মায়ের সঙ্গে ফরিদুল ইসলাম

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ফরিদুল ইসলাম (৩৫)। ঘরে অসুস্থ মা আমেনা বেগম (৮০)। তার সপ্তাহে প্রায় ৭০০ টাকার ওষুধ লাগে। চিকিৎসা আর সংসারের খরচ সামলাতে কিস্তি তুলে ব্যাটারি চালিত অটোভ্যান কেনেন ফরিদুল। সেটা চালিয়েই চলতো সংসারের যাবতীয় খরচ, মায়ের ওষুধ ও কিস্তির টাকা।

রোববার (২৪ সেপ্টেম্বর) ভোরে বাড়ির গোয়াল ঘর থেকে ভ্যান গাড়িটি চুরি হয়ে যায়। ভ্যান গাড়িটি দেখতে না পেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফরিদুল ইসলামের বৃদ্ধা মা আমেনা বেগম। মা আমেনাকে পাশে বসে সান্ত্বনা দিচ্ছেন ফরিদুল ইসলাম। এখন কীভাবে পরিশোধ করবেন কিস্তির টাকা সেই চিন্তায় ভেঙে পড়েছেন তারা।

সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার জামতৈল ইউনিয়নের চর টেংরাইল গ্রামে ফরিদুলের নিজ বাড়ি থেকে অটোভ্যানটি হারিয়ে যায়। ফরিদুল উপজেলার চর টেংরাইল গ্রামের মৃত কানসু মন্ডলের ছেলে। 

অটোভ্যান চালক ফরিদুল ইসলাম বলেন, আশা এনজিও থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে অটোভ্যানটি কিনেছিলাম। ভ্যান চালিয়ে দিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হতো। তা দিয়েই ৫ সদস্যের পরিবার চলতো। অটোভ্যান চালিয়ে মায়ের সপ্তাহে প্রায় ৫০০-৭০০ টাকার ওষুধ ও ১ হাজার ৩০০ টাকা কিস্তি দিতাম। কিন্তু সেটি হারিয়ে এখন নিঃস্ব হয়ে গেলাম। এখন মায়ের ওষুধ কিনব কীভাবে, খাওয়া-কিস্তির কী হবে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে ফরিদুলের মা আমেনা বেগম বলেন, আমার ছেলে ভ্যান চালিয়েই আমার ওষুধ আর সংসার চালাতো। এখন ওষুধ কীভাবে কিনবে ও সংসার কীভাবে চলবে। আমাদের তো আর কেউ নেই। কে আমাদের দেখবে। আমার ছেলের ভ্যান কেনার টাকা কোথায় পাব?

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কামারখন্দ উপজেলায় চলতি মাসে চারটি ব্যাটারি চালিত ভ্যান চুরি হয়েছে। প্রতিটি ভ্যানের মূল্য প্রায় ৫০ হাজার টাকা করে। যাদের ভ্যান গাড়ি হারিয়েছে তারা সবাই ঋণ করে ভ্যান কিনেছিলেন।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর ব্যাটারি চালিত ভ্যান হারিয়েছে লেবু সরকার। তিনি বলেন, কিস্তিতে ভ্যান কিনেছিলাম। ঋণ পরিশোধ না হতেই ভ্যানটি হারিয়ে যায়। কিস্তিতে আবার ভ্যান কিনে চালাচ্ছি। আগের ভ্যান না থাকলেও তার কিস্তি এখনো দিতে হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, থানায় অভিযোগ দিয়েও কোনো লাভ হয় না। অভিযোগ দিয়ে তো ভ্যান গাড়ি ফিরে পাবো না।

কামারখন্দ থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল ইসলাম বলেন, এ বিষয়ে থানায় এখনো কোনা অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এ ব্যাপারে কামারখন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহীন সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। আগামীকাল তাকে একটু আমার অফিসে আসতে বলেন। দেখি আমি তার জন্য কিছু করতে পারি কি না। 

শুভ কুমার ঘোষ/এএএ