বাংলা সিনেমার জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ার পাশাপাশি দেশজুড়ে কমেছে সিনেমা হলের সংখ্যা। বর্তমানে হলবিমুখ মানুষ মোবাইল, টেলিভিশন ও কম্পিউটারসহ নানান মাধ্যমে সিনেমা দেখতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। তাই দিন দিন কমে যাচ্ছে সিনেমা হলের সংখ্যা। তেমনই ঠাকুরগাঁওয়ের এক সময়ের রমরমা বলাকা সিনেমা হল‌টি এখন প‌রিণত হ‌য়ে‌ছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। 

একটা সময় ছিল সদ্য মুক্তি পাওয়া নতুন বাংলা ছবি দেখতে মানুষ ছুটে যেত সিনেমা হলে। পরিবার-পরিজন নিয়ে দল বেঁধে বাংলা ছবি দেখা বিনোদনের অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।

ঈদ-পূজা, পালা-পার্বণে গ্রাম ও শহরের মানুষ সিনেমা হলের সামনে লাইন ধরে দাঁড়াতো পছন্দের সিনেমার টিকিট কাটতে। এমন প্রথাও চালু হয়েছিল যে, নতুন জামাই শ্বশুরবাড়ি গেলে নতুন বউ ও শ্যালক-শ্যালিকাদের নিয়ে সিনেমা দেখতে যেতেন!

সি‌নেমার সেই সোনালি দি‌নের স্মৃতিচারণ কর‌তে গি‌য়ে ঠাকুরগাঁওয়ের আবুল কালাম বলেন, সে ছোট‌বেলা থে‌কে ঈদ আসলে আমরা সবাই মিলে সিনেমা দেখতে যেতাম কর্ণফুলী, বলাকা, আলিয়া ও মৌসুমি সিনেমা হলে। বেদের মেয়ে জোসনা, খায়রুন সুন্দরী, কমলার বনবাস, কাসেম মালার প্রেম, ঝিনুক মালা, রাখাল বন্ধু, গরিবের সংসার, ভাত দে। এইসব ছবি দেখতে ছুটে যেতাম সিনেমা হলে। কিন্তু এখন আর একসঙ্গে সিনেমা দেখতে যাওয়া হয় না। 

এক সময়ের রমরমা সিনেমা হলের অনেকগুলোই এখন অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। আবার সেই সব সিনেমা হলের সামনে সিনেমার পোস্টারের বদলে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণার ব্যানার-ফেস্টুন ঝুলতেও দেখা যায়।  

ঠাকুরগাঁও সদরের বলাকা সিনেমা হলের একাংশ এখন ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিণত হয়েছে। বাকি অংশে গোডাউন হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। জেলার সবচেয়ে বড় সিনেমা হল বলাকা সিনেপ্লেক্সের সামনের দেয়ালে সিনেমার পোস্টারের বদলে ঝুলছে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ব্যানার। 

জেলার শিল্পকলা অ্যাকাডেমির সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথী বলেন, আশির দশকে মানুষ সিনেমা হলসহ সিডি-ভিসিআরে সিনেমা দেখতো। শুক্রবার এলে বিকেল তিনটার সময় কাজকাম গুছিয়ে সাদাকালো টিভিতে বিটিভির প্রচারকৃত সিনেমা দেখতে বসে পড়তো। এখন আর এইসব দৃশ্য চোখে পড়ে না। সিনেমা হলগুলো বন্ধ হলে আমাদের সংস্কৃতি ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। নতুন প্রজন্ম তাদের সংস্কৃতি ভুলে অন্য সংস্কৃতির দিকে চলে যাবে। 

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চেয়ারম্যান অরুণাংশ দত্ত টিটু বলেন, সিনেমা হল আর সাদাকালো টিভি একসময় খুব চলতো। এখন আর চোখে পড়ে না। এখন স্মার্টফোন আর ডিশ লাইনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের খবর ও বিনোদন ঘরে বসে দেখতে পায় মানুষ।

এ বিষয়ে সিনেমা হলটির প‌রিচালনার দা‌য়ি‌ত্বে থাকা মির্জা ফয়সাল আ‌মিন ঢাকা পোস্ট কে বলেন, গত ৩০ বছর আগেই সিনেমা হলটি এক ব্যক্তির কা‌ছে ভাড়া দি‌য়ে দেই। যাদের কে ভাড়া দিয়েছিলাম তারা গত কয়েক বছর ধরে হল বন্ধ রেখেছেন। এতে আমাদের এই সিনেমা হল দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। অবশেষে আমরা বাধ্য হয়ে এটা কে ডায়াগনস্টিক সেন্টার করছি।

এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মাহবুবর রহমান ঢাকা পোস্ট কে বলেন, আমরা চাই আবারও সিনেমা হল গুলো চালু হোক। চালু করতে গিয়ে যদি সিনেমা হল মালিকদের ঋণের প্রয়োজন হয় তা সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। সিনেমা হলগুলো চালু হলে সুস্থ সংস্কৃতি ফিরে আসবে।

এএএ