লকডাউন ঘোষণার পর ক্রেতাশূন্য মার্কেট

আর কদিন পরেই বাংলা নতুন বছর। পার্বত্য জনপদের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীরা বাংলা নতুন বছর ‘বৈসাবি’ খুবই আড়ম্বরতার সঙ্গে উদযাপন করে থাকেন। বৈসাবি উৎসবকে সামনে রেখে প্রস্তুত হয়ে উঠছিল রাঙামাটির বিভিন্ন বিপণনকেন্দ্র,  শো-রুম। কিন্তু হঠাৎ লকডাউনের ঘোষণায় আকাশ ভেঙে পড়েছে রাঙামাটির ক্ষুদ্র এবং মাঝারি ব্যবসায়ীদের মাথায়।

রাঙামাটি বনরুপা সোনালী শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী ষড়ঋতুর সত্ত্বাধিকারী শংকর হোড় বলেন, বৈসুক-বিজু-সাংগ্রাই উৎসবকে সামনে রেখে কয়েক লাখ টাকার পণ্য তুলেছিলাম দোকানে। কিন্তু হঠাৎ এই লকডাউনের ঘোষণায় সব এলোমেলো হয়ে গেল। গত বছরও বৈসাবির সময় লকডাউন থাকাতে কোনো ব্যবসা হয়নি, সেই ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশায় এ বছর প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। কিন্তু এই বছরও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলো। এতে আমরা চরম ব্যবসায়িক ক্ষতির সম্মুখীন হবো।

গতবছরে বড় দুটি উৎসব বিজু এবং ইদের সময় লকডাউন থাকাতে আমরা কোনো বেচাবিক্রিই করতে পারিনি এবং সেই ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারিনি। নতুন করে আবার লকডাউন আমাদের দেউলিয়া করে দিবে।

বেলাল হোসাইন, রিজার্ভ বাজারের পোশাক ব্যবসায়ী

রাঙামাটি ইলেকট্রনিক্সের স্বত্বাধিকারী বলেন, বৈসাবি উপলক্ষে অনেকেই নতুন টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স পণ্য নিয়ে থাকেন। গত বছরের ক্ষতি কাটিয়ে এবার ভালো একটা ব্যবসা হবে সেই আশা করেই অনেক ব্র্যান্ডের পণ্য এনেছিলাম শো-রুমে। কিন্তু হঠাৎ এই লকডাউনের ঘোষণা আমাদের চরম ব্যবসায়িক ক্ষতির সামনে দাঁড় করিয়ে দিল। এবার কর্মচারীদের বেতনসহ বৈসাবি বোনাস দিতে হিমশিম খেতে হবে আমাদের।

লকডাউনের ঘোষণার প্রভাব পড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসহ মুদি দোকানগুলোতেও। লকডাউনের ঘোষণা আসার পর থেকেই ফাঁকা হতে শুরু করে শহরের বনরুপা, রিজার্ভ বাজার ও তবলছড়ি বাজার। 

সরেজমিনে দেখা যায়, লকডাউনের ঘোষণা ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে লোকজনের উপস্থিতি দ্রুত কমতে থাকে। বৈসাবি উপলক্ষে যারা বাজার করতে এসেছিলেন তারাও বাজার না করেই ঘরে ফিরে গেছেন।

বাজার না করেই ফিরে যাচ্ছেন কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে শুভলংয়ের বাসিন্দা প্রমিত চাকমা বলেন, বিজুর কেনাকাটা করার জন্য গ্রাম থেকে রাঙামাটি এসেছিলাম। কিন্তু এখানে এসে শুনতে পেলাম পরশু থেকে লকডাউন। লকডাউনে তো বিজু উদযাপন করতে পারব না। তাই কিছু না কিনেই গ্রামে ফিরে যাচ্ছি।

বনরুপা বাজারের রাম ভান্ডারের স্বত্বাধিকারী বলেন, হঠাৎ সরকারের এমন সিদ্ধান্তে আমরা ব্যবসায়ীরা সত্যিই হতাশ। বৈসাবি উপলক্ষে আমাদের যে পরিমাণ বিক্রি হওয়ার আশা ছিল তা এখন শূন্যের কোটায় নেমে আসবে। সরকারকে লকডাউনের বিকল্প কিছু চিন্তা করারও আহ্বান জানান তিনি।

এসপি