বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার সহধর্মিণী ডা. জোবাইদা রহমানকে কারাদণ্ড দেওয়ার প্রতিবাদে খুলনায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি। বুধবার (২ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৫টায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি এই বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, তারেক রহমান ও জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে যে রায় দেওয়া হয়েছে তা দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। এ রায়ের মাধ্যমে অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের ফরমায়েশি রায়ের আরও একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলো উল্লেখ করে খুলনা বিএনপির নেতারা বলেন, বর্তমান শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে উদ্ধারে, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের লড়াইয়ে যিনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি তারেক রহমান। তার আহ্বানে দেশের দলমত নির্বিশেষে সমস্ত মানুষ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে হঠানোর এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। ঠিক এমন সময়ে অত্যন্ত দ্রুত নজিরবিহীন গতিতে তারেক রহমান ও তার সহধর্মিনী ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে আয়কর মামলায় সাজা দেয়া অবৈধ সরকারের ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার নিল নকশার অংশ। যে মামলা চলার মতো কোনো আইনগত উপাদান নেই। কেননা, তারেক রহমান ২০০৭ সালের সম্পদ বিবরণীতে বর্ণিত সম্পদের বিপরীতে আয়কর পুরোপুরি জমা দিয়েছিলেন। পাশাপাশি ডা. জোবাইদা রহমান এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ৩৫ লাখ টাকা এফডিআর । সেই এফডিআর মামলা দায়ের করার আগেই (২০০৫-২০০৬) অর্থবছরে এর ট্যাক্স রিটার্ন দেওয়া হয়েছিল।

বক্তারা আরও বলেন, বিগত ১৪ বছর যাবৎ ফ্যাসিস্ট স্বৈরশাসনের যাঁতাকলে পিষ্ট হচ্ছে দেশবাসী। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য ছিল একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র-ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, যেখানে কথা বলার অধিকার থাকবে, থাকবে খাদ্য, বাসস্থান ও চিকিৎসার নিশ্চয়তা। থাকবে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও মূল্যবোধের চর্চা এবং প্রতিষ্ঠিত হবে বৈষম্যহীন ন্যায়বিচার-ভিত্তিক একটি আধুনিক সমাজ-ব্যবস্থা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের বিষয় আজকে স্বাধীনতার ৫০ বছরে এসেও সেই লক্ষ্য সুদূর পরাহত। রাতের ভোটে নির্বাচিত সরকার পরিকল্পিতভাবে মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোকে খর্ব করে দিয়েছে। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাঠামোগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশন ও দুদককে দলীয়করণ করা হয়েছে, রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বস্তরে দলীয় লোকজনের নিয়োগ এমনকি শেষ ভরসাস্থল বিচার বিভাগকেও দলীয়করণের মাধ্যমে একটি প্রতিবাদহীন একদলীয় স্বৈরশাসন কায়েমের নীলনকশা বাস্তবায়ন করেছে।

বক্তারা বলেন, দুদক এখন সরকারের অন্যতম আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছে। ইতিপূর্বে বিএনপি চেয়ারপারসন বাংলাদেশের তিনবারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বেগম জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। আইনগতভাবে জামিন প্রাপ্তির অধিকার থাকলেও তাকে সেই অধিকার থেকেও বঞ্চিত করা হয়েছে। হাজার হাজার গায়েবি মামলা-সহ বিভিন্ন মামলায় লাখ লাখ বিরোধী মতের লোকদের আসামি করা হয়েছে। হাজার হাজার লোককে শাস্তি দেয়া হয়েছে। তারেক রহমান ও ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে এ সাজা প্রদান প্রমাণ করে বর্তমান শাসকগোষ্ঠী তারেক রহমানের জনপ্রিয়তায় ভীত এবং জিয়া পরিবারের প্রতি প্রতিহিংসাপরায়ণ। বাংলাদেশে একদলীয় শাসন কায়েমের পথে জিয়া পরিবার এক বিরাট বাধা। সে কারণেই প্রথমে খালেদা জিয়া, মৃত জিয়াউর রহমান, পরবর্তীকালে তারেক রহমান, সর্বশেষে ডা. জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্রমূলক মামলা এবং শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপকৌশল করা হয়েছে।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খুলনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান, মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুল হাসান বাপ্পী, স ম আব্দুর রহমান, বদরুল আনাম খান, মাহবুব হাসান পিয়ারু, শামীম কবীর, আশরাফুল আলম নান্নু, শেখ সাদী, হাসানুর রমীদ মিরাজ, কে এম হুমায়ুন কবীর, হাফিজুর রহমান মনি, আবু মো. মুর্শিদ কামাল, মোল্লা ফরিদ আহমেদ, সাজ্জাদ আহসান পরাগ, শেখ ইমাম হোসেন, খায়রুল ইসলাম খান জনি, একরামুল কবীর মিল্টন, মুর্শিদুর রহমান লিটন, খন্দকার ফারুক হোসেন, রফিকুল ইসলাম বাবু, সাইফুজ্জামান খান, রাহাত আলী লাচ্চু, নুরুল আমিন বাবু, মিজানুর রহমান মিলটন, শফিকুল ইসলাম শফি, আজিজা খানম এলিজা, মাসুদ খান বাদল, মোল্লা সাইফুর রহমান, জাবেদ মল্লিক, হাবিবুর রহমান, যুবদলের নেহিমুল হাসান নেহিম, আব্দুল আজিজ সুমন, স্বেচ্ছাসেবক দলের শফিকুল ইসলাম শাহিন, মহিলা দলের অ্যাড. কানিজ ফাতেমা আমিন, আনজিরা খাতুন, শ্রমিক দলের মুজিবর রহমান, তাঁতীদলের আবু সাঈদ শেখ, মেহেদী হাসান মিন্টু, মাহমুদ আলম লোটাস, জাসাসের শহিদুল ইসলাম ও ছাত্রদলের আব্দুল মান্নান মিস্ত্রি প্রমুখ।

উল্লেখ্য, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মিথ্যা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং তার স্ত্রী জুবাইদা রহমানকে ৩ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর প্রতিবাদে খুলনায় রেলস্টেশন থেকে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ শুরু করে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বিএনপি কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে বিএনপি।

মোহাম্মদ মিলন/এএএ