নরসিংদীর শিবপুরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিনিয়া জান্নাতকে বদলি করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এটিএম শরিফুল আলমের স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে তাকে বদলি করা হয়। জিনিয়া জান্নাতকে বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষে বদলি করা হয়েছে। এদিকে তার বদলির খবরে শিবপুরে মিষ্টি বিতরণ করা হয়েছে।

সোমবার (২৮ আগস্ট) রাতে শিবপুরের ইউএনওকে বদলির খবরে শিবপুরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

ইউএনও জিনিয়া জান্নাতের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, ঘুষ-দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ উঠে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তাকে শোকজ করা হয়েছিল।

জানা গেছে, জিনিয়া জান্নাত ইউএনওর দায়িত্বের পাশাপাশি শিবপুর পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্বে ছিলেন। দুটি দায়িত্বে থাকার সুযোগে তিনি ঘুষ কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েন। ঘুষ ছাড়া দপ্তরের কোনো ফাইল ছাড় করতেন না তিনি। তাছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ খানের মৃত্যুর পর উপজেলা পরিষদের অর্থ কেলেঙ্কারিতেও জড়িয়ে পড়েন এ কর্মকর্তা। একইসঙ্গে শিবপুর পৌরসভার প্রশাসকের ক্ষমতা খাটিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন। পৌরসভার ইজারাদারের নাম করে সড়ক থেকে চাঁদা তোলা হয়, যা নিয়ন্ত্রণ করেন ইউএনও।

এর বাইরে তার স্বামী দিনরাত সরকারি গাড়ি ব্যবহার করে আসছিলেন। তাছাড়া সহকর্মীদের সঙ্গে জিনিয়া জান্নাতের অসৌজন্যমূলক আচরণ এবং সরকারি বিধিনিষেধ ভঙ্গের বিস্তর অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপরই তাকে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে ডেকে সতর্ক করা হয়।  তারপরও তার অনিয়ম থেমে থাকেনি।

এসবের জের ধরে সোমবার (২৮ আগস্ট) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জিনিয়া জান্নাতকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় মিষ্টি বিতরণ করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা মুহূর্তের মধ্যেই ভাইরাল হয়ে যায়।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার প্রভাব অনেক বেশি। উপজেলা চেয়ারম্যান হারুনুর রশীদ মারা যাওয়ার পর তার আর কাউকে গোনার সময় নেই। তার স্বামী সরকারি চাকরিজীবী না হয়েও যত্রতত্র ইউএনওর সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। তাকে অফিস টাইমেও গাড়ি নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।

আরেকজন বলেন, ঈদুল আজহার আগের দিন রাতে ইউএনওর স্বামী সরকারি গাড়ি নিয়ে বের হন। পরে শহরের ছোনপাড়া কাঞ্চন আঞ্চলিক সড়কের মাঝামাঝি স্থানে ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় ইউএনওর সরকারি গাড়িটির। এতে গাড়ির সামনের বাম্পার ও ডানদিকে বডিতে প্রচন্ড চোট খায় এবং ফগ ও ইন্ডিকেটর লাইট ভেঙে যায়। তখন ট্রাক থেকে ১০ হাজার টাকা জরিমানাও আদায় করে ইউএনওর স্বামী। কোন ক্ষমতায় তিনি সরকারি গাড়ি ব্যবহার করেন। সরকার গাড়ি দিয়েছে আমাদের (জনগণের) সেবায় নিয়োজিত থাকার জন্য, স্বামী বা আত্মীয়-স্বজন সেই গাড়িতে ঘুরে হাওয়া খাওয়ার জন্য নয়। ওনার বদলিতে আমরা শিবপুরবাসী আনন্দিত। তাই আমরা মিষ্টি মুখের মাধ্যমে সেই আনন্দ ভাগাভাগি করছি।

/তন্ময় সাহা/এসএসএইচ/