প্রশংসায় ভাস‌ছেন টাঙ্গাইলের সখীপু‌র বিএএফ শাহীন ক‌লে‌জের শিক্ষার্থী তানভীন আহ‌মেদ। মেডিকেল কলেজের এমবিবিএস ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় সারাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছেন তিনি। তার এই সফলতায় সহপাঠী থে‌কে শুরু ক‌রে ক‌লেজের শিক্ষক ও এলাকাবাসী তাকে শু‌ভেচ্ছা জা‌নাচ্ছে। তানভীন আহ‌মেদ উপ‌জেলার নলুয়ার আড়া‌লিয়াপাড়া এলাকার মো. শাহজাহানের ছে‌লে। 

স‌রে‌জ‌মি‌নে জানা গে‌ছে, মধ‌্যবিত্ত প‌রিবা‌রের সন্তান তানভীন আহ‌মেদ। সখীপুর উপ‌জেলার নলুয়া আড়া‌লিয়াপাড়ায় একটি ভাড়া বাসায় প‌রিবা‌রের সঙ্গে থা‌কেন তিনি। আধাপাকা টিনের এক‌টি ঘ‌রে পড়াশুনা করেন। দুই রুম বি‌শিষ্ট টি‌নের ঘর‌টির ভাড়া মা‌সে ১৪০০ টাকা। 

তিন ভাইবোনের ম‌ধ্যে সবার বড় তানভীন। তার ছোট ভাই তাহসীন আহ‌মেদ দশম শ্রেণিতে ও বোন নওরীন জাহান তৃতীয় শ্রেণি‌তে সখীপু‌রের বিএএফ শাহীন ক‌লে‌জে পড়াশুনা কর‌ছে। তার মা পারভীন বেগম গৃ‌হিণী। তানভীনের বাবা ঢাকায় বিমানবা‌হিনীর সা‌র্জেন্ট হি‌সে‌বে কর্মরত ছিলেন। ২০১৪ সা‌লে তিনি অবসরে গেছেন। 

তানভীন ঢাকার সি‌দ্দিক মেমো‌রিয়াল কিন্ডার গার্টেন থে‌কে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষায় জি‌পিএ-৫ , সখীপুর বিএএফ শাহীন ক‌লে‌জ থে‌কে এস‌এস‌সি‌তে জি‌পিএ-৫  এবং একই ক‌লেজ থে‌কে এইচএস‌সিতে জি‌পিএ-৫ পে‌য়ে‌ উত্তীর্ণ হ‌ন। 

তা‌দের গ্রা‌মের বা‌ড়ি ময়মন‌সিংহের নান্দাইল উপ‌জেলার তশরা গ্রা‌মে। তানভী‌নের চাচা সখীপুরের পাহাড়কাঞ্চনপুরে বিমানবা‌হিনীতে কর্মরত। তা‌দের পড়া‌শোনার জন‌্য শাহজাহান সখীপু‌রের নলুয়া‌তে ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। 

তানভীন মে‌ডি‌কেল ভ‌র্তি পরীক্ষা দি‌য়ে‌ছিলেন ময়মন‌সিংহের আনন্দ মোহন ক‌লেজ থে‌কে। ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ নম্বরের মধ্যে ৮৭ নম্বর পেয়ে সারাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছেন তিনি। 

তানভী‌নের ছোট ভাই তাহসীন আহ‌মেদ ঢাকা পোস্ট‌কে বলে, আমার ভাই মে‌ডি‌কেল ভর্তি পরীক্ষায় সারাদে‌শের মধ্যে দ্বিতীয় হয়েছে। তার এই অর্জনে আমরাও অনুপ্রা‌ণিত। আমিও ভালো পড়াশুনা ক‌রে  দেশসেরা হ‌তে চাই। 

তানভীন আহ‌মেদ ঢাকা পোস্ট‌কে ব‌লেন, লক্ষ‌্য নির্ধা‌রিত থাক‌লে আর আল্লাহ‌কে স্মরণ কর‌লে ভালো কিছু পাওয়া যায়। আমার এই সাফল্যেরে পেছনে প‌রিবার ও ক‌লেজের শিক্ষকদের অবদান অনেক বেশি।

তিনি বলেন, দি‌নে প্রচুর পড়াশুনা ক‌রে‌ছি। মে‌ডি‌কে‌লে ভ‌র্তি পরীক্ষা দেওয়ার আগে ঢাকায় কো‌চিং ক‌রে‌ছি। এরপর টাঙ্গাই‌লে কো‌চিং ক‌রে‌ছি। পড়াশুনার পাশাপাশি নিয়‌মিত নামাজ আদায় করেছি। আমি কল্পনাও ক‌রে‌নি যে মফস্ব‌লে থে‌কে ভালো রেজাল্ট কর‌তে পার‌বো। তারপরও আল্লাহ সহায় ছি‌লেন ব‌লে দ্বিতীয় হতে পে‌রে‌ছি। ঢাকা মে‌ডি‌কেল ক‌লে‌জে ভ‌র্তি হওয়ার সু‌যোগ। আমার সফলতায় এলাকার লোকজন অনেক খু‌শি। ক‌লেজের স‌্যাররা খোঁজখবর নি‌চ্ছেন। 

তানভীন আহ‌মেদ ব‌লেন, আমার বাবা হা‌র্টের রোগী। আমি হা‌র্টের ডাক্তার হ‌য়ে‌ বাবার চি‌কিৎসা করতে চাই। এর পাশাপা‌শি অসহায় সাধারণ মানুষ‌কে চি‌কিৎসাসেবা দিব। ছোট বেলা থে‌কে মানু‌ষকে কাছ থে‌কে সেবা দেওয়ার ইচ্ছে ছিল। সেই সু‌যোগ হয়ত আল্লাহ আমা‌কে দি‌য়ে‌ছেন। আমার এবং বাবা-মায়ের ইচ্ছায় মে‌ডি‌কে‌লে ভ‌র্তি পরীক্ষা দি‌য়ে‌ছিলাম, সফলতাও পে‌য়ে‌ছি। 

তানভী‌নের বাবা শাহজাহান ঢাকা‌ পোস্ট‌কে ব‌লেন, ছে‌লের জন‌্য সবসময় আল্লা‌হর কাছে দোয়া ক‌রে‌ছি যা‌তে ভালো ফলাফল হয়। ছে‌লে মে‌ডি‌কে‌লে ভ‌র্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় হওয়ায় আমি গর্বিত। এলাকার মানুষ খুব খু‌শি। 

তিনি বলেন, বিমানবা‌হিনী থে‌কে অবস‌রে যাওয়ার পর সখীপুর এসেছিলাম সন্তা‌নদের পড়াশুনা করা‌নোর জন‌্য। এখা‌নেই একটা বাসা ভাড়া নি‌য়ে বসবাস কর‌ছি। তিন ছে‌লে-মে‌য়ে বিএএফ শাহীন ক‌লে‌জে পড়াশুনা কর‌ছে। ডাক্তার হ‌য়ে ছে‌লে মানু‌ষের সেবা কর‌বে এটা আন‌ন্দের। ছেলের জন্য দেশবাসীর কা‌ছে দোয়া কামনা করেন শাহজাহান। 

সখীপু‌র বিএএফ শাহীন ক‌লেজের শিক্ষক প্রণব কুমার ঢাকা পোস্ট‌কে ব‌লেন, তানভীন খুব মেধাবী শিক্ষার্থী। সে সব কিছুই‌ খুব ম‌নো‌যোগ দি‌য়ে শুনে এরপর উত্তর দেয়। সে খুব শান্ত স্বভা‌বের ছেলে। এ বছর বিএএফ ক‌লেজ থে‌কে তানভীনসহ দুইজন মে‌ডি‌কে‌লে ভ‌র্তি হওয়ার সু‌যোগ পে‌য়ে‌ছে। ক‌লেজ থে‌কে তা‌দেরকে সংবর্ধনা দেওয়ার পাশাপা‌শি সহায়তার প্রয়োজন হ‌লে কর্তৃপক্ষ সেটা দেখ‌বে। 

আরএআর