একটি ষাঁড়কে সন্তানের মতো প্রতিপালন করেছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের বাঁশবাড়ি এলাকার খামারি জামিল আশরাফ মিন্টু। বিশাল আকৃতির সাদা ও কালো রঙের সংমিশ্রণে হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড়টির নাম রাখেন ‘চৌধুরী’। তিন বছর ধরে ভালোবাসায় ষাঁড়টিকে বড় করেছেন মিন্টু। এবারের ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে আলোচনায় আসা চৌধুরীর দাম হাঁকিয়েছিলেন ১৫ লাখ টাকা।

দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন চৌধুরীকে দেখতে ও দাম করতে এসেছিল সৈয়দপুর শহরের বাঁশবাড়ি এলাকার ‘ইউসুফ হৃষ্টপুষ্ট খামার ও ডেইরি ফার্মে’। ৮-৯ লাখ টাকা পর্যন্ত দামও বলেছিল কেউ কেউ। তবে সেই চৌধুরীকে গত মঙ্গলবার (২৭ জুন) বিকেলে সৈয়দপুরের পরিবহন ব্যবসায়ী জাবেদুল হকের কাছে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করলেন মিন্টু।

ইউসুফ হৃষ্টপুষ্ট খামার ও ডেইরি ফার্মের স্বত্বাধিকারী জামিল আশরাফ মিন্টু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার খামার থেকে এই কোরবানির ঈদে ১৫০টি গরু বিক্রি হয়েছে। খামারে অনেক গরু আছে, কিন্তু চৌধুরী ছিল আমার সন্তানের মতো। তাকে পরিবারের একজন হিসেবে দেখভাল করেছি। আমি নিজেই পরিচর্যা করতাম চৌধুরীকে। গোসল করানো, খাওয়ানো, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা, সব নিজের হাতে করেছি। গত তিন বছর ধরে ওকে স্নেহ দিয়েছি। দাঁত দেখাতে বললে দাঁত দেখাতো সে। কাছে এসে আদর নিতো। আমার সারা মুখে জিভ দিয়ে চেটে চেটে আদর করতো। অন্যরকম মায়ার সৃষ্টি হয় চৌধুরীর সঙ্গে। হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরুটির দাম চেয়েছিলাম ১৫ লাখ টাকা। অনেকে ৮ লাখ টাকা পর্যন্ত বলেছিল। একজন কশাই ৬০০ টাকা কেজি দরে কিনতে চেয়েছিল। তবে আমি নিয়ত করেছিলাম যে কোরবানি দেবে তার কাছে বিক্রি করবো। অবশেষে সৈয়দপুরের জাবেদুল ভাইয়ের কাছে ৫ লাখ টাকায় বিক্রি করেছি চৌধুরীকে। অনেক গরু বিক্রি করেছি কিন্ত চৌধুরীকে বিক্রি করে যে কষ্ট পেয়েছি তা বলে বুঝানোর মতো না। 

তিনি আরও বলেন, আমি জানতাম গরুটা জাবেদুল ভাই কোরবানি করবেন, কিন্তু তার ছেলে এখন গরুটা দেখে লালন-পালন করবেন বলে জানিয়েছেন। এতে আমার ভালো লাগছে। আমি দোয়া করি চৌধুরী যেন ওখানে ভালোভাবে থাকে। আমি মাঝে মাঝে চৌধুরীকে দেখতে যাব।

মিন্টু বলেন, চৌধুরীকে ২০২২ সালে পাশের বদরগঞ্জ হাট থেকে এক লাখ ৭৫ হাজার টাকায় লুৎফর রহমান চৌধুরী নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনেছিলাম। সেদিনই তার নাম চৌধুরী রাখা হয়। চৌধুরীকে আমি আমার ছেলে-মেয়ের মতো দেখেছি। কখনই তাকে ফিড বা কৃত্রিম কোনো খাবার দেওয়া হয়নি। মানুষের সব কথা বুঝতে পারে আমার চৌধুরী।

জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, নীলফামারীতে প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে গরু মোটাতাজা করা হয়। এতে এই জেলার পশুর চাহিদা সারাদেশে। এখানকার লোকজন খামার ছাড়াও প্রায় প্রতিটি বাড়িতে পারিবারিকভাবে পশু পালন করে থাকেন। তৃণমূলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ভূমিকা রাখে এই পশু পালনের মাধ্যমে।

শরিফুল ইসলাম/আরএআর