ব্রাহ্মাণবাড়িয়ার আখাউড়া জিরো পয়েন্ট এলাকা থেকে সাঁতার কেটে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার মনিপুরা বাজার ঘাটে পৌঁছেছেন পঞ্চাশ বছর বয়সী বকুল সিদ্দিকী নামে এক পল্লি চিকিৎসক। তার দাবি, তিনি বিরতিহীনভাবে ৩০ ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার সাঁতার কেটেছেন।

শুক্রবার (১১ আগস্ট) বেলা ১১টায় সাঁতার শুরু করে শনিবার (১২ আগস্ট) বিকেল ৪.৪৯ মিনিটে তিনি রায়পুরার মনিপুরা বাজার ঘাটে পৌঁছান। দীর্ঘ এ নদীপথে বকুল সিদ্দিকীকে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য সঙ্গে ছিলেন স্পিডবোট, বেশ কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবী।

পল্লি চিকিৎসক বকুল সিদ্দিকী নরসিংদী সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের খোদাদিল্লা গ্রামের বাসিন্দা।
 
তার দাবি, তিনি ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা এলাকা আখাউড়া জিরো পয়েন্ট ঘাট থেকে সাঁতার শুরু করে খড়মপুর, হাওর হয়ে মেঘনা নদী দিয়ে শনিবার নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার হাইরমারা ইউনিয়নের মনিপুরা বাজার ঘাটে পৌঁছান। নদী পথে বিরতীহীন এ যাত্রায় তার পৌঁছাতে সময় লাগে প্রায় ৩০ ঘণ্টা।

সাঁতারকে কেন্দ্র করে মেঘনা নদীতে বিভিন্ন নৌকা ও স্পিডবোটে শত শত উৎসুক দর্শক উপস্থিত হন। সাঁতার কেটে বকুল সিদ্দিকী রায়পুরা প্রান্তে পৌঁছলে স্থানীয় ও সাঁতার আয়োজক কমিটির লোকজন তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান এবং সেই সঙ্গে সাঁতার আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে ১ লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়া হয়।

আয়োজক কমিটির সদস্য ফাহিম সিদ্দিকী বলেন, আখাউড়া জিরো পয়েন্ট থেকে শুরু করে বিরতিহীন সাঁতরে রেকর্ড করেন পল্লি চিকিৎসক বকুল সিদ্দিকী। সাঁতারের সময় তার সঙ্গে ভলান্টিয়ার স্পিডবোটে করে নদীপথে নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করেছে। আমরা ধারণা করছি, তিনি প্রায় ১০০ কিমি পথ অতিক্রম করেছেন।

সাঁতারু বকুল সিদ্দিকী বলেন, ছোটবেলা থেকে সাঁতার কেটে অভ্যস্ত। নিয়মিত সাঁতারে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদি অসংক্রামক ব্যাধির ঝুঁকি অনেক কমে। সাঁতারের আছে নানা স্বাস্থ্যসুফল। পল্লি চিকিৎসক হিসেবে আমি প্রতিনিয়তই রোগীদের সাঁতারের পরামর্শ দিয়ে যেতাম। তারই উপলব্ধি থেকে প্রতিদিন নিজে সাঁতারও কাটতাম। আজ প্রবল ইচ্ছে শক্তি নিয়ে নদীতে নেমে পড়ি। গিনেজ বুকে নাম লেখানোর ইচ্ছে পোষণ করেই আজকে আমার এ কার্যক্রম। পানিতে সাঁতার কাটাবস্থায় কিছু খাবার খেয়েছি এবং পানি ও জুস পান করেছি। ভবিষ্যতে সাঁতারে বিশ্বরেকর্ড করার ইচ্ছে রয়েছে আমার।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে দালালের খপ্পরে পড়ে প্রবাসে পাড়ি জমান বকুল সিদ্দিকী। ওই সময় থাইল্যান্ড থেকে সাগরপথে ১৮ ঘণ্টা সাঁতার কেটে মালয়েশিয়ায় পৌঁছান। সেই থেকে সাঁতারে তার মনোবল আরও বেড়ে যায়। পরে দেশে ফিরলে এলাকাবাসীর উৎসাহে বকুল সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

সর্বপ্রথম ২০১৯ সালে বর্ষাকালে মেঘনা নদীতে ১৭ কিলোমিটার সাঁতরে এলাকায় সবার নজরে আসেন বকুল সিদ্দিকী। পরে পর্যায়ক্রমে ২০২০ সালের ২৫ আগস্ট ৫ ঘণ্টা ১০ মিনিট, ২০২১ সালের ৩ আগস্ট মেঘনা নদীতে টানা ৬ ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার সাঁতার কেটেছেন তিনি।

তন্ময় সাহা/এসএম