সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে শিক্ষকের থাপ্পড়ে প্রতাপ চন্দ্র দাশ নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি উপজেলার নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোনায়েম পাড়সহ চার শিক্ষককে আটক করেছে পুলিশ।

স্কুলছাত্র প্রতাপ চন্দ্র কালিগঞ্জ উপজেলার হিজলা গ্রামের দিনু চন্দ্রের ছেলে। অভিযুক্ত শিক্ষক অবকাশ খাঁ নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ব্যবসায় শাখার শিক্ষক।

রোববার (১৬ জুলাই) টিফিনের সময় স্কুলের ছাদে সহপাঠীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে টিকটক করার অপরাধে শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীসহ চারজনকে মারধর করেন। পরবর্তীতে বাড়ি যাওয়ার পরে বুকে গুরুতর ব্যথা অনুভব করলে হাসপাতালে নেওয়ার পথে প্রতাপ চন্দ্রের মৃত্যু হয়। 

পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা মৃত ওই ছাত্রের মরদেহ নিয়ে স্কুলে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করে ও অফিস কক্ষসহ বিদ্যালয়ের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। এ সময় শিক্ষকদের অফিস কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি আরও ৭টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, অবস্থার অবনতি হওয়ায় স্থানীয়দের দেওয়া সংবাদের ভিত্তিতে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ সেখানে অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের সময় পুলিশ পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ হয়। ফলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, সহপাঠীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে স্কুলের ছাদে কেক কাটে প্রতাপ চন্দ্র দাশসহ তার কয়েকজন শিক্ষার্থী। কেক কাটার পরে শিক্ষার্থীরা টিকটক ভিডিও তৈরি করছিল। বিষয়টি নজরে পড়ে সহকারী শিক্ষক অবকাশ খাঁর। তিনি সেখানে গিয়ে তাদের নিষেধ করার এক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে যান। এ সময় শিক্ষক অবকাশ খাঁ শিক্ষার্থীদের চড় কিলঘুষি মারেন। এর পরপরই বাড়ি চলে যায় প্রতাপসহ তার বন্ধুরা।

প্রতাপের কাকীমা তাপসী দাশ জানান, প্রতাপ স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে টয়লেটে যায়। সেখান থেকে সে বমি করতে করতে বের হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে পার্শ্ববর্তী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়ার সময় পথেই তার মৃত্যু হয়।

কালিগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুন রহমান জানান, বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও অফিস কক্ষের জিনিসপত্র ভাঙচুর করেছেন। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হয়েছে। মৃত স্কুল ছাত্রের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। 

তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় প্রধান শিক্ষকসহ চারজন শিক্ষককে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। শিক্ষকদের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানানো সম্ভব হবে।

এদিকে, রাত ৮টার দিকে নিহত স্কুল ছাত্রের বাড়িতে যান সাতক্ষীরা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সজিব খান সহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।

সোহাগ হোসেন/এএএ