পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সদরের বাসা-বাড়িসহ সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিদ্যুৎ গ্রাহকদের কিলোওয়াট লোড বাড়াতে মৌখিক নোটিশ জারি করেছে নেসকো লিমিটেড। এদিকে গ্রাহকদের কিলোওয়াট লোড বৃদ্ধির টাকা দিতে হচ্ছে ২০-৩০ কিলোমিটার দূরে বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে অবস্থিত জনতা ব্যাংক শাখায়। এতে করে ভোগান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা।

গ্রাহকরা বলছেন, উপজেলা সদর থেকে দূরে অবস্থিত ব্যাংকের শাখায় যাতায়াত সময় সাপেক্ষ, এতে করে আর্থিক ক্ষতিও হচ্ছে। তাদের অভিযোগ বাসাবাড়িতে প্রয়োজনের অতিরিক্তি বিদ্যুতের লোড নিতে বাধ্য করছে নেসকো কোম্পানি। বর্তমান সময়ে সরকার গ্রামে-গঞ্জে ইন্টারনেট সেবা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি অনলাইন কার্যক্রম চালু করেছে। এরপরও নেসকো বিদ্যুৎ কোম্পানির সেবা নেওয়ার জন্য গ্রাহকদের ২০-৩০ কিলোমিটার দূরে যেতে হচ্ছে।

জানা গেছে, তেঁতুলিয়া উপজেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নেসকো লিমিটেডের অধীনে গ্রাহক রয়েছেন প্রায় ১৯ হাজার। পূর্বে সংযোগ দেওয়া মিটারে কিলোওয়াট বাড়ানোর জন্য গত জুলাই থেকে বিলের কাগজ সরবরাহকারীদের মাধ্যমে গ্রাহকদের মৌখিক নোটিশ দিয়েছে নেসকো। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মিটারে কিলোওয়াট লোড বাড়ানো না হলে বিলের সঙ্গে বাড়তি ডিমান্ড চার্জ ও ভ্যাট যুক্ত করা হচ্ছে।

গ্রাহকদের অভিযোগ, বিদ্যুতের ১ কিলোওয়াট লোড দিয়ে বাসাবাড়ির কাজ চলে। ৩ কিলোওয়াট লোড দিয়ে প্রায় সেমি রাইস মিল চলার কথা। এখন বাসা বাড়িতেও ২-৩ কিলোওয়ার্ট লোড নিতে চাপ দিচ্ছে নেসকো কোম্পানি। অপর দিকে উপজেলা শহর থেকে ২০-৩০ কিলোমিটার দূরের একটি ব্যাংকের শাখায় টাকা দিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের সময় নষ্ট হচ্ছে, অতিরিক্ত টাকাও খরচ হচ্ছে। 

তাদের দাবি, নেসকো লিমিটেড কর্তৃপক্ষ তেঁতুলিয়া সদরে অবস্থিত সোনালী ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক শাখায় এই বিলের টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করলে ভোগান্তি কিছুটা কমতো।

গ্রাহক মেহের আলী, সেলিম ও রইছ উদ্দিন বলেন, বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য ১ কিলোওয়াট লোডের দরকার হলেও এখন ২-৩ কিলোওয়াট লোড বাড়ানোর চাপ অযৌক্তিক। এর কারণে বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। আবার উপজেলা সদরে সোনালী ব্যাংক ও কৃষি ব্যাংকে নাকি এই বিল প্রদানের কোন হিসাব খোলা নেই। তাই আমাদের বাড়ি থেকে ১৫-২০ কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে বাংলাবান্ধায় জনতা ব্যাংকে গিয়ে বিল দিতে হচ্ছে। এটা চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অভিযোগ শতশত বিদ্যুৎ গ্রাহকের।

তেঁতুলিয়া সদরের সোনালী ব্যাংক ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের শাখা থাকলেও তাতে নেসকো লিমিটেডের কিলোওয়াট বৃদ্ধির টাকা জমা দেওয়ার কোন ব্যাংক হিসাব খোলা নেই। এতে করে মিটারে কিলোওয়াট লোড বৃদ্ধির টাকা জমা দিতে পারছেন না গ্রাহকরা। তাই বাধ্য হয়েই বিদ্যুৎ গ্রাহকদের প্রায় ২০-৩০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে বাংলাবান্ধায় গিয়ে জনতা ব্যাংকে টাকা জমা দিতে হচ্ছে।

বিদ্যুৎ সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান নেসকোর তেঁতুলিয়ার আবাসিক প্রকৌশলী সত্যজিৎ দেব শর্মা বলেন, বাসাবাড়িতে একটি রাইস কুকার চালাতেও দেড় কিলোওয়াট লোড বিদ্যুৎ লাগে। মোটরে পানি তুলতে হলে আরও বেশি লোডের প্রয়োজন হয়। এক্ষেত্রে এসব যন্ত্র ১ কিলোওয়ার্ট লোড দিয়ে চালানো অনুমোদনহীন কাজ। এর বৈধতার জন্য লোড বাড়িয়ে সমন্বয় করা হচ্ছে।

ব্যাংকের টাকা জমার দুর্ভোগ বিষয়ে প্রকৌশলী সত্যজিৎ দেব শর্মা বলেন, বিদ্যুতের বিল অনলাইন হওয়ার কারণে সোনালী ব্যাংকের সাথে আমাদের চুক্তি বাতিল হয়ে গেছে। এখন জনতা ব্যাংকের সাথে চুক্তি হয়েছে। এটা সারাদেশেই। জনতা ব্যাংকটি তেঁতুলিয়ার সদর থেকে দূরে হয়ে যাওয়ায় গ্রাহকদের একটু কষ্ট হয়ে গেছে। এক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জনতা ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে এখানে একটি শাখা চালুর ব্যবস্থার দাবি জানাতে পারেন। এখানে আমাদের করার কিছু নেই।

উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী মাহমুদুর রহমান (ডাবলু) বলেন, আসলেই বিদ্যুৎ গ্রাহকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ভোগান্তি নিরসনে উপজেলার সদরে জনতা ব্যাংকের একটি শাখা স্থাপনের করা বিষয়ে আলোচনা করা হবে। এছাড়া রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকে বিদ্যুত বিল জমাদানের ব্যবস্থা করার জন্য নেসকোর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনার মাধ্যমে অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এসকে দোয়েল/ এনটি