চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পৌর এলাকার বাসিন্দা রমজান আলী (৬০) একসময় কাজ করতেন বাইসাইকেল মেরামতের। এখন দিনমজুর। নাম রমজান আলী হলেও এলাকার মানুষ তাকে চেনেন জয় বাংলা নামে। কারণ, তিনি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে গত ৩১ বছর ধরে ঈদুল আজহায় পশু কোরবানি দিয়ে আসছেন।

বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর নামে কোরবানি দিয়েও এর বিনিময়ে তার নেই কোনো চাহিদা। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দিনমজুর রমজান উচ্চবিত্ত না হলেও বঙ্গবন্ধুকে ভালোবেসে প্রতি বছর কোরবানি দিয়ে থাকেন। কিন্তু দলের কাছে কোনোদিন কিছু চাননি তিনি। রমজান আলী শিবগঞ্জ পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য ও চৌধুরীপাড়া মহল্লার মৃত ইউনুস আলীর ছেলে।  

বুধবার (২৮ জুন) দুপুরে সরজমিনে শিবগঞ্জ পৌর এলাকার রমজানের বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, যুবক বয়স থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভক্ত তিনি। তাই ছোট থেকেই আওয়ামী লীগের সব মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করা ছিল তার নেশা। দলের প্রতি তার এমন অবদান ও ভালোবাসার স্বীকৃতি হিসেবে তার ডাকনাম জয় বাংলা নামে একটি মোড়ের নামকরণ করে পৌর কর্তৃপক্ষ। এমনকি তার দাবির প্রেক্ষিতে জয় বাংলা চত্ত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর মুর‍্যাল নির্মাণ করা হয়। 

তিনি এবারও পবিত্র ঈদুল আজহায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে কোরবানির ব্যবস্থা রেখেছেন। এখন পর্যন্ত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে ১১ বার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে ১৯ বার কোরবানি দিয়েছেন রমজান আলী ওরফে জয় বাংলা। 

এ বিষয়ে রমজান আলী বলেন, শেখ হাসিনার প্রতি আমার ভালোবাসা দেখে অনেক আগে থেকেই এলাকার মানুষ আমাকে বঙ্গবন্ধুর ছেলে, কেউ আবার শেখ হাসিনার ছেলে বলে ডাকে। অনেকে পাগল বলে। এজন্য আমার নাম রমজান আলী হলেও আমাকে সবাই জয় বাংলা নামেই চেনে। এমন কাজ করতে পেরে আমি গর্বিত। 

তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ভালোবেসে ১১টি কোরবানি দিয়েছি। পরে জানতে পারলাম মৃত মানুষের নামে নাকি কোরবানি করা যায় না। তাই জানার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে গত ২০ বছর ধরে কোরবানি দিয়ে আসছি। এবারও দেব। গরু কিনে এনেছি। আমার ইচ্ছে ছিল একটি বড় গরু শেখ হাসিনার নামে কোরবানি দেওয়ার। কিন্তু আমি গরিব মানুষ, এতো টাকা কোথায় পাব? তাই সাতজন মিলে অংশীদার হয়ে একটি গরু কোরবানি দেই। এবারও তাই করেছি। 

রমজান আলী বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি, দল করি বলে ২০০১ সালে সালে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা আমার দোকান ভাঙচুর করেছে। এছাড়াও ১৯৯১ সালে আমি বিএনপি-জামাতের অত্যাচারে রাজশাহীতে ১০ বছর কাটিয়েছি। বাড়িতে থাকতে পারিনি। এরপর আমাকে দল ত্যাগ করতে অনেক আত্মীয় স্বজন পরামর্শ দিলেও আমি তা শুনিনি। 

তিনি আরও বলেন, আমি জীবনে যতদিন বাঁচব, শেখ হাসিনার নামে একটি করে কোরবানি দিয়ে যাব। দলের জন্য কাজ করবো। তবে কিছু পাওয়ার আশায় না, এসব করি দলকে ভালোবেসে। তবে আমার কোনো কিছু পাওয়ার ইচ্ছে নাই। শুধু একটিই আক্ষেপ, প্রধানমন্ত্রীকে একবার সরাসরি দেখার। 

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল হাকিম বলেন, আমার বয়স প্রায় ৪০ বছর। আমি ছোট থেকেই দেখছি রমজান বঙ্গবন্ধুর ভক্ত। দিন রাত দলের জন্য কাজ করেন। দলকে ভালোবাসেন। এমনকি আগে প্রতি বছর বঙ্গবন্ধু নামে কোরবানি দিত। কিন্তু ২০ বছর আগে শুনেছি মৃত মানুষের নামে কোরবানি হয় না। তাই এখন শেখ হাসিনার নামেই কোরবানি দিয়ে থাকেন তিনি। এমন মানুষ এলাকায় আর নেই।

চা দোকানি তরিকুল ইসলাম জানান, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর জন্য তিনি পাগল। তার নাম অনেকেই জয় বাংলা জানে। এলাকার সিংহভাগ লোকই তার নাম রমজান আলী, এটা জানে না। তার নামে শিবগঞ্জ পৌরসভা সংলগ্ন একটি বাজার রয়েছে, যার নাম জয় বাংলা চত্ত্বর। 

ওয়ার্ড আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, দলের জন্য পাগল রমজান আলী। তার ভালোবাসা ও দলের প্রতি ত্যাগ অন্য সকলের জন্য অনুকরণীয়। নিজের আয় তেমন বেশি না হলেও সোখান থেকে প্রতিবছর প্রধানমন্ত্রীর নামে কোরবানি দেয়। 

শিবগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র মোহা. কারিবুল হক রাজিন বলেন, রমজান আলী বঙ্গবন্ধুর একজন একনিষ্ঠ ভক্ত। এটা আমরা অনেক আগে থেকেই জানি। সে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার নামে কোরবানিও দিয়ে থাকেন। আর এলাকার মানুষ তাকে চেনে জয় বাংলা নামে। শিবগঞ্জ পৌসভার পাশে রমজান গড়ে তুলেছিলেন জয় বাংলা সংগ্রাম পরিষদ। তাই সেই পরিত্যক্ত জায়গায় নতুন নাম দেয়া হয়েছে জয় বাংলা চত্বর। 

জাহাঙ্গীর আলম/এমএএস