ফরিদপুরে এক নারীকে মালয়েশিয়া পাঠানোর কথা বলে ভারতের পতিতালয়ে বিক্রি করে দেওয়ায় মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে দোষী সাব্যস্ত করে নারীসহ দুইজনকে সশ্রম যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও প্রত্যেককে এক লাখ করে টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

বুধবার দুপুর ২টার দিকে ফরিদপুরের মানব পাচার অপরাধ দমন  ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ আদেশ দেন।

মামলাটি দায়ের করা হয় ২০১১ সালের ২ জুনে। মামলা দায়েরের ১২ বছর দুই মাস পর বুধবার আদালত এ আদেশ প্রদান করেন।
রায় ঘোষণার সময় ওই দুই আসামি পলাতক ছিলেন। তাদের অবর্তমানে এ রায় প্রদান করা হয়।

নারীসহ যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুইজন হলেন, ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার গোপালপুর গ্রামের শমসের খাঁ (৪৪) ও সদরপুর উপজেলার চর বিষ্ণপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ আলম নগর গ্রামের বাসিন্দা কুটি বেগম (৪৭)।

২০১১ সালের ২ জুন নগরকান্দা থানায় এ মামলাটি দায়ের করেন সদপুরের চরবিষ্ণপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ আলম নগর গ্রামের বাসিন্দা বাবুল ব্যাপারী।

এজাহারে তিনি বলেন, তার স্ত্রীকে (২৩) মালয়েশিয়া নিয়ে যাওয়ার কথা বলে শমসের খাঁ তাদের কাছ ৬০ হাজার টাকা নেন। শমসের খাঁর বড় ভাই মোকলেস খাঁ মালয়েশিয়ায় একটি কাজ করেন। তার মাধ্যমে আশপাশের বিভিন্ন এলাকার অনেক নারী পুরুষ বিদেশে গিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন এই প্রলোভন দেখান। এরপর ভিসা হয়েছে বলে ২০১১ সালের ১৩ জানুয়ারি তার স্ত্রীকে ঢাকায় নিয়ে যান। ৩০ মে তিনি জানতে পারেন তার স্ত্রীকে ভারতের বেঙ্গালুরে একটি পতিতালয়ে পতিতা বৃত্তির জন্য পাচার করে দেওয়া হয়েছে। পরে তিনি জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সহায়তায় নগরকান্দা থানায় এ মামলা করেন।

মামলাটির তদন্ত করেছেন নগরকান্দা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই)  খালিদ আহমেদ। তিনি ২০১১ সালের ১৩ অক্টোবর শমসের খাঁ ও কুটি বেগমকে ২০০২ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন।এরপর আদালতে দীর্ঘ যুক্তিতর্ক শেষে আজ রায় প্রদান করেন।

জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির মানব পাচার প্রতিরোধ সেলের দায়িত্বরত কর্মকর্তা দীপ্তি বল জানান, ২০১২ সালে দেশে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন করা হয়। এই মামলাটি প্রথমে নারী নির্যাতনের হলেও ২০১৬ সালে মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

দীপ্তি বল আরও জানান, ভারতের বেঙ্গালুরের একটি পতিতালয় থেকে ওই ব্যক্তির স্ত্রীসহ ২০ তরুণীকে ২০১১ সালে উদ্ধার করা হয়। পরে তাদের কলকাতায় লিলো হোম নামে একটি সরকারি সেফ হোমে রাখা হয়। আইনগত প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর তাদের দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এই মামলাটি জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির ফরিদপুরের সদস্য আইনজীবী শামসুন্নাহার নাইম পরিচালনা করেছেন। তিনি বলেন, ফরিদপুরের এই মানব পাচার মামলায় তিনি (দীপ্তি বল) নিজেও আদালতে সাক্ষ্য  দিয়েছেন।

এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে ফরিদপুরের মানব পাচার অপরাধ দমন  ট্রাইব্যুনালের পিপি স্বপন পাল জানান, এ রায়ে দেশে মানব পাচার প্রতিরোধে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে এবং দেশে মানব পাচারের প্রবণতা কমে আসবে। 

তিনি বলেন, আসামিরা যেদিন গ্রেপ্তার হবে সেই দিন থেকে তাদের সাজা শুরু হবে।

জহির হোসেন/এমএএস