চলছে না লঞ্চ, ভোগান্তির শেষ নেই বাস যাত্রীদের
ফাঁকা টার্মিনাল, যাত্রীকে ঘিরে দালালদের ভীড়
বরগুনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রয়েছে লঞ্চ চলাচল। এতে সড়কপথে গন্তব্যে ছুটছেন যাত্রীরা। তবে বাস টার্মিনালে কাউন্টার থাকলেও সেখানে পাওয়া যাচ্ছে না টিকেট। ফলে টিকেট কাটতে এসে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে তাদের।
বরগুনার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে নির্মিত টিকেট কাউন্টার থাকলেও গত দু বছরে ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। বাস টার্মিনালে কাউন্টারের জন্য আলাদা জায়গা থাকলোও পৌর শহরের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বরগুনা টু ঢাকাগামী পরিবহনের কাউন্টারগুলো। এতে প্রতিদিন চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বরগুনা পৌর বাস টার্মিনালে রয়েছে অর্ধশতাধিক বাস পার্কিংয়ের সুবিধা। পাশাপাশি ১৬টি টিকিট কাউন্টার, দুটি ওয়েটিং, একটি অফিস কক্ষ, ছয়টি টয়লেট, একটি লেয়ার রুম, একটি কমার্শিয়াল রেস্টুরেন্ট এবং নামাজ পড়ার রুমসহ আধুনিক সব সুযোগ সুবিধার পাশাপাশি চারদিকে রয়েছে নানা প্রজাতির গাছের সমারোহ ও দৃষ্টি নন্দন ফুটপাত। তবে এই দৃষ্টিনন্দন বাস টার্মিনাল ব্যবহার না করায় এখানে এসে সবাইকে হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। যাত্রীরা স্ট্যান্ডে আসার সঙ্গে সঙ্গে টার্মিনালের বাইরে একদল মানুষ দৌড়ে চতুর্দিক থেকে ঘিরে টিকিট বিক্রির জন্য টানাহ্যাঁচড়া শুরু করে দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে সেখান থেকেই টিকিট কিনতে হয় যাত্রীদের। তারা কাউন্টার পর্যন্ত আর পৌঁছাতেই পারেন না।
বরগুনা পৌরসভা সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের জুন মাসে বরগুনা সদর উপজেলার খেজুরতলা এলাকায় ৪ একর জমি নিয়ে বাস টার্মিনালটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। বাংলাদেশ সরকার ও এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) যৌথ অর্থায়নে টার্মিনালটি নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয় ১৪ কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার ৩৪৩ টাকা। নির্মাণকাজ শেষে পৌরসভা কর্তৃপক্ষের কাছে টার্মিনালটি হস্তান্তর করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নবনির্মিত এই বাস টার্মিনালটি ছাড়া বরগুনায় আর কোনো বাস টার্মিনাল নেই।
বিজ্ঞাপন
এ বিষয়ে বাস মালিক সমিতির অন্য নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা জানান, বাস কোম্পানি যে কয়টি আছে তাতে এক একটি কোম্পানি কে এক একটি কাউন্টার দিলে কোনো সমস্যা হয় না। হানিফ, ইসলাম, মেঘনা, দিগন্ত, ইমরান, সোনারতরী, মোল্লা, গিনভিউ, ইউরো কোস, শ্যামলী, যমুনা, শাবনী, আবদুল্লাহ, রোমারসহ মোট ১৪টি গাড়ির কোম্পানি রয়েছে। এছাড়া যে গাড়ি আছে তারা এক দিন এলে তিন দিন আসে না, তাদের কাউন্টার দরকার হয় না।
বরগুনা ঢাকাগামী যাত্রীদের রয়েছে নানা রকম অভিযোগ। বিভিন্ন সময় হয়রানির শিকার হয়ে কোথাও গিয়ে মেলেনি প্রতিকার। যাত্রী ইমরান হোসেন বলেন, লঞ্চ চলাচল বন্ধ এভাবে যদি সিন্ডিকেট করে বাস চলাচল বন্ধ হয় আমাদের কি উপায় হবে। নেই কোনো কাউন্টার এবং টিকিটের মূল্য নেওয়া হচ্ছে বেশি।
আরেক যাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, নতুন বাস স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখি টিকিট কাউন্টারে তালা। লুঙ্গি পড়া কিছু লোক এসে বলে কই যাবেন টিকিট নেন। অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে হঠাৎ ঢাকায় রওনা দিতে গিয়ে টিকিটের জন্য চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে আমার!
জেলা যাত্রী অধিকার সংরক্ষণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম টিটু মোল্লা বলেন, বরগুনার স্থানীয় বাস মালিক সমিতির সিন্ডিকেটের কারণে উদ্বোধনের দুই বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত নতুন বাসস্ট্যান্ডের যাত্রীদের টিকেট কাউন্টার চালু করা সম্ভব হয়নি। এজন্য আমি বাস মালিক সমিতি এবং পৌরসভাকেও দায়ী করব। পৌরসভা যথাযথ পদক্ষেপ নিলে এতদিনে চালু করা যেতে বলে আমি মনে করি। অবিলম্বে কাউন্টারগুলো খুলে দেওয়ার জন্য আমি জাতীয় অধিকার সংরক্ষণ কমিটির পক্ষ থেকে দাবি জানাচ্ছি।
জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা কিসলু বলেন, এ বিষয়ে সমিতির সবাই বসে একটা সিদ্ধান্ত নেব। দ্রুত যাত্রীদের সমস্যার সমাধান হবে।
পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, কাউন্টারগুলো বাস মালিক সমিতির কাছে বুঝিয়ে দিয়েছি। কিন্তু কেন তারা এগুলো ব্যবহার না করে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বিভিন্নস্থানে টিকিটগুলো বিক্রি করছে। এ বিষয়ে আমি বাস মালিক সমিতির সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করব।
এ বিষয় বরগুনা জেলা প্রশাসন রফিকুল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে আমাকে অবগত করা হয়েছে। বাস মালিক সমিতির সঙ্গে আমি কথা বলব। বিষয়টি আমি দেখব।
খান নাঈম/আরকে