তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ‘তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ’। একইসঙ্গে সাত দিনব্যাপী কৃতজ্ঞতা ও আনন্দ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে পরিষদের পক্ষ থেকে।

বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানী ও সাধারণ সম্পাদক শফিয়ার রহমান তিস্তা অববাহিকার কোটি মানুষের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়ে এক যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন।

সংবাদমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শত প্রতিকূলতার পাহাড় ডিঙিয়ে রংপুর জিলা স্কুল মাঠের লাখো মানুষের মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি দৃপ্তকণ্ঠে বলেছেন, ‘আমাদের তিস্তা মহাপরিকল্পনা সেটাও আমরা বাস্তবায়ন করবো।’ তার ঐতিহাসিক এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে সূচিত হলো শত বঞ্চনায় নিষ্পেষিত উত্তর জনপদের কোটি মানুষের স্বপ্নযাত্রা বাস্তবায়নের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম।

নেতৃবৃন্দ বলেন, তিস্তা বাঁচাও নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে খুবই স্পষ্ট ও ইতিবাচক ঘোষণা হিসেবে মূল্যায়ন করছে।

ইতোমধ্যেই প্রকল্প সংশ্লিষ্ট শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়ে গেছে। দুই মাসের মধ্যেই অর্থাৎ চলতি অর্থবছরেই তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন কাজের শুভ উদ্বোধন হবে। যা নিশ্চিত করেছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা কবির বিন আনোয়ার।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, আমাদের স্লোগান ছিল, ‘কোটি মানুষের স্বপ্ন তিস্তা মহাপরিকল্পনা, স্বপ্ন বুনেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা, বাস্তবায়নে শুধুই আস্থা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’। আমাদের দাবি ছিল পদ্মা সেতুর মতো নিজের টাকায় তিস্তা মহাপরিকল্পনার কাজ শুরু করার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে স্পষ্টভাবে ‘আমাদের তিস্তা মহাপরিকল্পনা আমরাই বাস্তবায়ন করবো’ ঘোষণায় আমাদের দাবির প্রতিফলন স্পষ্ট হয়েছে। এর মাধ্যমে মূলত প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ঘোষণার কথা বলেছেন। এই ঐতিহাসিক ঘোষণা দেওয়ায় তিস্তাপাড়ের কোটি মানুষ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ।

একইসঙ্গে নেতৃবৃন্দ বলেন, এখন আমরা চাই একনেকে অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে দ্রুত এই প্রকল্পের উদ্বোধন করে কাজ শুরু হোক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত দিয়ে তিস্তা মহাপরিকল্পনার উদ্বোধনের অপেক্ষায় এখন তিস্তাপাড়ের মানুষ।

নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিস্তার দুই তীরে সাত দিনব্যাপী কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শুক্রবার বাদ জুমা তিস্তা নদীর দুই তীর এবং জনপদের প্রতিটি মসজিদে বিশেষ  দোয়া ও মোনাজাত। শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিস্তার দুই তীরের সমস্ত উপজেলার সমস্ত লোকালয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা, আনন্দ আড্ডা, সর্বজনের আনন্দ সংহতি সভা অনুষ্ঠিত হবে।

প্রসঙ্গত, বুধবার (২ আগস্ট) রংপুর জিলা স্কুল মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে বলেন, প্রত্যেক এলাকার উন্নয়নের জন্য আমরা কাজ করেছি। তিস্তা মহাপরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করবো।

সরকারপ্রধান বলেন, রংপুরকে বিভাগ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। সেই সঙ্গে একটা বিভাগের উপযুক্ত সমস্ত প্রতিষ্ঠান আমরা গড়ে তুলেছি। আপনারা জানেন, সাত হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে রংপুর বিভাগে খাল খননের কাজ চলছে। যেগুলো হয়ে গেলে এখানে সেচের জন্য আর কষ্ট হবে না। তার সঙ্গে আমাদের তিস্তা মহাপরিকল্পনাও বাস্তবায়ন করবো।

একই মহাসমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, তিস্তার পানি পাবেন; যার নেতৃত্বে গঙ্গার পানি পেয়েছেন, তার নেতৃত্বে তিস্তার পানিও পাবেন। ধৈর্য ধরেন।

এদিকে ২০০৬ সাল থেকে তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদ তিস্তা চুক্তি, পানির ন্যায্য হিস্যা, নদী খনন, সংস্কার ও সংরক্ষণসহ বিজ্ঞানসম্মতভাবে তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি আন্দোলন করে আসছে। সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে মানববন্ধন, রোডমার্চ, সভা-সেমিনার ও মহাসমাবেশের আয়োজন করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছে।

ছয়টি দাবি বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি আহ্বান জানান সংগঠনটির নেতারা। তাদের দাবিগুলো হচ্ছে- ১. তিস্তা নদী সুরক্ষায় মহাপরিকল্পনার দ্রুত বাস্তবায়ন। অভিন্ন নদী হিসেবে ভারতের সঙ্গে ন্যায্য হিস্যার ভিত্তিতে তিস্তা চুক্তি সম্পন্ন, তিস্তা নদীতে সারা বছর পানির প্রবাহ ঠিক রাখতে জলাধার নির্মাণ। ২. তিস্তার ভাঙন, বন্যা ও খরায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষণ। ৩. ভাঙনের শিকার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসন। ৪. তিস্তা নদী সুরক্ষায় বিজ্ঞানসম্মত খনন, মহাপরিকল্পনায় তিস্তা নদী ও তিস্তা তীরবর্তী কৃষকের স্বার্থ সুরক্ষায় কৃষক সমবায় এবং কৃষিভিত্তিক শিল্প কলকারখানা গড়ে তোলা। ৫. তিস্তা নদীর শাখা-প্রশাখা ও উপ-শাখাগুলোর সঙ্গে নদীর আগেকার সংযোগ স্থাপন এবং দখল-দুষণমুক্ত করা। নৌ চলাচল পুনরায় চালু। ৬. মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং প্রস্তাবিত প্রকল্প এলাকায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তিস্তা পাড়ের মানুষদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ