লোহার খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে কূপ খনন কাজের উদ্বোধন

দিনাজপুরের চিরিরবন্দরে লোহার খনির সম্ভাব্যতা যাচাইয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কূপ খনন কাজের উদ্বোধন করা হয়েছে। শুক্রবার (২ এপ্রিল) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এবং ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. শের আলী কূপ খনন কাজের উদ্বোধন করেন। 
 
ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের দাবি, নতুন খনিতে লোহার কাঁচামাল আকরিকের পুরুত্ব অনেক বেশি। তাই লোহার সঙ্গে তামাসহ অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ পাওয়ার আশাও করছেন তারা। চিরিরবন্দর উপজেলার ১০ নম্বর পুনট্রি ইউনিয়নের কেশবপুর মৌজায় রাস্তার পাশে খনিটির অবস্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। 

সরেজমিনে চিরিরবন্দর উপজেলার কেশবপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কের পাশে উচিৎপুর বাজারের কোল ঘেঁষে চিরিরবন্দর উপজেলার রাস্তার পাশেই খনিটির অবস্থান। এরই মধ্যে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর খনির অবস্থান চিহ্নিত করে সেই স্থানটি সংরক্ষিত হিসেবে জনসাধারণের প্রবেশ নিষেধ করেছে। খনিতে খনন কাজের জন্য সেখানে বেশ কিছু লোহার পাইপ আনা হয়েছে। বসানো হয়েছে বড় বড় বেশ কয়েকটি যন্ত্র। সংরক্ষিত এলাকার ভেতরে উত্তর কোণায় একটি সামিয়ানা দিয়ে সেখানে উদ্বোধনী মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুত্তির অংশ হিসেবে সেখানে বেশ কয়েকটি কূপ খনন করা হয়েছে। সেখানে শ্রমিকদের থাকার জন্য তৈরি করা হয়েছে টিনের চালা। 

খনির পাশের রাস্তায় মুড়ি বিক্রেতা আমেজ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, লোহার খনির কথা শুনেছি, কখনো দেখিনি। হামার বাড়ি পার্বতীপুর উপজেলায়। সেখান থেকে দেকপার আইচি। মোর মুড়ি বেচাও হবে, দেখাও হবে। 

খনির স্থানের জমির মালিক গোলাম মোস্তফা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা এলাকাবাসী খুবই খুশি। এটি চালু হলে এই এলাকার বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থান হবে। খনিটি প্রাথমিক জরিপ আমার জমি থেকেই শুরু হয়েছে। এ জন্য আমি কৃতজ্ঞ। খনন এলাকায় আমার ১৪ শতক জমি রয়েছে।

স্থানীয় উচিৎপুর বাজারের মুদি ব্যবসায়ী এমামুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, লোহার খনি পাওয়া গেলে এই এলাকার বেশ কিছু মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এলাকার মানুষের উন্নতি হবে। খনিকে কেন্দ্র করে এলাকায় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এটা আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। আমরা চাই দ্রুত এটি বাস্তবায়ন হোক। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে খনির এক কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাটির প্রায় ১৩শ ফুট গভীরে লোহার কাঁচামাল আকরিকের পুরুত্বের সন্ধান পাওয়া গেছে। এটি পূর্ব দিকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিম দিকে ৬ কিলোমিটার, দক্ষিণ দিকে মহাসড়কের পাশ পর্যন্ত এবং উত্তর দিকে সাড়ে ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তার আছে। ধারণা করা হচ্ছে এটির পুরুত্ব প্রায় ৩ হাজার ফুট গভীর পর্যন্ত বিস্তার আছে।

খনির কূপ খনন কাজের দলের প্রধান হিসেবে রয়েছেন উপপরিচালক (ড্রিলিং প্রকৌশলী) মো. মাসুদ রানা। সহযোগী হিসেবে রয়েছেন উপপরিচালক (ড্রিলিং প্রকৌশলী) মো. নিহাজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (ড্রিলিং প্রকৌশলী) মো. নাজমুল হোসেন খান, সহকারী পরিচালক (ড্রিলিং প্রকৌশলী) মঞ্জুর আহমেদ এলাহী এবং সহকারী পরিচালক (ড্রিলিং প্রকৌশলী) মো. রোকনুজ্জামান। 

চিরিরবন্দর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. আয়েশা সিদ্দিকা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই এলাকায় সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর যদি লোহার খনির সন্ধান পাওয়া যায় তাহলে জমি অধিগ্রহণের জন্য উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক সহোযোগিতা থাকবে। 

চিরিরবন্দর উপজেলা চেয়ারম্যান তারিকুল ইসলাম তারিক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত মার্চ মাসের শুরুর দিক থেকে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের লোকজন এই এলাকায় খনন কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। মুজিব শতবর্ষে এমন খনির সন্ধান পাওয়ার কারণে আমরা বেশ গর্বিত। 

ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা পোস্টকে জানান, নতুন খনিতে লোহার কাঁচামাল আকরিকের পুরুত্ব অনেক বেশি। তাই লোহার সঙ্গে তামাসহ অন্যান্য মূল্যবান সম্পদ পাওয়ার আশাও করছেন তারা। প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ নিয়ে আসা হচ্ছে কেশবপুরে। 

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব এবং ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মো. শের আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখন শুধু আমাদের সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে। খনন কাজ শেষ করে আমরা বিস্তারিত বলতে পারব। এর আগে এখানে কী আছে বলা মুশকিল।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় আমরা এমন গবেষণা কাজ চালাচ্ছি। আমরা সারাদেশে এরই মধ্যে ৫টি কয়লা খনির সন্ধান পেয়েছি। যা দিয়ে আগামী ৫০ বছর আমাদের বিদ্যুৎ উৎপন্ন হবে। হয়তো এখানে ভালো কিছু থাকতে পারে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপজেলা সহকারী কমিশনার ( ভূমি) মো. এরতেজা হাসান, ১০ নম্বর পুনট্রি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূরে কামাল, চিরিরবন্দর থানার উপপরিদর্শক রইচ উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

মাহাবুর রহমান/আরএআর