সাত দিন বন্ধ রাখার পর শুক্রবার সকাল থেকে পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে

পদ্মা নদীতে পানি কম থাকায় কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় দেশের অন্যতম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষের (জিকে) দুটি পাম্প মেশিন বন্ধ রেখেছিল কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (২৬ মার্চ) সন্ধ্যা থেকে টানা ৭ দিন বন্ধ রাখা পাম্প দুটি থেকে পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে। 

শুক্রবার (২ এপ্রিল) সকাল থেকে পানি সরবরাহ শুরু করায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন পাম্প হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান।

তিনি বলেন, পদ্মায় পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভ্যান অ্যাঙ্গেল বাড়ানো হবে। এখন পদ্মা নদীতে পানি কিছুটা বাড়ছে। ৪ দশমিক ২ মিটার আরএল (রিডিউসড লেভেল) পানি পাওয়া যাচ্ছে পাম্প হাউসের ইনটেক চ্যানেলে। ভ্যান অ্যাঙ্গেল ১০ শতাংশ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে ডিসচার্জ চ্যানেলের পানি সরবরাহ ১২ দশমিক ২৫ থেকে বেড়ে ১৩ দশমিক ২৫ মিটার আরএল হয়েছে। ১৪ দশমিক ৫ মিটার আরএল হলে পূর্ণমাত্রায় সেচ সরবরাহ করা যায়। 

পাম্প থেকে পানি সরবরাহ শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন কৃষকরা। তারা বলেন, পানি সরবরাহ বন্ধ থাকলে আমাদের ফসলের খুব ক্ষতি হয়। গত এক সপ্তাহ পানি সরবরাহ বন্ধ ছিল। এতে আমাদের ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে পানি সরবরাহ শুরুর খবর পেয়ে খুশি লাগছে। 

জানা গেছে, ৪ জেলার কৃষির গুণগত মান বৃদ্ধি, স্বল্প ব্যয় এবং উৎপাদন বাড়ানো এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল। ৪ জেলার ১৩ উপজেলার ৪ লাখ ৮৮ হাজার একর জমি এ প্রকল্পের আওতাধীন ছিল। এটি ছিল প্রথম দিকে। পরে পদ্মা নদীতে পানি কমায় পাম্পের প্রধান খালের মুখে পলি ও বালুচর জমে। পানি না থাকায় একে একে ভরাট হতে থাকে জিকে প্রজেক্টের খালগুলো। পরে প্রকল্পের আওতাও কমে আসে।

সেচ প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পের আওতায় বোরো মৌসুমে এবার প্রায় ১৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। চার জেলায় ১৯৪ কিলোমিটার প্রধান খালের মাধ্যমে তা দেওয়ার কথা ছিল। 

কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শ্যামল কুমার বিশ্বাস বলেন, পাম্প চালু হওয়ার খবরে আমি আনন্দিত। পানি ছাড়া ফসল উৎপাদন করা সম্ভব না। ফসলে নিয়মিত সেচ না দিলে ফসলের ক্ষতি হয়। বর্তমানে মাঠে ধান চাষ করছেন কৃষকরা। ধানে থোড় আসার সময়, নিয়মিত পানি দিতে পারলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। তাই পানি বন্ধ থাকলে কৃষকের ক্ষতি হয়। এখন আর সমস্যা নেই, পাম্প চালু করা হয়েছে। 

২০২১ সালের ১৫ ও ১৭ জানুয়ারি সেচ সুবিধা দিতে গঙ্গা-কপোতাক্ষ (জিকে) সেচ প্রকল্পের দুটি পাম্প চালু করা হয়। কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, মাগুরা এবং ঝিনাইদহের কৃষকদের এই সুবিধা দেওয়ার কথা ছিল। এগুলো একযোগে সেকেন্ডে ১ হাজার ২০০ কিউসেক পানি সরবরাহে সক্ষম। চালুর পর থেকে পাম্প দুটি ১০ মাস নিরবচ্ছিন্নভাবে চালানোর কথা ছিল।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জিকে সেচ প্রকল্পের প্রধান পানির উৎস পদ্মা নদী। পাম্পটি চালু করতে যেমন প্রয়োজন ইনটেক চ্যানেলে পানি তেমনি প্রয়োজন সমুদ্রপৃষ্ট থেকে পানির স্তর ১৮ ফুট উঁচু হওয়া। কিন্তু পদ্মা নদীতে প্রয়োজনীয় পানির লেভেল নেই। ফারাক্কার বিরূপ প্রতিক্রিয়া এবং পানি চুক্তি করেও পানির ন্যায্য হিস্যা না পাওয়ায় পদ্মা এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।

পাম্প হাউসের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রাপ্যতা শুরু হয়েছে ২ এপ্রিল। পানি সরবরাহ বাড়লে পাম্প দুটির পানি সরবরাহ বাড়ানো হবে। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৫ হাজার কিউসেক পানি পাবে বাংলাদেশ। আগের ১১ দিন ভারত একইভাবে ৩৫ হাজার কিউসেক পানি নিয়েছে। চুক্তি মোতাবেক সেই সময় বাংলাদেশের প্রাপ্যতা ছিল মাত্র ২৩ হাজার ৫৪৪ কিউসেক।

তিনি আরও বলেন, ফারাক্কা চুক্তির কারণে এ মৌসুমে গঙ্গার পানির প্রাপ্যতা অনুযায়ী ১০ দিন বাংলাদেশ এবং ১০ দিন ভারতের। পাম্প দুটি একসঙ্গে সেকেন্ডে ১ হাজার ২০০ কিউসেক পানি সরবরাহ করতে সক্ষম। 

রাজু আহমেদ/এসপি