কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় একটি ঝুপড়ি ঘর থেকে গুলিবিদ্ধ  মানিক মিয়া (৩৫) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। সীমান্তে অবৈধভাবে গরু পাচার করতে গিয়ে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সদস্যদের গুলিতে ওই যুবক নিহত হন বলে জানা যায়। 

এ ঘটনায় নিহতের বাবা আব্দুল বাতেন বাদী হয়ে রৌমারী থানায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের নামে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকালে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রৌমারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুপ কুমার সরকার। 

এর আগে সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাতে মামলাটি করা হয়। এদিকে রোববার বিকেলে ঝুপড়ি ঘর থেকে পুলিশ মরদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সোমবার সকালে কুড়িগ্রাম মর্গে পাঠায়।

গত রোববার রাতে ভারতীয় সীমান্ত দিয়ে অবৈধপথে গরু পাচার করতে গেলে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী মানিক মিয়া নামের এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হন। তিনি উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের বেহুলারচর গ্রামের আব্দুল বাতেনের ছেলে।

মামলার এজাহার সূত্রে পুলিশ জানায়, রোববার রাতে একদল গরু ব্যবসায়ী মোল্লারচর সীমানা পিলারের পাশ দিয়ে অবৈধভাবে কাঁটাতারের বেড়ার ওপর দিয়ে ভারতীয় গরু পাচার করছিলেন। এসময় টহলরত কুচনিমারা ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা তাদেরকে লক্ষ্য করে পরপর ৪ রাউন্ড গুলি ছুড়ে। এতে মানিক মিয়ার বুকে ও কোমরে গুলিবিদ্ধ হয়ে ভারতের অভ্যন্তরে মাটিতে তিনি লুটিয়ে পড়ে। সঙ্গে থাকা লোকজন তাকে উদ্ধার করে রৌমারী হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

পরে তারা পুলিশ ও বিজিবি’র মামলার ভয়ে নিহতের মরদেহ উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের বাঞ্ছারচর গ্রামের নিহত মানিকের খালাতো ভাই আব্দুল মোতালেবের বাড়িতে নিয়ে যান। খবর পেয়ে ১৬ ঘণ্টা পর রোববার বিকেলে পুলিশ ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে এবং সোমবার সকালে ময়নাতদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম মর্গে পাঠায়।

উপজেরার শৌলমারী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম জানান, রোববার রাতে ভারতীয় সীমান্তে অবৈধপথে গরু পাচার করতে গেলে বিএসএফ’র গুলিতে মানিক মিয়া নিহত হন। মানিক মিয়া সীমান্তে অবৈধ চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। রৌমারী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ভারতীয় সীমান্তঘেষা এবং এসব সীমান্ত এলাকায় মানিকের মতো কয়েকশ যুবক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত।

রৌমারী থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুপ কুমার সরকার বলেন, ভারতীয় সীমান্তে মানিক মিয়া হত্যার ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে বিএসএফের নামে হত্যা মামলা করেছে। এ বিষয়ে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে। এর আগে রোববার উপজেলার বন্দবেড় ইউনিয়নের একটি ঝুপড়ি ঘর থেকে মানিক মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মরদেহ সুরতহাল প্রতিবেদনের প্রাথমিকভাবে বাঁ পাঁজরে একটি ছোট ফুটো এবং বুকের ডান দিকে আরেকটি ফুটো ছিল। মরদেহের ময়নাতদন্তের জন্য কুড়িগ্রাম মর্গে পাঠানো হয়েছে।

জামালপুর বিজিবি-৩৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবদুল্লাহ আল মাশরুকি বলেন, সীমান্তে গুলির ঘটনায় গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার সময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে পতাকা বৈঠক করেছি। বিএসএফ এর পক্ষ থেকে গুলির ঘটনা স্বীকার করেছে। আমরা সীমান্ত হত্যার তীব্র নিন্দা জানিয়েছি। নিহতের বাবা বিএসএফয়ের নামে হত্যা মামলা করেছে এমন তথ্য আমার কাছে নেই।

জুয়েল রানা/আরকে