আশরাফুল ইসলাম

রংপুরের তারাগঞ্জ থানা পুলিশের বিরুদ্ধে আশরাফুল ইসলাম নামে এক সাংবাদিককে বাসা থেকে ধরে নিয়ে এসে একটি মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। পরে আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন তিনি।

ভুক্তভোগী সাংবাদিকের দাবি, যৌতুকের মামলায় দণ্ডিত আসামিকে গ্রেপ্তার না করায় পুলিশ সুপারের কাছে ওসির বিরুদ্ধে একজনের দেওয়া লিখিত অভিযোগ তুলে ধরে খবর প্রকাশ করায় তাকে হেনস্তা করতে এমনটি করেছেন ওসি।
   
আশরাফুল ইসলাম দৈনিক সংবাদ পত্রিকার তারাগঞ্জ উপজেলা প্রতিনিধি। প্রায় এক দশক ধরে  তিনি ওই পত্রিকায় কর্মরত রয়েছেন। 

তবে পুলিশ বলছে, জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও মারধরের মামলায় আসামি আশরাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওসির বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ সত্য নয়।

এদিকে সাংবাদিক আশরাফুল ইসলামসহ ১৩ জনের নামে দায়ের করা মামলার বাদী বুলবুল হোসেন হচ্ছেন যৌতুক মামলায় সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মমদেল হোসেনের আপন ভাতিজা। মামলার ১৩ জন আসামির মধ্যে শুধুমাত্র সাংবাদিক আশরাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানোর ঘটনাসহ ওসির বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থা।

আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তারাগঞ্জ থানার বর্তমান ওসি মোস্তাফিজার রহমান এর আগেও তারাগঞ্জে ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি রংপুর সদর কোতোয়ালি থানা থেকে পুনরায় ওসি হিসেবে তারাগঞ্জ থানায় যোগদান করেন।

সম্প্রতি যৌতুকের একটি মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি মমদেল হোসেনকে আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও গ্রেপ্তার না করায় ওই যৌতুক মামলার বাদী পুলিশ সুপারের কাছে ওসির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন। ওই লিখিত অভিযোগের সূত্র ধরে গত ১২ আগস্ট দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় ৪র্থ পাতায় একটি খবর প্রকাশিত হয়। যার শিরনাম ছিল ‘সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে গ্রেপ্তার না করায় ওসির বিরুদ্ধে এসপির কাছে অভিযোগ’।

ভুক্তভোগী আশরাফুলের দাবি, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ার খবর প্রকাশ হলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য তারাগঞ্জ থানার ওসি বিভিন্নভাবে ওই মামলার বাদীকে ম্যানেজ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। এ খবর প্রকাশ করায় তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন ওসি মোস্তাফিজার রহমান ।

অন্যদিকে গত ২৪ আগস্ট রংপুর নগরীতে নারী নির্যাতন বিরোধী একটি কর্মশালায় অংশ নেন সাংবাদিক আশরাফুল ইসলাম। ওই কর্মশালায় তিনি তারাগঞ্জের আশ্রয়ণ প্রকল্পসহ দুটি স্থানে দুই শিশুকে ধর্ষণ করার চেষ্টার ঘটনায় পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ তুলে ধরে বক্তব্য দেন। বিষয়টি বিভিন্ন মারফতে ওসি জানতে পারেন। 

এরই মধ্যে গত ৩০ আগস্ট জমি নিয়ে পূর্ব বিরোধের ঘটনায় আশরাফুলের চাচাসহ ছোট ভাইদের সঙ্গে হাতাহাতি আর সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এর তিন দিন পর ২ সেপ্টেম্বর সকালে সাংবাদিক আশরাফুল ইসলামকে তার বাসা থেকে পুলিশ আটক করে। 

ভুক্তভোগী আশরাফুলের দাবি- তাকে থানায় প্রায় দুই ঘণ্টা আটক রেখে মারামারির ঘটনার কথা উল্লেখ করে মামলা রেকর্ড করার পর আদালতে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছেন তিনি।

সার্বিক বিষয়ে জানতে শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তারাগঞ্জ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজার রহমানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হয়। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি জানি আপনি কি জানতে চাইছেন। আমি আপনাকে সব বলব, আপনি থানায় আসেন। মুঠোফোনে এতো কথা বলতে চাই না।  

এসময় তার বিরুদ্ধে সাংবাদিক আশরাফুল ইসলামের আনা অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত রয়েছেন দাবি করে ফোন কল কেটে দেন।

এ বিষয়ে রংপুরের পুলিশ সুপার ফেরদৌস আলী চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। 

তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বিশেষ শাখা) ইফতেখায়ের আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ওই আসামির ব্যাপারে জমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে মারামারিতে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে মামলা রয়েছে। মারামারির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। তবে পুলিশ তাকে সুনির্দিষ্ট অভিযোগে গ্রেপ্তার করে আদালতে প্রেরণ করেছিল। পরে আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন।

১৩ জন আসামির মধ্যে শুধুমাত্র একজনকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য আসামি পলাতক থাকতে পারে। এ কারণে হয়তো তাদের গ্রেপ্তার করেনি। মামলা থাকলে আসামি গ্রেপ্তার হবে, কারণ এটি পুলিশের দায়িত্ব। তবে ওসির বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ থাকলে সেটি খতিয়ে দেখা হবে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরএআর