ বিবেচনা করলে কিছুই থাকবে না। সেই খরচ ধরলে গরুর দাম আরও বেড়ে যাবে। তবে গরু লালন-পালন করে আগের মতো আর লাভ হয় না। অল্প অল্প করে গরুর পেছনে খরচ করে বিক্রির পর টাকাগুলো একসঙ্গে পাওয়া যায়, এটাই লাভ।

ঢাকার গাবতলীর গরু ব্যবসায়ী আলফাজ হোসেন। তিনি বানেশ্বর হাট থেকে ছয়টি গরু কিনেছেন। তার গরুগুলোর মধ্যে দুটি মাঝারি এবং তিনটি বড় আকারের। এর মধ্যে একটি তুলনামূলক ছোট আকারের গরু রয়েছে। তিনি গরুগুলো ট্রাকে করে নিয়ে যাবেন ঢাকার হাটে। 

আলফাজ হোসেন বলেন, আমরা চারজন শেয়ারে ব্যবসা করি। হাটে আমাদের দুইজন পার্টনার রয়েছে। আমরা দুইজন রাজশাহীর হাট থেকে গরু কিনে পাঠাবো। তারা সেখানে বিক্রি করবেন। এবার গরুর দাম বেশি। তাই তুলনামূলক কেনাবেচা কম। তারপরও চাঁদ রাতে গরু বেশি কেনাবেচা হয়।

বানেশ্বর পশুর হাটের ইজারাদার আবুল কালাম আজাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, হাটে প্রচুর কোরবানির পশু এসেছে। বেচাকেনা বেশ জমেছে। 

শাহিনুল আশিক/আরএআর