প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম

টাঙ্গাইলের গোপালপুরে সহকারী শিক্ষককে বিয়ে করতে নোটিশ দেওয়ার ঘটনায় সমালোচনার ঝড় বইছে। এ ঘটনায় স্থানীয়রা সাজানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নজরুল ইসলামের বিচার চেয়ে মানববন্ধন করেছেন। এছাড়া প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনাস্থা জানিয়েছেন।

গত ২৬ জুলাই সাজানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের হিন্দুধর্ম বিষয়ক শিক্ষক রনি প্রতাপ পালকে ৩০ দিনের মধ্যে বিয়ে করার জন্য নোটিশ দেন প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানাকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট এ কমিটি গঠন করা হয়। এতে সদস্য করা হয় জেলা শিক্ষা কার্যালয়ের গবেষণা কর্মকর্তা মো. বায়োজীদ হোসেন ও সহকারী পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামানকে। গত ২৭ আগস্ট তদন্ত কমিটি বিদ্যালয়ে গিয়ে তদন্ত করে আসে।

জানা গেছে, ২০১৬ সালে গোপালপুর উপজেলার সাজানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে হিন্দুধর্ম বিষয়ক শিক্ষক রনি প্রতাপ পাল যোগদান করেন। পারিবারিক বা ব্যক্তিগত কারণে এখনও বিয়ে করেননি তিনি। সম্প্রতি বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলামের স্বাাক্ষর জাল করে সোনালী ব্যাংকের গোপালপুর শাখা থেকে বেশ কিছু টাকা উত্তোলন ও বিধিবহির্ভূতভাবে বিদ্যালয়ের টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে সকল শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটির সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষা অধিদপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হয়। যা নিয়ে তদন্ত চলছে। এতে প্রধান সাক্ষী হিসেবে রয়েছেন অবিবাহিত শিক্ষক রনি প্রতাপ পাল। 

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক রনিকে দুর্নীতির বিষয়ে সাক্ষ্য না দেওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তিনি তা মানেননি। সহকারী শিক্ষক রনির অন্য কোনো দোষ না পেয়ে গত ২৬ জুলাই এক উদ্ভট নোটিশ জারি করেন প্রধান শিক্ষক। ওই নোটিশে ৩০ দিনের মধ্যে রনিকে বিয়ে করার নির্দেশ দেন প্রধান শিক্ষক। অন্যথায় তাকে শাস্তি দেওয়া হবে বলেও নোটিশে জানানো হয়। 

সাজানপুর উচ্চ বিদ্যালয় মোট ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে ৩৪৩ জন। এদের মধ্যে ১৮১ জন ছাত্র ও ১৬২ জন ছাত্রী রয়েছে। এদের পাঠদানের জন্য মোট ১৫ জন শিক্ষক রয়েছে।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, রনি স্যার অনেক ভালোভাবে ক্লাস নেন। তার আচার-আচরণ অনেক ভালো। সকল শিক্ষার্থীর সঙ্গে তিনি অনেক সুন্দর ব্যবহার করেন। স্যারকে এভাবে বিয়ের নোটিশ দেওয়া ঠিক হয়নি। হেড স্যার তার স্বার্থ হাসিল করার জন্য এমন কাজ করেছেন বলে শুনেছি।

শিক্ষক রনি প্রতাপ পাল বলেন, পারিবারিক সমস্যার কথা জানালেও প্রধান শিক্ষক তা কোনোভাবেই মানেন না। স্কুলের শিক্ষার্থী এবং সহকর্মীদের সামনে নানাভাবে অপমান করেন। তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে প্রাণনাশের হুমকিও দিয়েছেন। ফলে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে গোপালপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। 

সাজানপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আমার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অনিয়মের অভিযোগ এনে বিভিন্ন জায়গায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। সেটির তদন্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা অভিযোগ দিয়েছেন মৌখিকভাবে। উনাকে বার বার বললেও বিয়ে করেননি। তাকে দ্রুত বিয়ে করার নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তাকে হেয় করার জন্য কোনো নোটিশ দিইনি।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাজনীন সুলতানা বলেন, ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো হয়েছে। পরে সেই প্রতিবেদন জেলা থেকে ডিজি বরাবর পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে ডিজি ব্যবস্থা নেবেন। 

অভিজিৎ ঘোষ/আরএআর