পিরোজপুরে পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে এলাকাবাসীর প্রত্যাশা অনেক। প্রত্যাশা পূরণের প্রত্যয় নিয়ে আগামীকাল (১৭ জুলাই) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ভান্ডারিয়া পৌরসভা নির্বাচন। পরিচ্ছন্ন এলাকা গড়তে যোগ্য মেয়র ও জনপ্রতিনিধি চান ভোটাররা।

নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা। তবে অভিযোগ আর পালটা অভিযোগ নিয়ে আগামীকাল অনুষ্ঠিত হওয়া পৌরসভার প্রথম মেয়র ও জনপ্রতিনিধি নির্বাচন করবেন পৌরবাসী। তাই আগামী ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ভোট কে কেন্দ্র করে বেশ সরগরম ভান্ডারিয়ার নির্বাচনী রাজনীতি।

জানা গেছে, পিরোজপুর জেলার ভান্ডারিয়া উপজেলার ভান্ডারিয়া সদর ইউনিয়ন কে ২০১৫ সালে পৌরসভা ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় পৌর প্রশাসক দিয়েই কার্যক্রম পরিচালনা করে হচ্ছিল। গত ৩১ মে নির্বাচন কমিশন ভান্ডারিয়া পৌরসভার নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করে। তফসিলে ১৭ জুলাই ভোট গ্রহণের দিন ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরপরই ভান্ডারিয়া প্রথম মেয়র নির্বাচনকে ঘিরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনীতির মাঠ। নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচনী আচারণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ করছেন প্রার্থীরা। প্রার্থীদের শক্তির লড়াইয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে স্থানীয় সাধারণ ভোটাররা। তারা চাচ্ছেন পৌরসভার প্রথম ভোট যেন শান্তিপূর্ণ পরিবেশে দিতে পারেন।

আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীর অভিযোগ তার প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টি (জেপি) মনোনীত সাইকেল মার্কার প্রার্থীর পক্ষে স্থানীয় সংসদ সদস্য নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করে প্রচারে অংশ নিচ্ছে। এ বিষয়ে রিটার্নি অফিসারের কাছে অভিযোগ দিলেও কোন প্রতিকার পাননি।

ভান্ডারিয়ায় পৌরসভার প্রথম মেয়র পাওয়ার জন্য ২২ হাজার ৪১৫ জন ভোটার প্রথম ইভিএম ভোটিং মেশিনে তাদের ভোট প্রয়োগ করবেন। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের ৯টি ভোট কেন্দ্রে ১৭ জুলাই সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত এ ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। মেয়র পদে ৫ জন এবং পুরুষ ও মহিলা কাউন্সিলর পদে ৫১ জন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।

পৌরসভার ভোটার রুবেল হোসেন বলেন, বর্তমানে আমাদের ভান্ডারিয়াতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে নির্বাচনী প্রচারণা জমে উঠেছে। নতুন ভোটার হিসেবে আমরা প্রফুল্ল। প্রার্থীরা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তারা আমাদের পাশে থাকবেন। এছাড়া স্থানীয় যে সমস্যাগুলো আছে তারা তার সমাধান করবেন। আমাদের সমস্যাগুলোর কথা তাদের বলেছি, তারা বলছেন নির্বাচিত হলে পৌর এলাকার সমস্যার সমাধান করবেন।

আরেক ভোটার রশিদ মিয়া বলেন, জনগণের সুবিধা ও অসুবিধায় যাকে পাশে পাওয়া যাবে তাকেই ভোট দিবো। যিনি বিভিন্ন প্রয়োজনে পাশে থাকবে, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন করবে এমন লোককেই আমরা মেয়র হিসেবে দেখতে চাই।

ভোটার জামাল হায়দার বলেন, পৌরসভার যত কাজ যেমন ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, রাস্তাঘাট ও স্থানীয় সার্বিক উন্নয়ন করবে এমন প্রত্যাশাই থাকবে নতুন মেয়র ও নবনির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের প্রতি। আশা করি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আমরা ভালো জনপ্রতিনিধি পাব যার মাধ্যমে আগামী দিনে আমরা শান্তিতে থাকতে পারবো।

রফিকুল ইসলাম জানান, প্রথমবারের মতো ভান্ডারিয়াবাসী নতুন মেয়র পাবেন। তাই জনগণের মধ্যে আনন্দের অনুভূতি কাজ করছে। প্রথমবারের মতো পৌর নির্বাচনে ভোট দিতে পারব এটাই অনেক আনন্দের। কিন্তু আমাদের স্থানীয় সাংসদ ও ফরিদপুর ৪ আসনের সংসদ সদস্যের মোটর শোভাযাত্রা ও ভয়ভীতি দেখানোতে মানুষ আতঙ্কিত হয়েছে।

নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী মো. ফাইজুর রশিদ খসরু বলেন, ভান্ডারিয়ায় নির্বাচন নিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বিরাজ করছিল। তবে গত ৮ জুলাই স্থানীয় সংসদ সদস্য আনোয়ার হোসেন মঞ্জু মটর শোভাযাত্রার মাধ্যমে নগরবাসীকে আতঙ্কিত করেছেন। পরে ৯ জুলাই তার জামাতা ফরিদপুর ৪ আসনের সংসদ সদস্য মিশন চৌধুরী আবারও একই কাজ করেন। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন কে জানিয়ে তেমন কোনো ব্যবস্থা পাওয়া যায়নি তাই নির্বাচন যে সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে সঙ্কিত আমি। তারা যে কাজ করেছে তাতে প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার কথা, অন্যান্য জায়গায় অনেক ছোট কারণেও প্রার্থিতা বাতিল হয়। এখানে প্রার্থিতা বাতিল তো থাক কোনো কিছুই হচ্ছে না।

পিরোজপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, যারা অভিযোগ করছেন তাদের বিবেচনা করা উচিত আমি একটি দলের প্রধান এবং আমার দলের প্রার্থী এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সেক্ষেত্রে আমি দলের প্রধান হিসেবে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করতে পারবো না কেন? যারা অভিযোগ করেন তাদের কাছে প্রশ্ন কোথায় বক্তৃতা দিয়েছি, কোথায় কি কাজ করেছি, আর কীভাবে আচরণবিধির লঙ্ঘন হয়েছে?

পিরোজপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও ভান্ডারিয়া পৌরসভার নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. জিয়াউর রহমান খলিফা বলেন, ভান্ডারিয়ায় নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শেষ করার জন্য নির্বাচনী এলাকায় ভোটের দিন তিন স্তরের নিরাপত্তার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া ভোটারদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হবে। আশাকরি আগামীকাল ১৭ই জুলাই সকল ভোটারের উপস্থিতিতে একটি সুন্দর সুষ্ঠু নির্বাচন আমরা করতে সক্ষম হব এবং এ ব্যাপারে সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।

আবীর হাসান/এএএ