বগুড়ায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের সিঁড়ি ভাঙতে গেলে পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর শাহিনুর শানুকে অবরুদ্ধ করে রাখেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রোববার (২০ আগস্ট) বিকেলে শহরের জামিল মাদরাসার সামনে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কাউন্সিলর শাহিনুর শানু ব্যক্তিগত স্বার্থ আদায় করতে না পেরে ইচ্ছাকৃতভাবে ভবনের সিঁড়ি ভেঙেছেন। তবে পৌরসভা বলছে, বিবদমান ভবনটিতে নিয়ম না মানায় আইন অনুযায়ী কাজ করেছেন কাউন্সিলর।

শাহিনুর শানু বগুড়া পৌরসভার ১০, ১১ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর। আর ভবনটির মালিক বগুড়া শহরের চকফরিদ এলাকার আফরোজার রহমান বকুল ও তার ছেলে শেখ জাহেদ আল নয়ন। বহুতল ভবনটির নিচতলায় মার্কেট করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৪ আগস্ট পৌরসভার মেয়রের কাছে আফরোজার রহমান বকুলের ভবন নির্মাণ বন্ধে প্রতিবেশী মো. সাজ্জাদ হোসেন একটি লিখিত অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা ৭ সেপ্টেম্বর শুনানির দিন ধার্য করে। এর বিপরীতে ১৬ আগস্ট সাজ্জাদ হোসেনকে বিবাদী করে বকুলের ছেলে জাহেদ আল নয়ন সীমানা মাপের দাবি জানান পৌরসভার কাছে। এই অভিযোগের দিন ধার্য করা হয় ২৯ আগস্ট।

তবে শুনানির আগেই আজ রোববার বিকেলে কাউন্সিলর শাহিনুর শানু পৌর পুলিশ নিয়ে বকুলের ভবনের সামনে উপস্থিত হন। ভবনটির সিঁড়ি ভেঙে দেন তিনি। এ সময় তাকে ভাঙার কারণ জানতে চাইলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। একপর্যায়ে স্থানীয়রা তাকে ঘিরে ধরে। পরে সদর থানাধীন বনানী ফাঁড়ির পুলিশ এসে কাউন্সিলরকে উদ্ধার করে।

কাউন্সিলরকে আটকে রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করে বনানী পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আশরাফ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৯৯৯-এ কল করে জানানো হয় জামিল মাদরাসার সামনে গন্ডগোল হচ্ছে। এমন সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে আসি। এসে দেখি পৌরসভার লোকজন সিঁড়ি ভাঙছে। কাউন্সিলর শাহিনুর শানুকে স্থানীয়রা ঘিরে রেখেছিল। পরে কাউন্সিলরের সঙ্গে কথা বলে আমরা তাকে লোকজন নিয়ে চলে যেতে বলি।

নির্মাণাধীন ভবনের মালিক আফরোজার রহমান বকুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের সীমানা নিয়ে একটা সমস্যা আছে। এজন্য পৌরসভা থেকে ২৯ তারিখে ডাকা হয়েছে। আর ওদের অভিযোগের ভিত্তিতে ডাকা হয়েছে আগামী মাসের ৭ তারিখ। যে অংশে বিরোধ, আমরা সেখানে কোনো কাজ করিনি। কিন্তু কাউন্সিলর এর কোনো কিছুর ধার না ধরে এসেই আমার দোকানঘরগুলোয় ওঠার সিঁড়ি ভেঙে দিয়েছেন। তিনি কোনো আদেশের কপিও দেখাতে পারেননি।

ভবনের দায়িত্বে থাকা সামসাদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, কাউন্সিলর শানু বিভিন্ন সময় ভবন নির্মাণের কারণে আমাদের কাছে টাকা নিয়েছেন। পরবর্তীতে তিনি দুই লাখ টাকা দাবি করেন। সেই টাকা দিতে না পারায় আজকে সিঁড়ি ভেঙে দেন। ওই সময় আশপাশের লোকজন তাকে আটকে রেখে ভাঙার আদেশপত্র দেখতে চান। কিন্তু তিনি দেখাতে
পারেননি। আমরা এ ঘটনায় ফৌজদারি আইনে অভিযোগ দেব।

অভিযোগকারী প্রতিবেশী সাজ্জাদ হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার সীমানা নিয়ে সমস্যার ব্যাপারে একটা অভিযোগ দিয়েছিলাম। এছাড়া আমার বাড়ির সীমানা ঘেঁষে ড্রেন ছিল ওই ভবন নির্মাণের কারণে সেটি বন্ধ হয়ে যায়।

তবে এ ঘটনায় কাউন্সিলর শাহিনুর শানু টাকা নেওয়ার বিষয়টি পুরোপুরি অস্বীকার করেন। সিঁড়ি ভাঙার বিষয়ে তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই ভবনের কাজ বন্ধ রাখতে মেয়র নির্দেশ দিয়েছেন। তারপরও তারা কাজ চালাচ্ছিলেন। ড্রেন বন্ধ করে সিঁড়ি নির্মাণ করায় তা ভাঙা হয়েছে।

ভাঙার অনুমতিপত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর শাহিনুর শানু বলেন, বিষয়টি মেয়র জানেন। মেয়রের কথাই আমার জন্য লিখিত আদেশের সমান।

এ বিষয়ে বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাড়ি নির্মাণের ক্ষেত্রে রাস্তার সামনে পাঁচ ফুট জায়গা ফাঁকা রাখতে হয়। কিন্তু ওই ভবনে সেটি করা হয়নি। এছাড়া তাদের কাজ স্থগিত রাখতে বলা হয়েছিল, তারপরও কাজ চলমান ছিল। এজন্য পৌর আইন অনুযায়ী সিঁড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

এমজেইউ