সিরাজগঞ্জের কামারখন্দে পা কেটে যাওয়ায় আমিনা খাতুন (৩) নামে এক শিশুকে বড়দের মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিন প্রয়োগের অভিযোগ উঠেছে এক ওষুধ বিক্রেতার বিরুদ্ধে। ডিপথেরিয়া ও টিটেনাসের ভ্যাকসিনটি প্রয়োগের পর ৮ ঘণ্টা জ্ঞান ছিল না শিশুটি।

পরে আরেক পল্লি চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিয়ে জ্ঞান ফেরে শিশুটির। সোমবার (১০ জুলাই) দুপুরে উপজেলার কাটাখালী বাজারে এ ঘটনা ঘটে। 

শিশু আমিনা উপজেলার নুরনগর গ্রামের ভ্যানচালক জাহিদুল ইসলামের মেয়ে। অপরদিকে অভিযুক্ত রফিক উপজেলার মুগবেলাই গ্রামের মৃত শফিকুলের ছেলে। এ ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিশুর ভ্যানচালক বাবা। অভিযুক্ত ওষুধ বিক্রেতার নাম রফিকুল ইসলাম রফিক।

জানা গেছে, ওষুধ বিক্রেতা রফিক স্থানীয় কাটাখালী বাজারে ওষুধ বিক্রির পাশাপাশি ডাক্তারের মতো রোগী দেখে থাকেন। রফিকের বাবা উল্লাপাড়া উপজেলার একটি সরকারি হাসপাতালে চাকরি করতেন। সেই সুবাদে রফিক সেই হাসপাতালে চিকিৎসা দেখে কাটাছেড়ার রোগী দেখেন এবং কেটে গেলে সেলাই করেন।   

শিশু আমিনার পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুরে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় বটি সঙ্গে লেগে বাম পা কেটে যায় আমিনার। এসময় তার পা থেকে প্রচুর রক্ত ঝরতে দেখে তার বাবা স্থানীয় কাটাখালী বাজারের ওষুধ বিক্রেতা রফিকের কাছে নিয়ে যান ওষুধ নিতে। ওষুধ বিক্রেতা রফিক ওই শিশুটির পায়ে ৯টি সেলাই দেওয়ার পাশাপাশি ডিপথেরিয়া ও টিটেনাস ভ্যাকসিন প্রয়োগ করেন। ভ্যাকসিনটি ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির। তবে ভ্যাকসিনটি বয়স্ক ও কমপক্ষে ১১ বছর হতে হবে এমন মানুষের উপর প্রয়োগ করা যাবে এমন সতর্কবার্তা ভায়ালের গায়ে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে। 

ভ্যাকসিনটি তার শরীরে প্রয়োগের কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশু আমিনা অচেতন হয়ে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গে আমিনার বাবা ভ্যাকসিনের ভায়াল দেখতে চাইলে দেখাতে চান না ওষুধ বিক্রেতা রফিক। পরে অনেক চেষ্টার পর শিশুটির বাবা ভায়ালটি দেখতে পেলে দেখেন, ওষুধটির মেয়াদ শেষ হয়েছে আরও ১০দিন আগে। পরে তিনি রফিককে জিজ্ঞেস করলে সে বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং শিশুটির বাবার ওপর চড়াও হন। পরে অচেতন অবস্থায় ওই শিশুটিকে উল্লাপাড়া উপজেলার পাঁচলিয়া বাজারের একজন পল্লি চিকিৎসকের কাছে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়িতে নিয়ে যান। 

শিশু আমিনার বাবা জাহিদুল ইসলাম বলেন, ওষুধ বিক্রেতা রফিকের বিরুদ্ধে এর আগেও ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। দুপুরের দিক অন্যান্য সব ওষুধের দোকান বন্ধ থাকার কারণে বাধ্য হয়ে রফিকের দোকানে গিয়েছিলাম অন্তত ক্ষত স্থানটি পরিস্কার করে আপতত ব্যান্ডেজ করে দেওয়ার জন্য। ওষুধ বিক্রেতা সেটি না করে ৯টি সেলাই দেন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ইনজেকশন পুশ করেন। এতে আমার মেয়ে আমিনা সেখানেই অচেতন হয়ে পড়ে। পরে অন্য জায়গায় নিয়ে চিকিৎসা করার ৮ ঘণ্টা পর জ্ঞান ফেরে। পরে রাতেই থানায় এ ব্যাপারে অভিযোগ দায়ের করেছি। আমার মেয়ের সঙ্গে যেটা করা হয়েছে এমনটি যেন আর কারও সঙ্গে না করা হয়। আমি এর প্রকৃত বিচার চাই।

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য অভিযুক্ত ওষুধ বিক্রেতা রফিকের মোবাইলফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

কামারখন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ ইব্রাহিম জানান, গণমাধ্যমকর্মীদের কাছ থেকে ঘটনাটি জানার পর শিশু আমিনার বাড়িতে গিয়ে তার শারীরিক খোঁজখবর নেওয়া হয়েছে। আমিনার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে ভালো। তবে তার শরীরে যে ভ্যাকসিনটি প্রয়োগ করা হয়েছে সেটি ওষুধ বিক্রেতা রফিকের প্রযোগ করার অনুমতি নেই। এঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে বিস্তারিত জানা যাবে।

কামারখন্দ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরনবী প্রধান জানান, ওষুধ বিক্রেতা রফিক বয়স্ক ও কিশোর বয়সী ব্যক্তিদের উপর প্রয়োগের মেয়াদোত্তীর্ণ ভ্যাকসিন তিন বছরের শিশু আমিনার শরীরে প্রয়োগ করেছে মর্মে শিশুর বাবা বাদী হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযুক্ত ওষুধ বিক্রেতা পলাতক আছেন। এ ব্যাপারে আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেরিনা সুলতানা বলেন, ওষুধ বিক্রেতা রফিকের রোগী দেখার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও তিনি কিভাবে শিশু আমিনার পায়ে ৯টি সেলাই ও মেয়াদোত্তীর্ণ বয়স্ক ও কিশোরদের ভ্যাকসিন শিশুকে প্রয়োগ করলেন? এ ঘটনায় ওষুধ বিক্রেতা রফিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

শুভ কুমার ঘোষ/আরকে