রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের নাম বেতকা- রাখালগাছি। এই অঞ্চলের মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম নৌকা। প্রতিদিন উপজেলার ছোটভাকলা ইউনিয়নের অন্তারমোড় থেকে বেতকা-রাখালগাছি এলাকায় ইঞ্জিন চালিত নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে উত্তাল পদ্মা পাড়ি দেয় এই এলাকার মানুষ। শুষ্ক মৌসুমে এ নৌপথের দূরত্ব ২০ কিলোমিটার হলেও বর্ষাকালে এই নৌপথের দূরত্ব বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ৩০ কিলোমিটার। 

দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় জানায়, দেবগ্রাম ১নং ওয়ার্ড বেতকা-রাখালগাছি অঞ্চলে সহস্রাধিক পরিবারের তিন হাজারের বেশি মানুষ বসবাস করেন। ভোটার রয়েছে প্রায় এক হাজারের মতো। বেতকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়া নেই কোনো প্রতিষ্ঠান, বাজার কিংবা স্থাপনা। চার বছর আগে পাবনা থেকে এ অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়। জরুরি যে কোনো বিপদ মোকাবেলায় তাদেরকে নৌকার ওপর নির্ভর করতে হয়।

ছোটভাকলা ইউপির চরবরাট অন্তারমোড় থেকে দেবগ্রামের বেতকা-রাখালগাছি খেয়াঘাট ভগবানের খেয়াঘাট হিসেবে পরিচিত। শুষ্ক মৌসুমে নদী পাড়ি দিতে ৪০ মিনিট সময় লাগলেও বর্ষাকালে লাগে এক-দেড় ঘণ্টার মতো। বছরের অর্ধেকটা জুড়ে পদ্মা নদী ভরপুর থাকে। উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিয়ে তাদের গোয়ালন্দ বা রাজবাড়ী জেলা সদরে আসতে হয়।

প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে দেবগ্রাম ও ছোটভাকলা ইউপির অধীন খেয়া পারাপারের ইজারা দেওয়া হয়। দুই ইউনিয়নের অনুকূলে বছরে প্রায় ১৫-১৮ হাজার টাকা রাজস্ব আসে। ১৪টি ইঞ্জিন চালিত বড় ট্রলারে যাত্রী ও ছোট যানসহ প্রতিদিন প্রায় দুই-তিন হাজার যাত্রী পারাপার হয়। স্বল্প সময়ে পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী যাতায়াতে অনেকে এই ঘাট ব্যবহার করে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, উত্তাল পদ্মা পাড়ি দিতে অনেকে অন্তারমোড় নদীর পাড়ে জড়ো হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে এখানে একাধিক দোকান গড়ে উঠলেও যাত্রীদের বসার ব্যবস্থা নেই। অনেক কৃষক আছেন যাদের রাখালগাছি-বেতকায় ফসল আবাদের জন্য যাতায়াত করে থাকেন। নদীর পাড়ে ছোট্ট টিনের ছাউনির নিচে বসে আছেন ইজারাদারের লোকজন।

বেতকা এলাকার রাসেল হাওলাদার বলেন, জরুরি ব্যবসায়িক কাজে গতকাল এসেছিলাম, কাজ শেষে আজ সকালে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছি। সড়ক পথের চেয়ে রাজবাড়ী শহর থেকে মাত্র ২৫ টাকায় অন্তারমোড় ঘাটে আসলাম। এরপর এক ঘণ্টার মতো নৌকায় নদী পাড়ি দিয়ে বেতকা নামবো। সেখান থেকে অল্প সময়ের মধ্যে বাড়ি ফিরে যাব।

নৌকার মাঝি সুমন শেখ বলেন, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৭টায় বেতকা-রাখালগাছি সিএমবি সড়ক থেকে অন্তারমোড়ের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। অন্তারমোড় থেকে সকাল সাড়ে ৮টার পর বেতকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। প্রতিদিন দুটি বড় নৌকা চলাচল করে। একেক গ্রুপে ৪ থেকে ৬টি নৌকা নির্ধারণ থাকে। প্রতিদিনের যাত্রীর ভাড়া ভাগ করে নেওয়া হয়। পর্যায়ক্রমে এভাবে ১৪টি নৌকা চলাচল করে। ঝড়-বৃষ্টির সময় অনেক বেকায়দায় পড়তে হয়। মাঝে মধ্যে রাতের বেলায় সন্তান প্রসব বা জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে ছুটতে হয়।

দেবগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাফিজুল ইসলাম বলেন, অন্তারমোড়-বেতকা দিয়ে প্রতিদিন দুই-তিন হাজার মানুষ পারাপার হয়। রাখালগাছির সঙ্গে রয়েছে পাবনার ঢালারচর রেলষ্টেশন ও পাকা সড়ক। নদী পাড়ি দিয়ে রাখালগাছি পৌঁছেই পাবনা, রাজশাহী অঞ্চলের মানুষজন ট্রেনে যাতায়াত করেন।

মীর সামসুজ্জামান/এএএ