সন্তান বিদ্যালয়ে গেল কিনা, ক্লাস করছে কিনা, কখন বিদ্যালয় থেকে বের হয়েছে- এমন সব দুশ্চিন্তা আর অভিভাবকদের করতে হবে না। এর সমাধান করেছে সিরাজগঞ্জ পৌর এলাকার হৈমবালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়। এখন ঘরে বসেই শিক্ষার্থীদের তথ্য জানতে পারছেন অভিভাবকরা। এতে অভিভাবকদের স্বস্তির পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হারও বেড়েছে, কমেছে ক্লাস ফাঁকি।

সিরাজগঞ্জ জেলার প্রথম স্মার্ট বিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করা হৈমবালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে হাজিরা, অনলাইনে বেতন, পরীক্ষার ফি, ডিজিটাল ক্লাস রুমের ব্যবস্থা রয়েছে। মোবাইল মেসেজের মাধ্যমে অভিভাবকরা নিশ্চিত হতে পারছেন তাদের সন্তানেরা স্কুলে কখন যাচ্ছে, কখন স্কুল থেকে বের হচ্ছেন। আর রশিদ সিস্টেম নয়, অনলাইনে বেতন বা পরীক্ষার ফি দিয়ে মেসেজের মাধ্যমে নিশ্চিত হচ্ছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ১৮ জুলাই আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে স্মার্ট বিদ্যালয় হিসেবে ঘোষণা করা হয় হৈমবালা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়কে। এরপরেই শিক্ষার্থীরা লাইনে দাঁড়িয়ে পাঞ্চ মেশিনে নিজেদের আইডি কার্ড পাঞ্চ করে হাজিরা দিয়ে ক্লাসে প্রবেশ করে। আইডি কার্ড পাঞ্চ করার পর ডাটা উঠে যাচ্ছে হাজিরা শিটে। সেই সঙ্গে একটি মেসেজ যাচ্ছে তাদের অভিভাবকদের মোবাইল ফোনে। অভিভাবকরা নিশ্চিত হচ্ছেন তাদের সন্তান বিদ্যালয়ে গিয়েছে কিনা। একই সঙ্গে শিক্ষক, শিক্ষার্থীদের সময় মতো উপস্থিতি মূল্যায়ন রিপোর্ট, পরীক্ষার সিট প্ল্যান, পরীক্ষার ফলাফল, বেতন ফি জমা দেওয়ার ভোগান্তি কাটিয়ে প্রযুক্তির মাধ্যমে এখন সব কিছুই সহজে করা যাচ্ছে। মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব, স্বাস্থ্য সুরক্ষা ক্লাবসহ স্মার্ট বিদ্যালয়ের সব সুবিধাই পাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। এতে বিদ্যালয়ের প্রতিটি কক্ষ শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে কানায় কানায় পূর্ণ। শিক্ষকরাও পাঠদান করে আনন্দ পাচ্ছেন।

হৈমবালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলে, জেলায় প্রথমবারের মতো আমাদের বিদ্যালয়কে স্মার্ট বিদ্যালয় ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে আমরা আইডি কার্ড পাঞ্চ করে বিদ্যালয়ে আসা যাওয়া করছি। ফলে আমাদের মা-বাবা ঘরে বসেই নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। এতে বিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুন্দর পরিবেশ ফিরে এসেছে। কেউ ক্লাস ফাঁকি দিতে পারে না। আমরা এ বিদ্যালয়ের ছাত্রী হিসেবে গর্বিত।

সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে নিশ্চিন্তে থাকছেন অভিভাবকেরা। তারা বলছেন, হৈমবালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়টি স্মার্ট বিদ্যালয় হওয়ার পর থেকে আমাদের সন্তানরা অনেকটাই নিরাপদ। কারণ মোবাইল মেসেজে আমরা জানতে পারছি সন্তানেরা এখন কোথায় আছে। তাছাড়াও বেতন, পরীক্ষা ফি, বিদ্যালয়ের যাবতীয় তথ্য জানতে পারছি অনলাইনের মাধ্যমেই। ফলে সবকিছু খুব সহজ হয়ে গেছে।

হৈমবালা উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মোছা. শামীম আরা বলেন, আমাদের ম্যানেজিং কমিটির সিদ্ধান্তে বিদ্যালয়টি সিরাজগঞ্জে প্রথম স্মার্ট বিদ্যালয় করা হয়েছে। আইডি কার্ডে পাঞ্চ করে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করে। এতে উপস্থিতির হার অনেক বেড়েছে। পাশাপাশি অভিভাবকরাও নিশ্চিন্তে থাকতে পারছেন। এ ছাড়াও তারা ঘরে বসেই শিক্ষার্থীদের বেতনসহ যাবতীয় ফি দিতে পারছেন। 

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি শেখ সুলতান মাহমুদ বলেন, সরকার স্মার্ট বাংলাদেশে পরিণত করার প্রধান হাতিয়ার হবে ডিজিটাল সংযোগ। এরই ধারাবাহিকতায় আমরা স্মার্ট বিদ্যালয় ঘোষণা করেছি। স্মার্ট বিদ্যালয়ের সব সুযোগ সুবিধা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছে দিতে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সকালে স্কুলের নাম করে সন্তানরা বাড়ি থেকে বের হয়ে বান্ধবীদের সঙ্গে ঘুরতো। এখন আর সেই সুযোগ পাবে না। এ কারণেই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার বেড়েছে অনেক।

সিরাজগঞ্জ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজি সলিম উল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি যতটুকু জানতে পেরেছি তারা নিজস্ব উদ্যোগে প্রতিষ্ঠানটি অনেকটাই ডিজিটাল ও স্মার্ট করেছে। যদিও আমাদের তারা বিষয়টি সম্পূর্ণ জানাননি তবুও তাদের উদ্যোগকে আমি সাধুবাদ জানাই। কারণ বর্তমান তথ্য-প্রযুক্তির যুগের সঙ্গে আনাদেরও এগিয়ে যেতে হবে। বাংলাদেশ যে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার সঙ্গে এগিয়ে যেতে হলে এ ধরনের পদক্ষেপ দারুণ সন্তোষজনক। ধীরে ধীরে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোও এভাবে এগিয়ে যাবে- এটাই আশা করি। 

শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর