জনবল সংকটের কারণে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত চিকিৎসা না পেয়েই উপজেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা রোগীদের ফিরে যেতে হচ্ছে।

হাসপাতালটিতে উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ চিকিৎসা নিতে আসেন। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে হওয়ায় প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে আহতরা এখানে ভর্তি হন। কিন্তু চিকিৎসক সংকটে পরিপূর্ণ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন তারা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, উপজেলাবাসীর চিকিৎসাসেবার একমাত্র ভরসা গোয়ালন্দ হাসপাতাল। ২০১৪ সালে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩৫ থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল বাড়েনি। এই হাসপাতালে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এবং আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ ২৫টি পদের ১০টিই শূন্য রয়েছে। এছাড়া নার্স, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর পদেও রয়েছে সংকট। চিকিৎসক না থাকায় বহির্বিভাগ, শিশু বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগে রোগী দেখেন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল কর্মকর্তারা। এছাড়া নোংরা পরিবেশসহ নানা ভোগান্তির অভিযোগ রোগী ও তাদের সঙ্গে আসা স্বজনদের।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হাসপাতাল ভবনের বাইরের আশপাশে জমে আছে দীর্ঘদিনের আবর্জনা। এসব ময়লা-আবর্জনা থেকে রোগীদের রক্ষা করার যেন চেষ্টাই নেই কর্তৃপক্ষের। এমনকি আউটডোরের পাশে থাকা পাবলিক টয়লেটগুলোর দরজা ভাঙা ও নোংরা জরাজীর্ণভাবে পড়ে আছে।

হাসপাতালে আসা উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের লিলি খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আউটডোরে টিকিট কেটে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে হয় ডাক্তার দেখানোর জন্য। কোনো কোনো দিন হতাশ হয়ে বাড়ি ফিরে যাই।

চিকিৎসা নিতে আসা কিশোর সোহাগের মা ফিরোজা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৪/৫ দিন যাবত ছেলে জ্বরে ভুগছে। তাই তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এনে ভর্তি করিয়েছি। কিন্তু হাসপাতালের মেঝেসহ সবকিছুই নোংরা। টয়লেটের দুর্গন্ধে থাকা যাচ্ছে না। এছাড়া বিদ্যুৎ চলে গেলেও জেনারেটর চালানো হয় না। ফলে গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যান সব রোগীরা। তিন দিন যাবত ছেলের সঙ্গে হাসপাতালে আছি, এখন আমি নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ছি।

এদিকে, হাসপাতালের কয়েকজন নার্স ও পরিচ্ছন্নকর্মী রোগীদের সঙ্গে বাজে আচরণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। রোগীদের খোঁজখবর না নিয়ে নার্স ও পরিচ্ছন্নকর্মীদের অনেকে মোবাইল ফোন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন বলে রোগী এবং স্বজনরা অভিযোগ করেন। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে সকাল পর্যন্ত এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।

জনবল সংকটে সেবা ব্যাহত হওয়ার কথা স্বীকার করেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফারসিম তারান্নুম হক। ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, আমি সম্প্রতি এখানে যোগদান করেছি। জনবল সংকটের কারণে হাসপাতালটিতে আগে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা কষ্টকর ছিল। আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর হাসপাতালটির কার্যক্রম উন্নত করার লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে। শূন্য পদে লোক নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এসব সমস্যা সমাধান হলে রোগীরা উপকৃত হবেন বলে আশা করি।

এমজেইউ