সভাপতি আতিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কবির

সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। যার সভাপতি-সম্পাদক দুজনই বিবাহিত বলে জানা গেছে। এ গঠিত কমিটি নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করছেন উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হিসাবে কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে এক সন্তানের জনক আতিকুর রহমান আতিককে ও ধুমধাম করে বিয়ে করা ছাত্রনেতা ফিরোজ কবিরকে করা হয়েছে সাধারণ সম্পাদক। আতিকুর রহমান আতিক সাভারের জালেশ্বর এলাকার আমিনুল হকের মেয়ে আসমা হক স্বর্ণাকে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে রয়েছে এক সন্তানও। 

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রের ৫ এর (গ) ধারা অনুযায়ী বিবাহিত কেউ ছাত্রলীগের পদে থাকতে পারবে না। কিন্তু সাভারের চিত্র পুরোই উল্টো। তবে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন কমিটির অনুমোদন দাতা ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তারা বলছেন, বিবাহিতরা নতুন করে কমিটিতে পদের যোগ্যতা রাখে না। তারা শুধু কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছেন।

সভাপতি সম্পাদক বিবাহিত বিবাহিত হলেও তাদের রেখেই পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সভাপতির বিরুদ্ধে রয়েছে পুলিশ পেটানো, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, ডিস-নেট ব্যবসা দখলসহ বিস্তর অভিযোগ। এমন নানা অভিযোগে সভাপতি আতিকুর রহমান আতিককে ছাত্রলীগ থেকে করা হয় আজীবন বহিষ্কার। কিন্তু ২০১৮ সালের দুই ডিসেম্বর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করেন তৎকালীন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী। এছাড়া তিনি বিভিন্ন ব্যবসা দেখিয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স আবেদন করেছিলেন। যদিও ছাত্রলীগে থেকে কোনোরকম ব্যবসা করার সুযোগ নেই।

এই কমিটিতে সহ-সভাপতি হিসাবে রাখা হয়েছে নিজাম উদ্দিন টিপুকে। তার বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। তিনি ২০২২ সালের ৭ মার্চ সাভার বাজার রোডের উৎসব প্লাজার ইন্টারনেট ব্যবসা দখল করতে যান তার বাহিনী নিয়ে। পরে নেট ব্যবসায়ী সোহেল রানাকে তুলে নিয়ে ব্যাপক মারধর করেন। যার একটি ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে রাখা হয়েছে সজীব সরকার হৃদয়কে। তার বিরুদ্ধে সাভারের ফুটপাতের এক নিরীহ ব্যবসায়ীকে ২০১৯ সালে কুপিয়ে ও পিটিয়ে কোমর ভেঙে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর দায়ের করা মামলার তিনি আসামি ও বর্তমানে জামিনে রয়েছেন।

উপজেলা ছাত্রলীগের এই কমিটিতে রয়েছেন হত্যা মামলার প্রধান আসামি আতাবর রহমান শিপন। তাকে রাখা হয়েছে কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে। তিনি সাভারের জাপান প্রবাসী রেজাউল করিম রাজা হত্যা মামলার প্রধান আসামি। মামলার পর থেকে তিনি পলাতক রয়েছেন। পলাতক থেকেও তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের মত গুরুত্বপূর্ণ পদ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ছাত্রলীগের এক কর্মী বলেন, আতিক বিভিন্ন ব্যবসা দেখিয়ে অস্ত্রের লাইসেন্স চেয়েছিলেন। তিনি বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক যা ছাত্রলীগের সবাই জানে। তিনি বিয়ের বিষয়টি বরারই গোপন রাখেন। বিষয়টি সাভারের রাজনৈতিক অঙ্গণে ওপেন সেক্রেট।

এব্যাপারে বিবাহিত ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমান আতিক বলেন, আমি তো বিয়ে করিনি। বিয়ে করলে আপনাদের সবাইকে দাওয়াত দিয়ে অনুষ্ঠান করেই বিয়ে করব। তিনি বিয়ে ও সন্তানের কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বিয়ে করেছে সাধারণ সম্পাদক। এটা সবাই জানে।

সাভার উপজেলা ছাত্রলীগের বিবাহিত সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ কবির বলেন, আমি বিয়ে করেছি অনুষ্ঠান করে। আমাদের কমিটি দেওয়া হয়েছে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে। নির্বাচন শেষে কমিটি ভেঙে নতুন করে করা হবে।

ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগে বিবাহিতদের নতুন করে পদ পাওয়ার সুযোগ নেই। তারা আগে থেকেই ওই কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি ছিলেন। এজন্য আমরা শুধু পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিয়ে কমিটির মেয়াদ বাড়িয়ে দিয়েছি। এছাড়া অন্যান্য অভিযোগ যদি থাকে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান বলেন, তারা যদি বিয়ে করে থাকে তাদের নতুন দাম্পত্য জীবনকে স্বাগত জানাই। বিবাহিতদের ছাত্রলীগে থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমরা জেলা কমিটিকে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেব।

মাহিদুল মাহিদ/আরকে