নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার সদর বাজার। অতি প্রাচীন এ বাজারে অন্তত সহস্রাধিক ব্যবসায়ী রয়েছেন। কেন্দুয়া থানাটিও এ বাজারেই অবস্থিত। কিন্তু সম্প্রতি বাজারটিতে প্রতিনিয়তই ঘটছে চুরি, চাঁদাবাজি ও হামলার মতো ঘটনা। এসব ঘটনায় বর্তমানে চরম অস্বস্তিতে রয়েছেন বাজারের ব্যবসায়ীরা।

এসব ঘটনায় থানায় একাধিক মামলা ও জিডি করলেও পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও বেশ কয়েকটি চুরির ঘটনার মূল রহস্যও পুলিশ উদ্ঘাটন করতে পারেনি বলে  অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

এরই মধ্যে গত সোমবার (২৮ আগস্ট) সন্ধ্যায় বাজারের দিগদাইর মোড় এলাকায় স্থানীয় বাদে আঠার বাড়ি গ্রামের বাসিন্দা উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রিয়াদ হোসেন তালুকদার দোলনের সঙ্গে বিকাশে টাকা পাঠানোকে কেন্দ্র করে মোবাইল ব্যবসায়ী অপূর্ব নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে তর্ক-বিতর্ক হয়। পরে এরই জেরে মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) রাতে বাজার কমিটির সভাপতি এনামুল হক ভূঞার আত্মীয় কেন্দুয়া পৌরসভায় পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শক (ভারপ্রাপ্ত) হিসেবে কর্মরত শাহীন খানের সাথে দোলনের চাচাতো ভাই লিটনের ঝগড়া হয়। এসব ঘটনায় বুধবার (৩০ আগস্ট) মোবাইল ব্যবসায়ী অপূর্ব বাদী হয়ে দিয়াদ হোসেন তালুকদার দোলন ও তার চাচাতো ভাই লিটনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা করেন। একই দিন সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান ও মারধরের অভিযোগে দোলন ও তার ওই চাচাতো ভাইসহ অজ্ঞাত আরও তিন-চারজনের বিরুদ্ধে শাহীন খান বাদী হয়ে পৃথক আরও একটি মামলা করেন। 

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বাজার কমিটির ডাকে বাজারের সব দোকানপাট বন্ধ রেখে অর্ধদিবস ধর্মঘট পালন করেন ব্যবসায়ীরা। এ সময় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মিছিল করেন ব্যবসায়ীরা। এতে নেতৃত্ব দেন বাজার কমিটির সভাপতি এনামুল হক ভূঞা এবং সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান ভূইয়া।

এ সময় বাজার কমিটির সভাপতি বলেন, কেন্দুয়া বাজারে কোনো রকম চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বরদাস্ত করা হবে না। অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক না কেন, যেকোনো মূল্যে তা প্রতিহত করা হবে।

এছাড়া এ ঘটনার ন্যায়বিচারের দাবিতে কেন্দুয়া পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বৃহস্পতিবার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি এবং অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেছেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট মাস পর্যন্ত কেন্দুয়া বাজারের বাসা বাড়িতে ও বিভিন্ন দোকানে মালামাল, মোটরসাইকেলসহ অন্তত ৩০টির মতো চুরির ঘটনা ঘটেছে। তবে এর মধ্যে ১০টির মতো ঘটনায় থানায় অভিযোগ হয়েছে এবং দুটি ঘটনায় চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে বলে স্বীকার করেছে পুলিশ। 

কাপড় ব্যবসায়ী রিপন মিয়া বলেন, রাতে আমার দোকানের সাটার ভেঙে কে বা কারা সব মালামাল নিয়ে যায়। ঘটনার এক বছর হয়ে গেলেও পুলিশ এ চুরির রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি। এমন হলে আমরা সাধারণ ব্যবসায়ীরা কীভাবে বাজারে ব্যবসা করব?

কেন্দুয়া বাজারের ব্যবসায়ী ও দিয়াদ হোসেন তালুকদার দোলনের চাচা ফরিদ তালুকদার বলেন, বিকাশে টাকা পাঠানোকে কেন্দ্র করে দোলনের সাথে মোবাইল ব্যবসায়ী অপূর্বর তর্ক-বিতর্ক হলে বিষয়টি শেষ করে দেওয়া হয়। কিন্তু পর দিন বাজার কমিটির সভাপতির আত্মীয় শাহীন খান বিষয়টিকে বড় করে। এ ঘটনায় থানায় পৃথক দুটি মামলাও হয়েছে। কিন্তু শাহীন খান বাজার কমিটির সভাপতির আত্মীয় হওয়ায় তারা তার পক্ষ নিয়ে বাজারের ব্যবসায়ীদের নিয়ে ধর্মঘট করেছে। বাজারে এর আগে আরও কত চুরি, চাঁদাবাজি, হামলার ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু বাজার কমিটি কিছু করেনি। কিন্তু এখন তাদের আত্মীয়ের সাথে ঝগড়া হওয়ায় তারা যা ইচ্ছা তাই করছে। 

এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলী হোসেন বলেন, মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে জোর চেষ্টা চলছে। এছাড়া চুরি ও চাঁদাবাজিসহ অন্য যে মামলাগুলো রয়েছে, সেগুলোর তদন্ত চলছে এবং বেশির ভাগ মামলার আসামিদেরকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে। 

জিয়াউর রহমান/আরএআর