‘বাদশাকে নিয়ে মাঠে মার্ডার হয়ে গেছি। আর বড় গরু পুষবো না। ১২ লাখ টাকার গরু ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। বাজার হেবি খারাপ ছিল। গরু কেনার মানুষ নাই হাটে। কী করবো উপাই নাই। মা বলেছে বাদশাকে আর ফেরত নিয়ে আসিস না,  যে দামেই হোক দিয়ে আয়।’

বাদশাকে লালন-পালন করে কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের ডাঙ্গাপাড়ার তেলিপুকুর গ্রামের বাসিন্দা জিল্লুর রহমান। জিল্লুর রহমানের বাবা লুৎফর রহমান বাড়িতে অস্ট্রেলিয়ান ফ্রিজিয়ান জাতের বিশাল আকৃতির একটি ষাঁড় দেশীয় পদ্ধতিতে লালন-পালন করেছিলেন। যেটির নাম বাদশা।

জিল্লুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, এলাকায় কেউ দাম বলেনি বাদশার। তাই বাধ্য হয়ে বাদশাকে ১৬ হাজার টাকায় ট্রাক ভাড়া করে ঢাকার গাবতলী পশুর হাটে নিয়ে যাই। সেখানেও কেউ দাম বলতে চায় না। শেষমেষ এক ব্যক্তি সাড়ে ৬ লাখ টাকা বাদশার দাম বলেন। কিন্তু তিনি নগদ টাকা দেবেন না, চেকে টাকা দেবেন। ভুয়া চেক বা বিভিন্ন বিড়ম্বনার কথা ভবে আমরা তার কাছে গরু বিক্রি করিনি।

তিনি আরও বলেন, তারপর আর কেউ দাম বলেনি। ঢাকায় বৃষ্টি হচ্ছিল, ক্রেতা কম। বাজার ভালো না। মানুষ শুধু এসে বাদশাকে দেখে যায়, দাম বলে না। ক্রেতারা দাম জিজ্ঞাসা করলে আমরা বললে, তারা দাম না বলে চলে যায়। কেউ বা এমন দাম বলে মনে হয় গরুর দামই নেই। চাঁদরাতে ৪ লাখ ৯০ হাজার টাকায় বাদশাকে বিক্রি করেছি। সেই রাতে বাস ধরে রাজশাহীর পুঠিয়ায় এসে নামি। এরপর বাড়ি আসতে আসতে সকাল হয়ে গেছে। কোনো মতে ঈদের নামাজ আদায় করেছি।

আরও পড়ুন : প্রতিদিন ২০ কেজি করে খাবার খায় ‘বাদশা’

জিল্লুর রহমান বলেন, আমরা গরিব, দিনমজুর মানুষ। দিন আনি, দিন খাই। আবারও গরু পুষবো। তবে এবার বড় গরু না। বাদশাকে ঠিকমতো বিক্রি করতে না পেরে প্রায় ৭ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এবার ছোট আকারের গরু পুষবো। যাতে করে বিক্রি করতে সমস্য না হয়। বাদশাকে লালন-পালন করতে গিয়ে নানা সমস্যায় পড়েছিলাম। বিদ্যুৎ চলে গেলে বাতাস করতে হতো। প্রতিদিন একাধিক বার গোসল করাতে হতো। আর গ্রামে এতো বড় গরু লালন-পালনে বিভিন্ন ঝুঁকি থাকে।  

তিনি বলেন, সাদা-কালোর মিশ্রণে সুঠাম দেহের বাদশার ওজন ছিল প্রায় ৩০ মণ। এই ষাঁড়টির দাম চেয়েছিলাম ১২ লাখ টাকা। ফিতা দিয়ে মাপা হয়েছিল বাদশাকে। লম্বায় ১০ ফুট, উচ্চতায় ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি, বুকের বেড় ৮ ফুট ২ ইঞ্চি ছিল। এতে অনুমানিক ওজন ধরা হয় ১ হাজার ২২০ কেজি।

বাগমারা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আহসান হাবিব বলেন, কত টাকায় বাদশা বিক্রি হয়েছে বিষয়টি আমার জানা নেই।

রাজশাহী বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের পরিচালক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, রাজশাহী বিভাগে ২২ লাখ ১৩ হাজার ৪৬৯টি পশু কোরবানি করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কোরবানি দেওয়া হয়েছে ছাগল।

শাহিনুল আশিক/আরএআর