দুই টাকায় প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা প্রাইভেট পড়ান আলফাডাঙ্গা পৌর সদরের বাকাইল গ্রামের বাসিন্দা সুলতান মাহামুদ পার্থ

দীর্ঘদিন ধরে সারাদেশের স্কুল বন্ধ। অনেক শিক্ষার্থী ঠিকমতো লেখাপড়া করতে পারে না। কেউ কেউ প্রাইভেট পড়লেও অনেক দরিদ্র শিক্ষার্থী পড়তে পারে না।

তাদের কথা চিন্তা করে প্রতি মাসে দুই টাকা নিয়ে প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যা প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা পৌর সদরের বাকাইল গ্রামের বাসিন্দা সুলতান মাহামুদ পার্থ। তিনি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

পাশাপাশি তিনি টিউশনি করে টাকা জমিয়ে গড়ে তুলেছেন ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। গ্রামের প্রতি বাড়ির দোরগোড়ায় বই পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন ওই তরুণ।

সুলতান মাহামুদ পার্থ বলেন, এলাকার অনেক দরিদ্র পরিবারের সন্তানের কথা চিন্তা করে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেছি। নিজ বাড়িতে একটি ঘরে তাদের পড়াচ্ছি। নামমাত্র মাসে দুই টাকা নিচ্ছি। বর্তমানে ১৫ জন শিক্ষার্থীকে পড়াই। এর মধ্যে রয়েছে প্রথম শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থী।

আমার বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় এলাকায় এসে ভাবলাম কিছু করার। ভাবনা থেকেই এই উদ্যোগ। প্রায় দুই মাস ধরে এই কার্যক্রম শুরু করেছি। পাশাপাশি টিউশনির টাকা দিয়ে একটি ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি করেছি। আমার ইচ্ছা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বই পৌঁছে দেব। আমি চাই এলাকার তরুণ-তরুণী বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হোক।

পার্থ আরও বলেন, অনেক তরুণ-তরুণী মাদকাসক্ত হয়ে ভিন্ন রাস্তায় চলে যাচ্ছে। তারা যদি বই পড়ার প্রতি মনোনিবেশ করে তাহলে খারাপ পথে যাবে না। আমি সবার কাছে এ ব্যাপারে সার্বিক সহযোগিতা চাই।

আলফাডাঙ্গা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মনিরুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে শিক্ষার্থীদের হাতে স্মার্টফোন। ফোনে অধিকাংশ সময় ব্যয় করে এখনকার ছেলে-মেয়েরা। তারা বই পড়তে চায় না। এলাকার তরুণ মেধাবী শিক্ষার্থী পার্থ যে মহতী উদ্যোগ নিয়েছে তার প্রশংসা পাওয়ার।

‌‘নামমাত্র দুই টাকা নিয়ে প্রাইভেট পড়াচ্ছেন- এ কথা শুনলেই মন ভালো হয়ে যায়। আমি সবাইকে বলব পার্থ যে কাজটি করছে তাকে অনুসরণ করুক। যেসব তরুণ-তরুণী ইন্টারনেটে আসক্ত হয়ে বিপথগামী হয়ে পড়েছে তাদের বলব মোবাইলে সময় না দিয়ে বই পড়ো। বই পড়ার বিকল্প নেই। পার্থর জন্য শুভকামনা’ উল্লেখ করেন অধ্যক্ষ মনিরুল।

পার্থর কাছে পড়তে আসা দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র আশিক শেখের বাবা রাশেদ শেখ বলেন, আমরা গরিব মানুষ। স্কুল বন্ধ, টাকার অভাবে ছেলেকে প্রাইভেট পড়াতে পারি না। পার্থর কাছে পড়তে পাঠাই। মাত্র দুই টাকা মাসে দেই। এলাকায় পার্থর মতো সবাই এগিয়ে আসলে আমাদের ছেলে-মেয়েকে পড়াশোনা করাতে কষ্ট হতো না।

আলফাডাঙ্গা পৌরসভার মেয়র সাইফুর রহমান বলেন, সুলতান মাহামুদ পার্থ একটি ভালো কাজ করছে। ভালো কাজের ব্যাপারে তাকে পৌরসভার পক্ষ থেকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করব।

আলফাডাঙ্গা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান একেএম জাহিদুল হাসান বলেন, আমার উপজেলার মধ্যে সুলতান মাহামুদ পার্থ এমন কাজ করছে তাকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই। আমি চাই তার এই কর্মকাণ্ড দেখে অন্য ছেলে-মেয়েরা তার পাশে দাঁড়াক। আমরা এ কাজের জন্য তাকে সহায়তা করব।

এএম