পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় দোকান থেকে কেনা বালাইনাশক ওষুধ স্প্রে করায় প্রায় দেড় বিঘা জমির বেগুন ক্ষেত নষ্ট হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় গতকাল সোমবার (৩ জুলাই) রাতে ক্ষতিপূরণ দাবি করে কীটনাশক ও সার ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদীনের বিরুদ্ধে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন রবিউল ইসলাম নামে এক কৃষক। তার অভিযোগ, ওই ব্যবসায়ী তাকে ভুল কীটনাশক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।

অভিযোগে জানা যায়, তেঁতুলিয়া উপজেলা সদর ইউনিয়নের মাগুড়া গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বর্গা নিয়ে দেড় বিঘা জমিতে দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন ফসল আবাদ করে আসছিলেন। চলতি সময়ে ওই ক্ষেতে দেশীয় উন্নতজাতের বেগুনের চারা রোপণ করেছিলেন। বেগুন ক্ষেতে সাদা মাছি আক্রমণ দেখে স্থানীয় চৌরাস্তা বাজারের ‘মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স’ থেকে বালাইনাশক কিনতে যান।

কীটনাশক ও সার ব্যবসায়ী জয়নাল আবেদিন পোকা দমনে হেকেম কোম্পানির ‘তড়িৎ-৮০’ নামের একটি কীটনাশক ওষুধ দিয়ে স্প্রে করতে বলেন। সে অনুযায়ী রবিউল ইসলাম গত ২৬ জুন বিকেলে ক্ষেতে স্প্রে করার পরের দিন সকালে ক্ষেতের সব বেগুন গাছ ঝিমিয়ে পড়ে। তখন তিনি দ্রুত বাজারে এসে বিষয়টি সার ও কীটনাশক ব্যবসায়ীকে জানালে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ না করায় প্রতিকার চেয়ে থানায় অভিযোগ করেন ওই কৃষক।

ক্ষতিগ্রস্ত রবিউল ইসলাম জানান, বিভিন্ন এনজিও থেকে তিনি প্রায় ৩ লাখ টাকার ঋণ নিয়ে দেড় বিঘা জমিতে দেশীয় উন্নত জাতের বেগুন লাগিয়েছেন। ক্ষেতে ভালো ফলন ধরতে দেখে আশায় বুক বাধঁছিলেন। এ জন্য পাইকারদের কাছ থেকে বেগুন বিক্রি বাবদ অগ্রিম টাকাও নেন। ক্ষেতে পোকা দমন করতে গিয়ে ‘তড়িৎ ৮০’ নামক ওষুধ স্প্রে করার পর ক্ষেতের বেগুন গাছ ঝিমিয়ে মরে যাচ্ছে। এতে তার প্রায় ৪ লাখ টাকার মতো ক্ষতি হয়েছে। এনজিও থেকে নেওয়া ঋণ কিভাবে শোধ করবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন তিনি।

তবে ‘তড়িৎ ৮০’ কীটনাশকে বেগুন ক্ষেত নষ্ট হয়েছে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. জয়নাল আবেদিন। তিনি বলেন, আমাদের ওষুধ দিয়ে ক্ষেতে এটা হয়নি। সম্ভবত অন্য কোন কারণে ক্ষেতের বেগুন গাছ মরেছে।  

‘তড়িৎ-৮০’ কীটনাশকের আমদানিকারক হেকেম কোম্পানির পঞ্চগড় জেলার সেলস অফিসার শাহিনুর ইসলাম বলেন, সাদা মাছি দমনের জন্য এটি রেজিস্টার্ড ওষুধ নয়, কীটনাশক ব্যবসায়ী ভুল করে এই ওষুধ বিক্রি করেছেন।  

তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত রিপোর্ট পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কৃষক যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা বিবেচনা করা হবে।

এদিকে মঙ্গলবার বিকেলে কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা র্জীবন ইসলামের উপস্থিতিতে মেসার্স বিসমিল্লাহ ট্রেডার্সের ‘তড়িৎ ৮০’ কীটনাশক সাময়িক জব্দ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। তিনি জানান, আপাতত এই কীটনাশকগুলো জব্দ করা হলো। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

তেঁতুলিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু সাঈদ চৌধুরী বলেন, বেগুনক্ষেতে ব্যবহৃত বালাইনাশক ওষুধ স্প্রের পর কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এসকে দোয়েল/এএএ