রাত পোহালেই ঈদ। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শেষ মুহূর্তে নাড়ির টানে পাটুরিয়া ফেরিঘাট হয়ে আজও বাড়ি ফিরছে মানুষ। পাটুরিয়া থেকে ফেরি ও লঞ্চে স্বস্তিতে পার হতে পারলেও বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগে পড়েছে এসব মানুষ। বুধবার (২৮ জুন) দুপুরে পাটুরিয়া ঘাটে এমন চিত্র দেখা যায়। 

মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ও আরিচা-কাজিরহাট নৌরুট দিয়ে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীরা সব সময়ই যাতায়াত করেন। যে কোনো উৎসবের সময় এই নৌরুটে যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। তবে পদ্মা সেতু চালুর পর পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে যানবাহন ও যাত্রী পারাপারের হার অনেকটা কমে গেছে। এরপরও ঈদে যাত্রী ও যানবাহনের কিছুটা চাপ বেড়ে যায়। ঢাকার আশুলিয়া, সাভার ও গাজীপুরের যাত্রীরা এখনো এ নৌরুট ব্যবহার করেন।  

বিআইডব্লিউটিসি আরিচা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ২৪৭টি ট্রিপে পাটুরিয়া ঘাট থেকে দৌলতদিয়া ঘাটের দিকে ৮০০ বাস, ৬৫১টি জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক, ২ হাজার ১৬টি ছোট গাড়ি ও ৪ হাজার মোটরসাইকেল পার করা হয়েছে। দৌলতদিয়া ঘাট থেকে পাটুরিয়া ঘাটের দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ২২৫ ট্রিপে ৬০৭টি বাস, জরুরি পণ্যবাহী ট্রাক ২১৮টি, ছোট গাড়ি ১ হাজার ৪৮৬টি ও  ১৪৫টি মোটরসাইকেল পার করা হয়েছে। ঈদে যাত্রী ও যানবাহন পারাপারে নৌরুটে ছোট-বড় মিলে ১৮টি ফেরি চলাচল করছে। যানবাহন ও যাত্রীর তুলনায় পর্যাপ্ত ফেরি থাকায় ঈদে ঘরমুখী যাত্রীরা স্বস্তিতেই ঘাট পার হতে পারছেন। তবে নদীতে পানি বাড়ার কারণে পাটুরিয়া ঘাট থেকে দৌলতদিয়া ঘাটে পৌঁছাতে ফেরিগুলোকে ঘুরে যেতে হচ্ছে। এতে ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় বেশি লাগছে। 

গোপালগঞ্জগামী যাত্রী পলাশ মোল্লা বলেন, মানিকগঞ্জে একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করি। পারিবারের সকলেই গ্রামের বাড়িতে থাকেন। আজকে ছুটি পাওয়ার পর নিজের মোটরসাকেল নিয়েই রওনা হয়েছি। পাটুরিয়া ফেরিঘাটে আসার পরপরই ফেরিতে উঠতে পারলেও বৃষ্টির কারণে ভিজে গেছি। দুর্ভোগ হলেও বাড়িতে গিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ মা-বাবার সঙ্গে ঈদ করতে পারাটাই অনেক আনন্দের।

কুষ্টিয়াগামী লিয়াকত মিয়া বাইপাইলে একটি পোশাক কারখানায় কাজ কারেন। ছুটি পেয়েই গ্রামের বাড়িতে ছুটছেন। তিনি বলেন, নবীনগর এলাকা ছাড়া মহাসড়কে তেমন জট নেই। ঘাটেও বিগত বছরগুলোর মতো এতো ভোগান্তিও নেই। তবে ঘাট এলাকায় এসে বাস থেকে নেমে লঞ্চে ওঠার আগেই বৃষ্টিতে ভিজে গেছি। এইটাই আমার কাছে ঈদ।

আরেক যাত্রী সফিক বিশ্বাস বলেন, লোকাল বাস ফেরিঘাট পর্যন্ত যাওয়া কথা থাকলেও ঘাট থেকে প্রায় এক কিলোমিটার আগেই যাত্রীদের নামিয়ে দিচ্ছে। হেঁটে ঘাটে আসতে হয়, এ সময় পরিবার আর ব্যাগ নিয়ে বৃষ্টিতে ভেজা ছাড়া কোনো উপায়ও নেই। ঘাট এলাকায় দাঁড়ানোর মতো পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় বৃষ্টিতে দুর্ভোগ হলেও স্বস্তিতে ফেরি-লঞ্চে করে নদী পার হতে পারছি। আগের মতো দীর্ঘ সময় ঘাটে বসে থাকতে হচ্ছে না। এটুকু দুর্ভোগ ঈদ আনন্দের কাছে কিছুই ‍না।

এবার পাটুরিয়া-দৌলতদিয়ায় ২২টি ছোট লঞ্চ দিয়ে যাত্রী পারাপার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পাটুরিয়া ঘাটের লঞ্চ সুপারভাইজার পান্না লাল নন্দী। তিনি বলেন, নদীতে পানি বাড়ায় এবং স্রোতের কারণে যাত্রী পারাপারে কিছুটা সময় বেশি লাগছে।

স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বিভিন্ন ব্যক্তিগত গাড়িতে করেও মানুষজন গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছে। তবে আজ ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যাও কমে এসেছে। ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জেলার শিবালয় উপজেলার টেপড়া থেকে টেপড়া-নালী সড়ক হয়ে এসব ব্যক্তিগত গাড়ি পাটুরিয়ার পাঁচ নম্বর ঘাটে যাচ্ছে। এরপর ওই ঘাট দিয়ে ফেরিতে উঠে এসব গাড়ি ও যাত্রীরা নদী পারাপার হচ্ছেন।

বিআইডব্লিউটিসির আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) শাহ মো. খালেদ নেওয়াজ বলেন, আজ ভোর থেকে বৃষ্টির মধ্যেও ঈদে ঘরমুখী যাত্রীরা পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় আসছেন। বৃষ্টিতে কিছুটা ভোগান্তি হলেও ফেরির জন্য কোনো যানবাহন ও যাত্রীকে ফেরির জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে না। এই নৌরুটে ছোট-বড় মিলে ১৮ ফেরি চলাচল করছে। এই ঘাট হয়ে অনেকটা স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছেন ঈদে ঘরমুখী যাত্রীরা।

সোহেল হোসেন/আরএআর