নাটোর-৪ আসনে উপনির্বাচন : আ.লীগের মনোনয়ন চান ১৭ নেতা
নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর-বড়াইগ্রাম) আসনের উপনির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন ১৭ জন নেতা। তবে এ নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নেবে না বিএনপির কোনো প্রার্থী। অন্যদিকে আসনটিতে আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলের সুযোগে নির্বাচন নিয়ে ছক কষছে জাতীয় পার্টি।
গত ৭ সেপ্টেম্বর নাটোর-৪ আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নড়েচড়ে উঠেছেন। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী এসব নেতাদের কর্মী-সমর্থকরা নেমেছেন কথার লড়াইয়ে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সরব রয়েছেন তারা। যেখানে দলের জন্য নেতার ত্যাগ ও যোগ্যতা প্রমাণ করতে ব্যানার-ফেস্টুন পোস্ট করে প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন কর্মী-সমর্থকরা।
বিজ্ঞাপন
এ আসনে সম্প্রতি দলীয় মনোনয়ন ফরম ছেড়েছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) শেষ দিন পর্যন্ত মোট ১৭ জন নেতা মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন। যার মধ্যে গুরুদাসপুর উপজেলার ৭ জন, বড়াইগ্রাম উপজেলার ৯ জন এবং নাটোর সদর উপজেলার ১ জন মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করে জমা দিয়েছেন।
দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন- সদ্য প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কোহেলী কুদ্দুস মুক্তি, গুরুদাসপুর পৌরসভার মেয়র মো. শাহনেওয়াজ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ আহম্মদ আলী মোল্লা, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আনোয়ার হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সরকার এমদাদুল হক মোহাম্মদ আলী, পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম, সাবেক আইন বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য সুব্রত কুমার কুন্ড, বড়াইগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান ডা. সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী, বনপাড়া পৌরসভার মেয়র কে এম জাকির হোসেন, বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আরিফ ইসলাম, সাবেক ছাত্রনেতা এস এম রফিকুল পারভেজ, জেলা আওয়ামী লীগের শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক এস এম আসাদুজ্জামান, বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. মোয়াজ্জেম হোসেন, গুরুদাসপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আব্দুল কাদের, নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এ কে এম শাহজাহান কবীর, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মো. আতিকুল ইসলাম এবং নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রতন কুমার সাহা।
বিজ্ঞাপন
দলীয় সূত্রে জানা যায়, এসব প্রার্থী মনোনয়নের জন্য হাইকমান্ডে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেও ঢাকার অফিসেও দেখা যাচ্ছে তাদের।
বড়াইগ্রাম ও গুরুদাসপুর দুই উপজেলা মিলে এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল বেশ পুরোনো। উপ-নির্বাচনে যার প্রভাব পড়তে পারে বলে মনে করছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা।
অপরদিকে নাটোর-৪ আসনে উপনির্বাচনে দলীয়ভাবে কোনো প্রার্থী দেবে না বিএনপি। বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু জানান, এই সরকারের অধীনে বিএনপি আর কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। সুতরাং নাটোর-৪ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপি কাউকে মনোনয়ন বা সমর্থন দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
এদিকে উপ-নির্বাচনে বিএনপির না আসা ও আসনটিতে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কাজে লাগিয়ে নির্বাচন নিয়ে নতুন ছক কষছে জাতীয় পার্টি। জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আলাউদ্দিন মৃধা ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত নির্বাচনে এই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে ভোট করেছি। উপনির্বাচন নিয়েও দলের হাইকমান্ডের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা আমাকে গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছে। তাই এলাকায় এসে ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছি। নানা সমীকরণে ভোটের ফলাফল জাতীয় পার্টির পক্ষে আসবে, সে বিষয়ে আমি আশাবাদী।
অন্যদিকে জাতীয় পার্টির সাবেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কাশেম সরকার দলটির (রওশন এরশাদপন্থী) মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
দলে বিভক্তির কথা স্বীকার করে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সোনার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। সব জায়গাতেই মনোমালিন্য ও বিভক্তি রয়েছে। এই আসনেও কিছুটা বিভক্তি থাকলেও উপনির্বাচনে তার প্রভাব পড়বে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে নৌকা দিয়ে পাঠাবেন মনোনয়ন প্রত্যাশী সকল প্রার্থীদেরকে নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ নৌকাকে বিজয়ী করার জন্য কাজ করবে।
উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছেন ১৭ নেতা। আগামীকাল (১৫ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভা রয়েছে। সেখান থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হবে বলে জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা।
গত ৩০ আগস্ট নাটোর-৪ আসনের ৫ বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস মারা যান। এতে আসনটি শূন্য হয়। শূন্য হওয়া আসনে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন নির্বাচন সম্পন্ন করার বাধ্যবাধকতা থাকায় গত ৭ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন এ আসনে উপনির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে।
তফসিল অনুযায়ী, এই আসনের ভোট অনুষ্ঠিত হবে ১১ অক্টোবর। ১৭ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন। ১৮ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র বাছাই। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর। আপিল নিষ্পত্তি ২৩ সেপ্টেম্বর। ২৪ সেপ্টেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। আর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ করা হবে ২৫ সেপ্টেম্বর।
নাটোর জেলা নির্বাচন অফিসের তথ্য মতে, এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১৬ হাজার ৫৪৬ জন। যেখানে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৭ হাজার ১১৬ ও নারী ভোটার ২ লাখ ৯ হাজার ৪৩০ জন।
আরএআর