৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দরগা মেলা এবার বন্ধ
দ্বিতীয় পর্যায়ে সারা দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় বাগেরহাটের ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী দরগা মেলা স্থগিত করা হয়েছে। আয়োজক কর্তৃপক্ষ এ মেলা স্থগিত করেছে। সদর উপজেলার দরগা নামক স্থানে অবস্থিত খানজাহান আলী (রহ.)-এর মাজার শরিফে ৫০০ বছরের বেশি সময় ধরে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল।
এবারের চৈত্র পূর্ণিমায় বসেনি না এই মেলা। চার দিনব্যাপী এই মেলা ২৮ মার্চ শুরু হয়ে ৩১ মার্চ পর্যন্ত হওয়ার কথা ছিল। খানজাহান আলীর মাজার শরিফের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী মেলা স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী এই মেলা স্থগিত হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন মাজারভক্ত ও স্থানীয়রা।
বিজ্ঞাপন
মাজারে আগরবাতি, মোমবাতি, তাবিজ বিক্রি করেন সোলাইমান শেখ। সারা বছর অপেক্ষার পর মেলায় হাজার হাজার লোকের সমাগম ঘটে। এতে তাদের বেচাবিক্রি ভালো হয়। দুঃখ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, মেলা না হলে সারা বছরের উপার্জিত অর্থ দিয়ে সংসার চালানো আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। কীভাবে কাটবে সামনের দিনগুলো, ভেবে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।
ব্যবসায়ী শেখ মোহাম্মাদ আলী, আবু জাফর, গনি মিয়াসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, মেলা উপলক্ষে আমরা অনেক মালামাল কিনেছিলাম। এসব কিনতে গিয়ে অনেকে ঋণও করেছি। হঠাৎ মেলা স্থগিত করায় আমাদের বড় ক্ষতি হয়ে গেল। এই মালামাল তো ফেরতও দেওয়া যাবে না। আমরা এখন কী করব? স্বাস্থ্যবিধি মেনে মেলা বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা।
বিজ্ঞাপন
তারা আক্ষেপ করে বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিংসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান চলছে। অতীত থেকে চলে আসা আমাদের এই মেলা হঠাৎ বন্ধ করার কোনো যুক্তি নেই। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে মেলা স্বল্প পরিসরে হলেও চালু করার দাবি জানান তারা।
মাজারের প্রধান খাদেম ফকির শের আলী বলেন, খানজাহান আলী (রহ.)-এর মাজারে ৫০০ বছরের অধিক সময় ধরে মেলা হয়ে আসছে। প্রতিবছর চৈত্র মাসের পূর্ণিমার সময় চার দিনব্যাপী ধর্মীয় উৎসব, ওরস, মিলাদ মাহফিল ও মেলার আয়োজন হয়ে থাকে। সারা দেশ থেকে লক্ষাধিক দর্শনার্থী এই মেলা দেখতে আসেন। কিন্তু এবার করোনার কারণে মেলাটি আমরা করতে পারছি না। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যথারীতি আবারও এখানে উৎসবের আয়োজন করা হবে। করোনা থেকে মুক্তির জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করি।
ধর্মীয় সমাবেশ উপলক্ষে সারা দেশ থেকে যেসব ভক্ত মাজারে এসে থাকেন, তাদেরও আসতে নিরুৎসাহিত করেন এই খাদেম।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আ ন ম ফয়জুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ বাড়ায় চৈত্র পূর্ণিমায় মাজার-সংলগ্ন ধর্মীয় উৎসব ও মেলা হচ্ছে না। কারণ, এ সময় ধর্মপ্রাণ মানুষের উপস্থিতি অত্যধিক মাত্রায় বেড়ে যায়। মাজারের জায়গায় মানুষের সংকুলান হয় না। ফলে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করাও সম্ভব নয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আগামী বছর আবারও ধর্মীয় উৎসব ও মেলা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান তিনি।
প্রতিবছর বাংলা বর্ষপঞ্জির ২৫ অগ্রহায়ণ খান জাহান আলী মাজার প্রাঙ্গণে বার্ষিক ওরস অনুষ্ঠিত হয়। আর চৈত্র মাসের প্রথম পূর্ণিমায় এখানে মেলা অনুষ্ঠিত হয়। যা খ্রিষ্টীয় বর্ষের ২৮, ২৯, ৩০ ও ৩১ মার্চ। এখানে মাজার ও মেলা দেখতে প্রতিবছর সারা দেশ থেকে লাখ লাখ ভক্ত এসে সমবেত হন।
তানজীম আহমেদ/এনএ