রংপুরের তারাগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডে আট পরিবারের ২২টি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের বই-খাতা, দলিল, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাট, ধান-চাল, নগদ টাকাসহ প্রায় অর্ধকোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) রাত ৯টার দিকে উপজেলার কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর মন্ডলপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে। 

জনপ্রতিনিধি ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, কুর্শা ইউনিয়নের রহিমাপুর মন্ডলপাড়া গ্রামের পরিবারগুলো অধিকাংশই দিনমজুর ও কৃষক। বৃহস্পতিবার রাতে ওই গ্রামের ভ্যানচালক আতাউর রহমানের বাড়িতে রাত ৯টার দিকে বৈদ্যুতিক শর্ট সাকির্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এ আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে পাশের রাহেনা বেগমের দুটি, মহুয়া বেগমের দুটি, মনছুর আলীর তিনটি, দুলু মিয়ার চারটি, লুৎফর রহমানের তিনটি, সাইদুল রহমানের একটি, মোনা মিয়ার তিনটি ও আতাউর রহমানের দুটিসহ মোট ৮টি পরিবারের ২২টি ঘর, নগদ টাকা, চাল-ডাল, ধান, পাট, দলিল, বই, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও আসবাবপত্রসহ অর্ধকোটি টাকার মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়। 

শুক্রবার (২৫ আগস্ট) বিকেলে সরেজমিনে মন্ডলপাড়া গিয়ে দেখা যায়, পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ির কাঠ, কয়লা চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। ঘর পোড়ার খবরে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন স্বজনেরা। পোড়া ভিটায় কেউ কেউ করছেন বিলাপ। পুরো এলাকায় থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দিনমজুর মনছুর আলীর তিনটি ঘরের সঙ্গে পোষা হাঁস-মুরগিও বাদ যায়নি ছাই হওয়া থেকে।

বিলাপ করতে করতে মনছুর আলী বলেন, ‘চোর চুরি করলে কিছু না কিছু বাঁচে। কিন্তু আগুন ধরলে তো সুতাও থাকে না। এই আগুন মোক ফকির বানে দিলে। মোর আর ঘর করির সামর্থ্য নাই। আকাশের নিচোত এ্যালা দিন পার কইরার নাগবে।’ 

দুলু মিয়ার ঘর পুড়েছে চারটি সঙ্গে নগদ এক লাখ ২০ হাজার টাকাও। দুলু মিয়া বুক চাপড়ে বলেন, ‘বাবা, কি থাকি কি হয়্যা গেল। বাজার থাকি আসি ভাত কোনা খাবার বসছু দ্যাখো ঘরের চালোত আগুন। আগুন দ্যাখি ভাত ছাড়ি জান নিয়া দৌড়াছু। এনজিও ঋণের টাকা ও ভুই বন্ধকি টাকা সউগ পুড়ি গেল। মুই এ্যালা কি নিয়া বাঁচিম, কিস্তি কি দিয়া দেইম।’

মহুয়া বেগমের চোখের পানি যেন কিছুতেই থামছিল না। শাড়ির আঁচলে মুখ মুছে বলেন, ‘মুই কেমন করি ঘুরি দাঁড়াইম, কোনঠে মাথা গোঁজাইম, আগুন যে মোর কিছুই থুইল না।’ 

কুর্শা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য তুহিনুর ইসলাম বলেন, রহিমাপুর মন্ডলপাড়া ক্ষতিগ্রস্ত ৮টি পরিবারের সবাই দিন এনে দিন খায়। আগুন তাদের নিঃস্ব করে দিল। 

জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসেল মিয়া বলেন, রহিমাপুর মন্ডলপাড়া গ্রামে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর খোঁজ নিয়েছি। প্রত্যেক পরিবারকে নগদ তিন হাজার টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল, দুই কেজি ডাল, এক লিটার সয়াবিন তেল, তিন কেজি আলু, এক কেজি লবণ ও এক কেজি পেঁয়াজ দেওয়া হয়েছে। আরও সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন করা হয়েছে। 

তারাগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার এস এম শরিফুজ্জামান বলেন, আগুন লাগার খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের দল সেখানে ছুটে যায়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত। আটটি পরিবারের ২২টি ঘরসহ মালামাল পুড়ে গেছে। 

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর