পরিবারের সদস্যদের ফরমালিনমুক্ত আম খাওয়াতে শখের বসে আমবাগান করেন সাব্বির হোসেন রকি। এখন তার বাগানের প্রতিটি আমের ওজন চার কেজি। প্রতি কেজি আম তিনি ৩০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। চার কেজি ওজনের এই আমের জাতের নাম ‘ফোরকেজি’। শুধু ফোরকেজি নয়, তার আমবাগানে আরও ২০-২৫ জাতের বিদেশি আম পাওয়া যায়। 

রকির বাগানের বিদেশি আমের মধ্যে কিং চাকাপাত, চিয়াংমাই, আমেরিকান রেড পালমাল, কিউজাই, বারি-৪, বারি-১১, ফোরকেজি, গোরমতি, ব্যানানা, আল ফ্রনচো, ডকমাই, থাই কাঁচামিঠা, কাটিমন উল্লেখযোগ্য । দেশি জাতের আমের মধ্যে হাড়িভাঙ্গা, সুরমা, ফজলি, আশ্বিনী, আম্রপালি, ল্যাংড়া, নাক ফজলি, গুটি অন্যতম।

সাব্বির হোসেন রকি মুন্সীগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার দক্ষিণ বেতকা গ্রামের আব্দুল লতিফ শেখের ছেলে। পেশায় তিনি গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। নারায়ণগঞ্জে রয়েছে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। বাজারে ফরমালিনযুক্ত ফলের ছড়াছড়ির খবর জানতে পেরে পরিবারের সদস্যদের ফরমালিনমুক্ত ফল খাওয়াতে সখের বশে শুরু করেন আমসহ বিভিন্ন ফলের চাষ।

সরেজমিনে দেখা যায়, সাব্বির হোসেন রকির বাগানে গাছে গাছে ঝুলে রয়েছে বিভিন্ন প্রকারের আম। তিনি বাড়ির পাকা উঠানে গর্ত করে আম গাছ লাগিয়েছেন। এছাড়া বাড়ির চারপাশে পরিত্যক্ত জমিতে আম চাষ করেছেন। কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে সমন্বিত রোগ বালাই দমন ব্যবস্থার মাধ্যমে কীটপতঙ্গ দমন করেন তিনি। আমগাছগুলো একদিকে তার বাড়ির আঙিনার সৌন্দর্য বাড়িয়েছে, অন্যদিকে বাহারি আম বিশেষ করে লাল রঙের আমের সৌন্দর্য মানুষের চোখ জুড়াচ্ছে। তার বাগানের আম দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ। অনেকে আমবাগান দেখতে এসে কিনেও নিয়ে যাচ্ছেন। 

সাব্বির হোসেন রকি বলেন, আমি আমার বাড়ির চারদিকে পরে থাকা তিন একর জমিতে আম চাষ করেছি। ধীরে ধীরে বাগানকে আরও সম্প্রসারণ করছি। আমবাগানটি এভাবে সাজাবো যাতে বছরের সব সময়ই এখানে আম পাওয়া যায়। এ পর্যন্ত আম চাষ করতে ৯ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। আম বেশ ভালো হওয়ায় আমি আগ্রহী হয়ে দিন দিন বাগানের আয়তন বাড়াচ্ছি। এ বছর যেভাবে বাণিজ্যিকভাবে আম বিক্রি করতে শুরু করেছি তাতে মনে হচ্ছে গার্মেন্টস ব্যবসার চেয়ে এখন এই ব্যবসাতেই বেশি সময় দেওয়া দরকার। 

তিনি আরও বলেন, বাজারে ফরমালিন মেশানো ফলের খবর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে শুনে ৩ বছর আগে নিজের বাড়ির আঙিনা ও বাড়ির পাশের পরিত্যক্ত পুকুরপাড় ও ভিটায় আমসহ বিভিন্ন ফলের চাষ শুরু করি। তিন বছর আগে আম গাছ লাগানোর পরে সে বছরই ৭০০-৮০০ কেজি আম হয়, যা আমি পরিবার ও আত্মীয়দের মধ্যে বণ্টন করে দেই। গত বছর আমার বাগানে উৎপাদন হয় ১৬০০ কেজি আম। যার অর্ধেক আমি বিক্রি করেছি। বাকি অর্ধেক পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে বণ্টন করে দিয়েছি। তবে এ বছর বাণিজ্যিকভাবে আম বিক্রি শুরু করেছি। আশা করছি এবার তিন থেকে সারে তিন লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারবো।

স্থানীয় বাসিন্দা কলেজছাত্র জিহাদ বলেন, আমি মানুষের মুখে শুনে রকি ভাইয়ের আমবাগানটি দেখতে আসছি। তিনি বাড়ির আঙিনায় পরিত্যক্ত জমিতে আম চাষ করে বেশ ভালো আম উৎপাদন করেছেন। আমিও আমার বাড়িতে আম চাষ করার কথা ভাবছি।

আম কিনতে আসা শাহনাজ ও রোকসানা বলেন, আমাদের বাড়ির পাশেই রকি ভাইয়ের আম বাগান। আমরা বাজার হতে আম না কিনে রকি ভাইয়ের বাগান হতে নিয়মিত আম কিনে নিয়ে যাই। রকি ভাইয়ের আম ফরমালিনমুক্ত। একেবারে তরতাজা, যার স্বাদই আলাদা।

আমবাগানে কাজ করা শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ওই বাগানে ২০-২৫ জাতের প্রায় ৫০০টির বেশি আমগাছ রয়েছে। আমের পাশাপাশি বিদেশি ৩০-৩৫ জাতের আরও ২০০টি ফলগাছ এ বাগানে রয়েছে। বাগানে ইতোমধ্যে ৪ কেজি ওজনের আম উৎপাদন হচ্ছে। যার একটি আমের দাম ১২০০ টাকা। এ বাগানের আম ফরমালিন ও বিষমুক্ত হওয়ায় আশপাশে এ বাগানের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এই বাগানে আম কিনতে আসছে।

আম ছাড়াও রকির বাগানে রাম ভুটান, শান্তল, অ্যাপ্রিকট, অ্যাভোকাডো, জাবটিকাবা, চায়না থ্রি লিচু, লঙ্গন, আখরোট, কমলা, মালটা, আপেল, চেরি, ব্লাকবেরি, মালবেরি, স্ট্রোবেরি, তীন, জয়তুন, আলু বোখারা, পিচফল, আমড়া, কুল, জলপাই, জাম্বুরা ইত্যাদি ফলের গাছ রয়েছে।

টংগিবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জয়নুল আবদিন তালুকদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, রকি নিজ উদ্যোগে ফল বাগান শুরু করেছেন। আমরা তাকে পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। কীটনাশক ব্যবহারের পরিবর্তে সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থার মাধ্যমে বিষমুক্ত ফল উৎপাদনে উদ্বুদ্ধ করছি। এতে বিষমুক্ত ফল উৎপাদন হবে। ফল আমদানি কমিয়ে আমাদের দেশের উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধ করে কীভাবে বিষ ও ফরমালিনমুক্ত ভালো ফল পেতে পারি রকি তার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ।

ব.ম শামীম/এএএ/আরএআর