জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গ চালুর দাবিতে আমরণ অনশনে থাকা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার নেতারা তৃতীয় দিনে অনশন ভাঙলেন। 

আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) সকালে নিজ হাতে ফলের জুস পান করিয়ে অনশন ভাঙালেন চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান, পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান। এ সময় জেলা প্রশাসক অনশনকারীদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে আগামী দুই মাস সময় নিয়ে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গরূপে চালুর আশ্বাস দেন।

তবে অনশনে থাকা মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের নেতাকর্মীরা বলছেন, দুই মাসের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আবারও কঠোর আন্দোলনে যাবেন।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আতাউর রহমান, জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান লালন, সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম ভূইয়া, সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আসাদুল হক বিশ্বাসসহ অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তারা।

পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক বলে মনে করি। হাসপাতালটি পূর্ণাঙ্গরূপে চালু করতে মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপের বিষয় আছে। আমরা অবকাঠামো পেয়েছি। এই অবকাঠামোর মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গরূপে বাস্তবায়ন দেখতে চাই।

চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান বলেন, গত ১৮ জুলাই থেকে দাবি আদায়ে সদর হাসপাতালের মূল ফটকে অবস্থান নিয়েছেন অনশনকারীরা। তাদের দাবি যৌক্তিক। কিন্তু এই কার্যক্রম করার জন্য সরকারের যে বিধিবিধান আছে সেই বিবিধিবিধান অনুযায়ী যখন এই ভবন হস্তান্তর হয়েছে তার জন্য সকল আইনানুগভাবে প্রশাসনিক অনুমোদন ও জনবল লাগে। শুধু এই জেলায় না। এই রকম নতুন স্থাপনা দেশে অনেকগুলো নির্মিত হয়েছে। সব জেলাতে একই সঙ্গে কার্যক্রম শুরু হবে। চুয়াডাঙ্গায় প্রশাসনিক অনুমোদন পেয়েছে কিনা তত্ত্বাবধায়ক বলতে পারবেন। এরপর লাগে বাজেট বরাদ্দ। তবে আপনাদের (অনশনকারীদের) বিষয়টা আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আতাউর রহমান বলেন, আমি দুইবার চিঠি দিয়েছি ঊর্ধ্বতন সংশ্লিষ্ট বিভাগে। সেখান থেকে জানানো হয়েছিল নতুন অর্থ বছরে বিষয়টি দেখবেন। গতকালও মিনিস্ট্রিতে কল করেছি, সেখান থেকে জানানো হয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আছে।

চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক আমিনুল ইসলাম খান বলেন, আমরা পর্যালোচনা করেছি তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক। চুয়াডাঙ্গা জেলা নয়, এমনকি পার্শ্ববর্তী জেলা থেকেও আমাদের সদর হাসপাতালে এসে চিকিৎসা সেবা নেন অনেকে। এখানে ২৫০ শয্যার সব কিছুর অনুমোদন হলেও জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি। আমার কাছে প্রায়ই মানুষ আসেন আর্থিক সহায়তার জন্য, তারা জানান সদর হাসপাতাল থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বিভিন্ন মেডিকেলে রেফার্ড করা হয়েছে। এখানে চিকিৎসা হচ্ছেনা কেন জানতে চাইলে তারা বলেন, এখানে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও নার্স নেই। আসলে যারা জনস্বার্থে ও মানবতার পক্ষে এই দাবিগুলো তুলে ধরেছেন তাদের ধন্যবাদ জানায় এবং সেই সঙ্গে তাদের দাবির সঙ্গে আমি একাত্মতা ঘোষণা করছি।

তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমাদের ২৫০ শয্যার সকল কিছুর অনুমোদন হয়ে গেছে। ধাপে ধাপে সকল কার্যক্রম শুরু হবে। কত দিনের মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন করা হবে অনশনকারীদের এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, দুই মাস আমরা সময় চেয়ে নিচ্ছি আপনাদের কাছ থেকে। স্বাস্থ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে কাজ আছে। এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গেলে জনবল আমরা পেয়ে যাব।

এদিকে, গত ১৮ জুলাই সকাল থেকে সদর হাসপাতাল চত্বরে আমরণ অনশন শুরুর পর আজ বৃহস্পতিবার সকালে জেলার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে অনশন ভাঙলেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদের নেতাকর্মীরা। 

মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ কমান্ডের চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার আহ্বায়ক ও সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান গরীব রুহানী মাসুম ঢাকা পোস্টকে বলেন, জেলা প্রশাসক ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের আশ্বাসে আমরা আমরণ অনশন থেকে সরে এসেছি। নিজ হাতে ফলের জুস পান করিয়ে আমাদের অনশন ভাঙিয়েছেন। তবে তারা দুই মাস সময় নিয়েছেন। এর মধ্যে আমাদের দাবিগুলো বাস্তবায়ন না হলে আগামী ২১ সেপ্টেম্বর থেকে আবারো আন্দোলন শুরু করা হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত দাবি বাস্তবায়ন না হবে তত দিন আন্দোলন চালিয়ে যাব।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকাল থেকে হাসপাতাল চত্বরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো, চিকিৎসক ও জনবলসহ ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল পূর্ণাঙ্গভাবে চালুর দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তান সংসদ চুয়াডাঙ্গা জেলা শাখার নেতারা। এই দুই-দিন তারা পানি পর্যন্ত পান করেননি। এরমধ্যে তিনজন সদস্য অসুস্থ হলে সেখানেই চিকিৎসা নিয়ে শরীরে স্যালাইন দিয়ে অনশন চালিয়ে যান।

আফজালুল হক/এএএ