গোল চিহ্নিত জায়গায় দাঁড়িয়ে টিকেট কাটার কথা থাকলেও যাত্রীরা দাঁড়িয়ে আছেন গাদাগাদি করে

করোনার ঝুঁকিপূর্ণ ৩১ জেলার মধ্যে রাজশাহীর অবস্থান ১৭। বিভাগে করোনার হটস্পট বগুড়া রয়েছে ১৯ নম্বরে। আর পার্শ্ববর্তী দুই জেলা নওগাঁ ২৬ এবং নাটোর রয়েছে ২৯ এ। ঝুঁকির বাইরে নেই সীমান্তঘেঁষা জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জও।

বাসে-ট্রেনে চেপে নানা প্রয়োজনে প্রতিদিন এই ৪ জেলার হাজারো মানুষ রাজশাহীতে আসা-যাওয়া করেন। কিন্তু কিছুতেই যাত্রীদের স্বাস্থ্যবিধি মানাতে পারছে না পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে বাস্তব চিত্র। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট কাটছেন লোকজন। একজন দাঁড়িয়েছেন অন্যজনের গা ঘেঁষে। কেউ কেউ মাস্ক পরিধান করলেও অধিকাংশই উদাসীন নিজেদের সুরক্ষায়। দায়িত্বরত নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরও গা ছাড়া ভাব।

সরেজমিনে স্টেশনের টিকেট কাউন্টারের সামনে গিয়ে কোনো পুলিশ সদস্যকে পাওয়া যায়নি। এক নম্বর টিকেট কাউন্টারের নামনে লাঠি হাতে দাঁড়িয়েছিলেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর হাবিলদার আশরাফুল ইসলাম। শিফট ইনচার্জের দায়িত্ব রয়েছে তার কাঁধেই।

আশরাফুলের সঙ্গে ছিলেন আরেকজন আনসার সদস্য। স্টেশনের প্রবেশ পথের পাশে পাতা টেবিলে বসে মুঠোফোনে ব্যস্ত ছিলেন আরও দুই রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য।

আশরাফুল ইসলাম জানান, গত ১ এপ্রিল থেকে রেলওয়েতে যাত্রীর চাপ বেড়েছে। কেবল দুই ইদে যাত্রীদের এমন চাপ থাকে। তারা যাত্রীদের নিরাপদ দূরত্ব মেনে দাঁড়ানোর কথা বলছেন। কিন্তু কেউ তাদের কথা আমলে নিচ্ছেন না। তারাও বল প্রয়োগ করতে পারছেন না। 

বিকেল ৩টায় চিলাহাটিগামী আন্তঃনগর বরেন্দ্র এক্সপ্রেস এবং রহনপুরগামী কমিউটার ট্রেন ছেড়ে যায়। কথা ছিল অর্ধেক আসন ফাঁকা রেখে চলবে ট্রেন। কিন্তু ৬৬৮ আসনের দ্বিগুণ যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যায় রহনপুরগামী কমিউটার। ৬৬৪ আসনের প্রায় দেড়গুণ যাত্রী চেপেছেন বরেন্দ্র এক্সপ্রেসে। লকডাউনের আভাস পেয়ে রাজশাহী ছেড়েছে বিপুল সংখ্যক মানুষজন।

কেবল ট্রেনের ভেতরই নয়, স্টেশনের প্লাটেফর্মেও স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না যাত্রীরা। পুলিশ সদস্যরাও এদের সঙ্গে একাকার। রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা কাজে আসছে না। কেবল মাইকিং করে দায় সারছে স্টেশন কর্তৃপক্ষ। 

তবে যাত্রীদের কিছুতেই স্বাস্থ্যবিধি মানানো যাচ্ছে না বলে স্বীকার করেছেন রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবদুল করিম। তিনি বলেন, প্রতিদিন ১৩ জোড়া আন্তঃনগর, ৩ জোড়া মেইল এবং ২ জোড়া শার্টল চলাচল করে রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন থেকে। হাজারো যাত্রী উঠানামা করেন এই স্টেশনে। 

গত ৩০ মার্চ থেকে অস্বাভাবিক চাপ বেড়েছে রেলে। বিশেষ করে স্টেশনের বুকিং কাউন্টার, মেইন গেটে আগমন ও বর্হিগমনে সামাজিক দূরত্ব মানানো যাচ্ছে না যাত্রীদের। বার বার পিএ সিস্টেম ও হ্যান্ড মাইকে ঘোষণা দিয়েও কাজ হচ্ছে না। কার্যকর ব্যবস্থা নিতে তিনি ৩০ মার্চ রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী এবং রেলওয়ে পুলিশকে চিঠি দিয়েছেন। কিন্তু এখনো কাজের কাজ হয়নি।

ব্যবস্থাপক আরও বলেন, আমরা যাত্রীদের দাঁড়ানোর জন্য চিহ্ন দিয়ে দিয়েছি। দৃশ্যমান নোটিশ টাঙানো হয়েছে। মাইকিং চলছে। পুলিশ ও আরএনবি সদস্যরা সব সময় কাজ করছেন। কিন্তু নিজেদের মধ্যে সচেতনতা না থাকায় যাত্রীদের কিছুতেই স্বাস্থ্যবিধি মানানো যাচ্ছে না।

ট্রেনে অতিরিক্ত যাত্রী বহনের বিষয়ে জানতে চাইলে স্টেশন ব্যবস্থাপক বলেন, আমাদের লোকবল সংকট রয়েছে। তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আরএনবিকে কাজ করতে হবে। আমরা চিঠি দিয়ে তাদেরও জানিয়েছি।

চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাজশাহী রেলওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিব উল ইসলাম। তিনি বলেন, চিঠি পাওয়ার পর থেকেই আমরা স্টেশন এলাকায় তৎপরতা বাড়িয়েছি। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা সরে যাওয়ার পর পরিস্থিতি আগের মতোই হয়ে যাচ্ছে। জনগণের অসচেতনতায় এই উদ্যোগ ভেস্তে যাচ্ছে।

ফেরদৌস সিদ্দিকী/এসপি