রাজশাহীতে এবছর বৃষ্টি হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। ফলে পুকুর, খাড়ি ও খালে কাঙ্ক্ষিত পানির অভাব দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় পাট জাগ দেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। বাধ্য হয়ে তাদের পুকুর ভাড়া নিয়ে জাগ দিতে হচ্ছে পাট। এমন ঘটনায় ঘটেছে রাজশাহীর বাঘা উপজেলায়।

এই উপজেলার দিঘা, বাউশা, হরিনা, আড়ানী রেলস্টেশন এলাকা, চকরপাড়ায় বেশকিছু মালিক তাদের পুকুর ভাড়া দিয়েছেন পাট  জাগ দেওয়া জন্য। পুকুর মালিকরা প্রতি এক বিঘা জমির পাট জাগ দিতে চাষিদের থেকে নিচ্ছেন দুই হাজার টাকা। এজন্য মালিকরা পুকুরে স্যালোমেশিনের মধ্যেমে পানি জমিয়ে পাট জাঁকের উপযোগী করে রাখছেন।

স্থানীয় পাট চাষিরা বলছেন, প্রতি বছর বাঘায় প্রচুর পাটের চাষ হয়। কিন্তু সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে খাল-বিলে জমা পানিতে পাট জাগ দেওয়া হতো। ফলে পাট জাগ দেওয়া নিয়ে কোনদিন চাষিদের চিন্তা করতে হয়নি। কিন্তু এ বছর খাল, বিলে তেমন পানি নেই। পাট জাগ দেওয়া নিয়ে পানির অভাবে অনেকেই পাট কাটেননি। আর যারা পাট কেটেছেন তারা পুকুর ভাড়া নিয়ে জাগ দিচ্ছেন। এতে করে তুলনামূলক পাটের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে বলে জানান তারা।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে পাট কাটা শুরু হয়েছে। এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় ৪৪২ হেক্টর বেশি জমিতে এই পাটের চাষ হয়েছে। আর বাঘা উপজেলায় ৩ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে পাটের চাষ হয়েছে। চাষিদের মধ্যে অনেকের জমিতে এখনও পাট রয়েছে। অনেকেই পাট কেটে জাগ দিয়েছেন। কেউ কেউ আবার বিক্রিও করছেন হাটে বাজারে। তবে বেশির ভাগ উপজেলায় বর্তমানে পাট কাটা, জাগ দেওয়া, আঁশ ছুড়ানো এবং শুকানো নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

বাঘা উপজেলার হামিদকুড়ার পাটচাষি হাবিবুর রহমান বলেন, তার দুই বিঘা জমির পাট জাগ দিয়েছেন ভাড়া করা পুকুরে। পুকুরটি জোতরঘু এলাকার বেলাল হোসেনের। তিনি পাট জাগ দিতে পুকুর ভাড়া দেওয়ার লক্ষ্যে স্যালোমেশিন দিয়ে পানি জমিয়েছেন। তার পুকুরে অনেকেই পাট জাগ দিয়েছেন। তার দুই বিঘা জমির পাট জাগ দেওয়ার জন্য তাকে দিতে হয়েছে ৪ হাজার টাকা।

বাঘার উপজেলার জোতরঘু গ্রামের পুকুর মালিক বেলাল হোসেন বলেন, বৃষ্টি নেই। তার পুকুরে একটু পানি ছিল। অনেক চাষি সেখানে পাট জাগ দিতে চাচ্ছিলেন। পরে স্যালোমেশিনের মাধ্যমে পুকুরে পানি দেয়। চাষিদের শর্ত সাপেক্ষ পাট জাগ দিতে অনুমতি দিয়েছি।

রোববার (২৭ আগস্ট) উপজেলার দিঘা হাটে প্রতি মণ পাট বিক্রি হয়েছে ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা দরে। এই হাটে পাট বিক্রি মকুল হোসেন বলেন, এক বিঘা জমিতে পাট চাষ করতে লাঙল, বীজ সেচ, কাটা, পরিষ্কার করা, সারসহ খরচ পড়েছে ১০ থেকে ১১ হাজার টাকা। উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ১১ মণ পাট। এই হাটে পাট বিক্রি হয়েছে ১৮০০ থেকে ২ হাজার টাকা মণ দরে।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লাহ সুলতান বলেন, চাষিরা ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় পুকুর ভাড়া নিয়ে পাট জাগ দিয়েছে অনেকেই। তবে বৃষ্টি হয়েছে। দ্রুত এই সমস্যা কেটে গেছে।

শাহিনুল আশিক/আরকে