সিন্ডিকেট করে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রুখতে সরকার তিনটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার পরও ভোলার বাজারে নির্দিষ্ট দামে মিলছে না আলু, পেঁয়াজ ও ডিম। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নির্দিষ্ট দামের চেয়ে বেশিতে বিক্রি হচ্ছে। উল্টো হিমাগার মালিক ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা পণ্য দুটির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছেন।

এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রতি কেজি আলুর সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা, প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা এবং ফার্মের মুরগির প্রতিটি ডিম ১২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। তবে ভোলার বিভিন্ন হাটবাজারে নির্ধারিত দামের চেয়ে অনেক বেশিতে এসব পণ্য বিক্রি হচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ভোলা শহরের কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ দোকানেই নেই পণ্যের মূল্যতালিকা। আবার কিছু কিছু দোকানে তালিকা থাকলেও সেই দামে বিক্রি হচ্ছে না।

বাজারগুলোতে আলুর প্রকারভেদে প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। আর পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০-৮০ টাকা। ডিমের বাজারে সরকার নির্ধারিত এক হালি ৪৮ টাকা হলেও তা কিনতে হচ্ছে ৫০-৫৪ টাকায়। তবে কিছুটা কম দামেই পাওয়া যাচ্ছে ডিম। সপ্তাহখানেক আগেও ভোলায় ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি পিস ১৪ থেকে ১৫ টাকা। এছাড়া কাঁচা মরিচ কেজি প্রতি ১২০ টাকা, রসুন ১৫০ টাকা, আদা ২৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৫০ টাকা, শসা ৪৫ টাকা ও বেগুন ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছ।

এদিকে, মুরগির মাংসের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা। এছাড়া ইলিশসহ সব ধরনের মাছের দামও চড়া বলে অভিযোগ ক্রেতাদের।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারি পর্যায়ে দাম না কমলে তাদের কম দামে বিক্রি করার সুযোগ নেই। এদিকে, দাম কমার খবর শুনে বাজারে গিয়ে হতাশ হচ্ছেন ক্রেতারা। দাম নির্ধারণের পাশাপাশি সরকার কঠোরভাবে বাজার তদারকির ও দাবি জানান তারা। ক্রেতাদের অভিযোগ, প্রতিদিন বাজার মনিটরিং না করার কারনে আলু পেঁয়াজের দাম কমছে না।

তবে বিক্রেতারা বলছেন, ভোক্তা পর্যায়ে আসার আগেই দামের বিভিন্ন স্তর রয়েছে। আমাদের খুচরা বাজারে যেকোনো পণ্যের দাম আড়তের সঙ্গে মিলিয়ে বিক্রি করতে হয়। আড়ত যদি রাতারাতি দাম কমিয়ে দেয়, তাহলে আমরাও কমে বিক্রি করতে পারি। আবার আড়তে যদি রাতারাতি দাম বাড়িয়ে দেয়, তাহলে আমাদেরও বেশি দামেই বিক্রি করতে হবে। দামটা আসলে সরাসরি আড়তের সঙ্গে নির্ধারিত।

বাজার করতে আসা ক্রেতা সাইফুল্লাহ ঢাকা পোস্টকে বলেন, ৪৫ টাকার কমে কোনো আলু নেই। দুই কেজি আলু কিনেছি ৯০ টাকা দিয়ে। ডিম ১৩ টাকা করে কিনলাম। সরকার যে আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল তার খবর পড়েছিলাম। কিন্তু বাজারে তার কিছুই দেখতে পাচ্ছি না। প্রশাসনের প্রতিদিন বাজার মনিটরিং করা উচিত।

ভোলা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তৌহিদুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আলু ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু এরপরও ব্যবসায়ীরা বেশি দামে এসব পণ্য বিক্রি করছেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আমরা নিয়মিতভাবে বাজার মনিটরিং করে থাকি। বর্তমানে পণ্য সরবরাহের কোনো ঘাটতি নেই। বিষয়টি নিয়ে আমরা কাজ করছি। দাম কিছুটা কমে এসেছে, আরও কমবে। জনস্বার্থে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ভোলা ভোক্তা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. মাহামুদুল হাসান ঢাকা পোস্টকে জানান, সরকারের নির্ধারিত দাম কার্যকর করতে বাজার মনিটরিং  ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তারপরও কিছু ব্যবসায়ী আলু মজুদ করে দাম বাড়ানো অব্যাহত রেখেছে। বিক্রেতারা যদি নির্ধারিত দামে বিক্রি না করেন, তাহলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া।

এমজেইউ