নেত্রকোনার হাওর

নেত্রকোনার হাওরাঞ্চলের ফসলি জমির পানি কমছে ধীরগতিতে। এতে আসন্ন বোরো আবাদ নিয়ে চরম আশঙ্কায় রয়েছেন জেলার কৃষকরা। বোরো আবাদের জন্য বীজতলা তৈরি ও জমি প্রস্তুতকরণের উপযুক্ত সময় বয়ে গেলেও এখনো পানি না সরায় বিপাকে পড়েছেন তারা।

এ অবস্থায় দেরিতে বোরো আবাদ করলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আগাম বন্যায় আশানুরূপ ধানের উৎপাদন ও তা ঘরে তোলা নিয়ে সমস্যা দেখা দিতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

নেত্রকোনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো. হাবিবুর রহমান জানান, জেলার মদন, মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুরী, আটপাড়া উপজেলাসহ ১০টি উপজেলার হাওরাঞ্চলে ৪২ হাজার হেক্টর বোরো জমি রয়েছে, যা বর্ষাকালে পানিতে তলিয়ে যায় এবং পানি কমে যাওয়ার পর কৃষকরা তাতে বছরের প্রধান ফসল বোরো ধান আবাদ করে থাকেন।

এদিকে হাওরদ্বীপখ্যাত জেলার খালিয়াজুরী উপজেলার সদরের কৃষক মনির হোসেন ও নয়ন মিয়াসহ কয়েকজন কৃষক জানান, হাওরের আবাদযোগ্য জমির পানি অন্যান্য বছর নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে পুরোপুরি নেমে যায়। সঙ্গে সঙ্গে আমরা বোরো আবাদের জমি প্রস্তুতসহ বীজতলা তৈরি করে থাকি। পরে ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ শুরু করি।

বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ হাওরের স্লুইস গেটগুলো খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করেনি

এএইচএম আরিফুল ইসলাম, খালিয়াজুরী ইউএনও

কিন্তু এ বছর হাওরের জমির পানি এখনো না সরার কারণে বোরো আবাদে দেরি হচ্ছে জানিয়ে কৃষকরা জানান, এখনো বীজতলা তৈরি ও জমিই প্রস্তুত করতে পারেননি তারা। তাই বোরো আবাদ অনেকটা পিছিয়ে যাচ্ছে। দেরিতে বোরো আবাদের ফলে এ বছর শীতে বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াসহ আগাম বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে বলেও জানান তারা।

এ বিষয়ে খালিয়াজুরী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, খালিয়াজুরীতে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়। হাওরে নির্মিত বিভিন্ন বাঁধে পর্যাপ্ত স্লুইস গেট না দেয়া এবং বাঁধ নির্মাণকে যুগোপযোগী না করায় পানিপ্রবাহে বিঘ্ন ঘটছে। হাওরে ফসল রক্ষায় কিংবা অন্যান্য প্রয়োজনে নির্মাণ করা বাঁধগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্লুইস গেট থাকলে পানি সড়কে এতটা সমস্যা হতো না।

খালিয়াজুরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএইচএম আরিফুল ইসলাম বলেন, বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কর্তৃপক্ষ হাওরের স্লুইস গেটগুলো খুলে দেয়ার ব্যবস্থা করেনি।

জেলা পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী এম এল সৈকত এ বিষয়ে বলেন, হাওরের প্রায় সবগুলো স্লুইস গেট নির্দিষ্ট সময়ই পাউবোর তত্ত্বাবধানে খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে দুই বছর আগের তুলনায় এখানে এবার পানি সরার গতি খুবই কম। তাই হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ নির্মাণের জরিপ ও সংস্কারকাজও পিছিয়ে যাচ্ছে।

এনএ