নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলায় চুরির অপবাদ দিয়ে গ্রাম্য সালিশে এক কিশোরকে নির্যাতন করে মাথা ন্যাড়া করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) উপজেলার বলাইশিমুল ইউনিয়নের সরাপাড়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। 

শুক্রবার (১১ আগস্ট) ঘটনাটি জানাজানি হলে বিকেল ৩টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাবেরী জালাল ও কেন্দুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী হোসেন।

ওই কিশোরের পরিবারের দাবি, সরাপাড়া বাজারের কিছু দোকান গভীর রাত পর্যন্ত খোলা থাকে। ঘটনার দিন রাত ১২টার দিকে ওই কিশোর মোবাইলে টাকা রিচার্জ করতে বাজারে গিয়েছিল। এ সময় বাজারের একটি দোকান থেকে চুরির অপবাদ দিয়ে স্থানীয় কয়েকজন তাকে আটক করেন। পরে স্থানীয় মতিউর রহমান বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তিসহ কয়েকজন মিলে ওই কিশোরকে রাতভর শারীরিক নির্যাতন করেন। একপর্যায়ে পর দিন সকালে এ ঘটনায় সরাপাড়ায় সালিশ বসানো হয়। সালিশে স্থানীয় ইউপি সদস্য সবুজ, সাবেক ইউপি সদস্য হাদিস, আবু তাহের, কামাল ব্যাপারী, মতিউর রহমান বিশ্বাস, ওমর ফারুক, আল আমিন, সিরাজসহ শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন। সালিশে ওই কিশোরের মাথা ন্যাড়া করে দেওয়া হয় এবং তাকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, সম্প্রতি সরাপাড়া বাজারের বিভিন্ন দোকানে একাধিক চুরির ঘটনা ঘটেছে। গত সোমবার (৭ আগস্ট) রাত ১২টার দিকে ওই বাজারের শাহীন নামে এক ব্যক্তির দোকানের বেড়ার টিন ভাঙা দেখতে পান স্থানীয়রা। এ সময় সেখানে ওই কিশোরকে দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা তাকে চোর সন্দেহ করে আটক করেন। তবে ওই কিশোর চোর প্রকৃতির ছেলে নয় এবং চুরির কোনো ঘটনার সঙ্গে সে জড়িত নয়। 

নির্যাতনের শিকার কিশোরের মা বলেন, আমরা গরিব মানুষ। তাই লোকজন চুরির মিথ্যা অপবাদ দিয়ে আমার সহজ সরল ছেলেটার ওপর অত্যাচার করেছে। তারা এমন মারধরই করেছে যে- সে ভবিষ্যতে কাজ করেও মনে হয় খেতে পারবে না। 

তিনি আরও বলেন, জরিমানার ৫ হাজার টাকা না দেওয়া পর্যন্ত তারা আমার ছেলেকে ছাড়েনি। পরে ২ হাজার টাকা ধার করে এনে দেওয়ার পর তাকে ছেড়েছে। এখন হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্যটুকুও আমাদের নেই। আমি ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। 

ওই সালিশে উপস্থিত স্থানীয় ইউপি সদস্য সবুজ বলেন, ঘটনাটি শোনার পর আমি রাতে এবং সকালেও চেষ্টা করেছি সমাধান করার জন্য। কিন্তু কেউই আমার কথা শোনেনি। তাই আমি সালিশের শেষের দিকে চলে গিয়েছিলাম।

কেন্দুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী হোসেন বলেন, আমি এবং ইউএনও স্যার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিস্তারিত জানার পর পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জিয়াউর রহমান/আরএআর