টয়লেট, এই শব্দটি শুনলে শুরুতেই মানুষের মাথায় আসে এমন এক জায়গার কথা, যেখানে মানুষ তার মানবীয় প্রয়োজন পূরণ করেন। কিন্তু এখানেও কি মানুষ বসবাস করতে পারে! হ্যাঁ, এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায়। 

পীরগঞ্জ উপজেলার জখতা গ্রামের শরিফা বেগম নামে এক নারী কোথাও আশ্রয় না পেয়ে তার স্বামী ও দুই ছেলেসহ টয়লেটে বসবাস করছেন। পৌরসভার সরকারি পাবলিক টয়লেটে বসবাস করেছেন ৫ সদস্যের এই পরিবারটি। গত ৪ মাস যাবত পৌরসভার পাবলিক টয়লেটেই বসবাস করে আসছেন তারা।

শরিফা বেগম দীর্ঘদিন বাবা-মা ও স্বামীসহ ঢাকায় বসবাস করছিলেন। শরিফার বাবা গুরুতর অসুস্থ হলে নিজ জেলায় চলে আসেন তিনি। পরিবার নিয়ে বসবাস করতেন একটি মাটির কাঁচা ঘরে। কিন্তু গত বছর ঝড়ে তাদের কাঁচা ঘরটি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। পরে তারা কয়েকমাস প্রতিবেশীদের বাসায় থাকলেও, একসময় সেখানে থাকারও কোনো উপায় না পেয়ে সবশেষ নিরুপায় হয়ে আশ্রয় নেন টয়লেটে।

শরিফা বেগম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা ঢাকা থেকে আসার পর দেখি ঝড়ে আমাদের বাড়িঘর নষ্ট হয়ে গেছে। এরপর কিছু দিন মানুষের বাসায় ছিলাম। মানুষের বাসায় আর কতদিন থাকা যায়। তারপর কোন উপায় না পেয়ে সরকারি পাবলিক টয়লেটে আশ্রয় নেই। এখানে থাকা খুব কষ্টকর। কিন্তু এছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। টয়লেটেই রান্নাবান্না, থাকা ও গোসলসহ সব কাজ করতে হয়। অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই।

তিনি আরও বলেন, অনেক জনপ্রতিনিধি কে বলছি কিন্তু কেউ আমাদের ঘর দেইনি। উপজেলা প্রশাসন অবশ্য আমাদের একটি টিনের ঘর তৈরি করে দিচ্ছে। বাড়ি পুনর্নির্মাণের কোনো ক্ষমতাও আমাদের নেই। মানুষ বাথরুম করার জন্য টয়লেট ব্যবহার করলেও, সেটিই আজ আমাদের থাকার ঘর!

শরিফা বেগমের ৬ বছর বয়সী ছেলে লিমন বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেন আমাদের একটি ঘর করে দেয়। তাহলে আমরা অন্তত শান্তিতে থাকতে পারবো। এখানে দুর্গন্ধে থাকা যায় না।  

শরিফার প্রতিবেশী সিদ্দিকা পরভিন বলেন, আমরা দেখতেছি অনেক দিন ধরে শরিফা টয়লেটে বসবাস করে আসছে। টয়লেটে বাস করা অসম্ভব হলেও শরিফার কোনো আশ্রয় না থাকায়, তারা এখানেই বসবাস করছেন। আমরা চাই সরকার যেন শরিফাকে একটি পাকা স্থায়ী বাড়ি করে দেয়। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শাহরিয়ার নজির ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিষয়টি জানার পর পরিবারটিকে টিনশেডের ঘরের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা করেছি। ইতোমধ্যে সেই ঘরের কাজ শুরু হয়েছে।

এএএ