মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের কালাপাহাড়ে দ্বিতীয় ধাপের অভিযানে নতুন জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছে পুলিশের টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। নতুন করে সেই আস্তানা থেকে বিপুল সংখ্যক গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সন্ধ্যায় মৌলভীবাজার পুলিশ লাইনসে সংবাদ সম্মেলন করে অপারেশন হিলসাইড-এর সমাপ্তি ঘোষণা করেন সিটিটিসি প্রধান মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, সোমবার (১৪ আগস্ট) সকালে কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের আছকরাবাদ বাজারের স্থানীয় লোকজন সন্দেহজনকভাবে ১৭ জন ব্যক্তিকে আটক করেন। এই খবর পাওয়ার পরপরই আমি ঘটনাস্থলে চলে আসি। আমাদের টিম গত শনিবার (১২ আগস্ট) অভিযান চালিয়ে যাদের আটক করেছেন তারা এদের সহযোগী বলে আমরা নিশ্চিত হই। এরপর কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে থেকে আমরা তাদেরকে আমাদের হেফাজতে নিয়ে আসি। এরপর রাতভর তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী কালাপাহাড়ে তাদের আরেকটি আস্তানা আছে বলে আমরা জানতে পারি।

তিনি আরও বলেন, আজ ভোরে ওই আস্তানা সন্ধানের জন্য বের হই। দুর্গম প্রায় ২০টি পাহাড় পাড়ি দিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে সক্ষম হই। সেখানে গিয়ে বিশেষায়িত ফোর্স অনুসন্ধান চালিয়ে দুইটি ঘর থেকে ছয় কেজি বিস্ফোরক, ১৪ রাউন্ড পিস্তলের গুলি উদ্ধার করা হয়। তারা সবাই স্বীকার করেছে যে তারা নতুন উগ্র সংগঠন ইমাম মাহমুদের কাফেলার সদস্য। যেদিন তাদের আটক করা হয় তখন তাদের সঙ্গে ছিল নগদ ২ লাখ টাকা, দুটি বড় দা ও ৯৫টি ডেটোনেটর।

এদিকে সোমবার আটক হওয়া জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলার’ ১৭ সদস্যের পরিচয় প্রকাশ করেছে সিটিটিসি। এর মধ্যে রয়েছেন সিরাজগঞ্জের একটি বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক সোহেল তানজিম (৩০)। তিনি গত ২৬ জুলাই থেকে স্ত্রীসহ নিখোঁজ ছিলেন। এ ছাড়া রয়েছেন চীনে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করা দুই শিক্ষার্থী।

জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলার’ কয়েকজন সদস্য

সোহেল তানজিম ছাড়াও আটক ১৭ জনের বাকিরা হলেন- নাটোরের গাঁওপাড়ার জুয়েল মাহমুদ (২৮), কক্সবাজারের রামুর সাদমান আরেফিন ফাহিম (২১) ও মো. ইমতেজার হাসসাত নাবীব (১৯), যশোরের মোল্লাপাড়ার ফাহিম খান (১৭), পাবনার আতাইকোলার মো. মামুন ইসলাম (১৯), গাইবান্ধার চাদপাড়ার রাহাত মণ্ডল (২৪), জামালপুরের সোলাইমান মিয়া (২১), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আরিফুল ইসলাম (৩৪), বগুড়ার হাটশিপুরের মো. আশিকুল ইসলাম (২৯), পাবনার আতাইকুলার মামুন ইসলাম (২৬), ঝিনাইদহের ছয়াইলের তানভীর রানা (২৪), সাতক্ষীরার তালার জুয়েল শেখ (২৫), পাবনার আতাইকুলার রফিকুল ইসলাম (৩৮), পাবনার সাথিয়ার মো. আবির হোসেন (২০), মাদারীপুরের মেহেদী হাসান মুন্না (২৩) ও টাঙ্গাইলের কোয়েল (২৫)।

সিটিটিসি জানায়, আটক ব্যক্তিদের মধ্যে রাহাত ও মেহেদী হাসান চীনের ইয়াংজু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন। এর মধ্যে মেহেদী এক মাস আগে আর রাহাত ১০ দিন আগে দেশে ফেরেন।

আটক ১৭ জনের মধ্যে সংগঠনের মূল নেতা ইমাম মাহমুদ আছেন কি না, এমন প্রশ্নে আসাদুজ্জামান বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে অনেক সময় ও কৌশলের প্রয়োজন। তাই বিষয়টি এখনই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

উল্লেখ্য, গত শনিবার ভোরে কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নে বাইশালী নামক ওই পাহাড়ি টিলায় সিটিটিসি অভিযান চালায়। এর আগে শুক্রবার রাত ৮টা থেকে ওই বাড়ি ঘিরে রাখে সিটিটিসি ও পুলিশ। অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন হিলসাইড’। অভিযানের সময় আস্তানা থেকে প্রায় তিন কেজি বিস্ফোরক, ৫০টির মতো ডেটোনেটর, তিন লাখ ৬১ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণসামগ্রী, কমব্যাট বুট এবং কয়েক বস্তা জিহাদি বই জব্দ করা হয়।

ওমর ফারুক নাঈম/এমজেইউ