নরসিংদীর শিবপুরের উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি হারুনুর রশীদ খানকে (৭০) গুলি করে হত্যার মামলায় স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ ২০ জনের নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য আবেদন করেছে বাদীপক্ষ।

মঙ্গলবার (৫ জুলাই) চেয়ারম্যানের ছেলে ও মামলার বাদী আমিনুর রশিদ খান তাপস স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, ঢাকা রেঞ্জের  ডিআইজি, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস এর উপ-পুলিশ কমিশনার, গোয়েন্দা, সিআইডি, পিবিআইসহ বিভিন্ন দপ্তরে এই আবেদন করেন।

আবেদনে নরসিংদী-৩ (শিবপুর) আসনের সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূইয়া মোহন (৬৭), আসাদুজ্জামান (৫৩), জুনায়েদুল হক ভূঁইয়া (৫৩), ফরহাদ আলম ভূঁইয়া (৬৪), দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া (৫০), সৈয়দ মাসুদ পারভেজ (৪৮), ফারুক খান (৪৬), সিরাজ মিয়া, বাদল মিয়া (৫৫), আশরাফুল ইসলাম রিপন (৪৫), সুমন (৩৭), আমান উল্লাহ ভূঁইয়া, রাকিবুল ইসলাম ইরফান, কাউছার মিয়া (২৩), শাহাদত হোসেন (৩৯), সেলিম (৩৭), সজিব মোল্লা (৩২), আরমান পাশা (৪২), শাওন খান (২৩) ও বাবুল মিয়াকে (৫৩) এই হত্যা মামলায় আসামি করার জন্য অনুরোধ করা হয়।

আবেদনে জানানো হয়, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি সকাল সোয়া ছয়টার দিকে শিবপুর পৌর এলাকার বাজার সড়কে নিজের বাড়িতে গুলিবিদ্ধ হন উপজেলা চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা হারুনুর রশিদ খান। ঘটনার পর তাকে প্রথমে শিবপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার পিঠে বিদ্ধ দুটি গুলি বের করা হয়।

হামলার ঘটনার দুই দিন পর উপজেলা চেয়ারম্যানের ছেলে মো. আমিনুর রশীদ খান তাপস বাদী হয়ে পুটিয়া এলাকার আরিফ সরকারকে প্রধান আসামি করে ৬ জনের নাম উল্লেখসহ ও অজ্ঞাত ১০ থেকে ১২ জনকে আসামি করে শিবপুর মডেল থানায় মামলা করেন।

মামলার আসামিরা হলেন, পুটিয়া ইউনিয়নের কামারগাঁও এলাকার আরিফ সরকার (৪০), পূর্ব সৈয়দনগর এলাকার মো. মহসীন মিয়া (৪২), কামারগাঁও এলাকার ইরান মোল্লা (৩০), মুনসেফেরচর এলাকার শাকিল (৩৫), কামারগাঁও এলাকার হুমায়ুন (৩২) ও নরসিংদী শহরের ভেলানগর এলাকার গাড়ি চালক নূর মোহাম্মদ (৪৮)।

পরে চেয়ারম্যানের অবস্থার অবনতি হলে গত ১৩ এপ্রিল উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চিকিৎসা শেষে ২ মে দেশে ফিরে আসেন তিনি। এরপর হৃদরোগ, প্রসাবে ইনফেকশন ও শ্বাসকষ্ট শুরু হলে গত ৭ মে তাকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর গত ১৯ মে রাত ১০টার দিকে তার অবস্থার অবনতি হলে ওই হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়া হয়। এরপর ৩১ মে বিকেল ৫টার দিকে চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

এদিকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্রসহ ফরহাদ হোসেন (৩৪) ও আরিফুল ইসলাম আরিফকে (২৮) গ্রেপ্তার করে মতিঝিল থানার পুলিশ। পরে তারা জিজ্ঞাসা বাদে উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদ তাদের অস্ত্র সরবরাহ করেছে বলে জানায়। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে এই তিনজনের নামে অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করেছে।

আর উপজেলা চেয়ারম্যানকে গুলির ঘটনায় দায়ের করা মামলায় মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে এজাহারনামীয় দুজন। এজাহারনামীয়দের মধ্যে নূর মোহাম্মদ নামের একজন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছে। আরেক এজাহারভুক্ত আসামি শাকিল কারাগারে রয়েছে। আর এজাহারনামীয় প্রধান আসামিসহ ৪ জন দুবাইয়ে অবস্থান করছে। তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনতে ইন্টারপোলসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা চেয়েছে পুলিশ।

এসব বিষয়ে মামলার বাদী আমীনুর রশীদ খান তাপসের কাছে জানতে চাইলে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার বাবা গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর এমপি মোহন কখনও সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি না করে বরং খুনিদের শেল্টার দিয়ে আসছেন। আমার বাবা মারা যাওয়ার পর এমপির ভাই খুনি আসাদের বাড়িতে গরুর খিচুরি মাংস খেয়ে খুনিদের নিয়ে আমোদ ফূর্তি করে। এতে প্রমাণিত হয় এই জঘন্য হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে এমপি মোহনসহ তার অনুসারীদের নেপথ্য ছিল। তাই তাদের বিচার দাবিতে আমরা এই মামলায় তাদেরকে আসামি হিসেবে দেখতে চাই।
 
তখন কেন তাদের আসামি করা হলো না এমন এক প্রশ্নের জবাবে তাপস বলেন, আসামি করতে চেয়েছিলাম পুলিশের জন্য পরিনি।

এ ব্যাপারে নরসিংদী-৩ আসনের সংসদ সদস্য জহিরুল হক ভূঁইয়া মোহন, তাপসের এসব অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে বলেন, মরহুম উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন রশীদ খান ছিলেন আমার পিত্রতুল্য অভিভাবক। তার মৃত্যুতে আমিও আমার অভিভাবক হারিয়ে ব্যথিত। সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে এই হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করে তিনি অবিলম্বে প্রকৃত খুনিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েবলেন, এ হত্যাকাণ্ডটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য একটি চিহ্নিত মহল ষড়যন্ত্র করছে।

এমএএস