দিনাজপুরের খানসামা উপজেলার কৃষকরা সাধারণত রবি শস্যের উপর নির্ভরশীল। এ সময় সেখানকার কৃষকেরা বেগুনখেত পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে চলতি মৌসুমে বেগুনের বাম্পার ফলন ও প্রথম দিকে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটলেও গত এক সপ্তাহ ধরে বেগুনের দাম কমায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অধিক লাভের আশায় প্রতি বছরই আগাম জাতের বেগুন চাষ করেন খানসামা উপজেলার কৃষকরা। এতে বেশ লাভবান হন তারা। তবে চলতি বছর হঠাৎ করে জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সারসহ কীটনাশক ওষুধের দাম বাড়ায় এবং পাইকারি বাজারে বেগুনের দাম না থাকায় চাষিদের মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। 

বেগুন চাষিরা বলছেন, প্রথম দিকে খেত থেকে বেগুন ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা মণ বিক্রি করলেও গত কয়েক দিন ধরে বেগুনের দাম কমায় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এক মণ বেগুন।

উপজেলার নেউলা গ্রামের বর্গা চাষি হাছিনুর রহমান বলেন, এবার দুই বিঘা জমি ১ বছরের জন্য ৩৮ হাজার টাকায় বর্গা নিয়ে আগাম জাতের বেগুন চাষ করেছি। প্রতি বছর বেগুন চাষ করে লাভ হয়েছে। এ বছর হঠাৎ করে জ্বালানি তেল, সার কীটনাশক ওষুধসহ দিন মজুরের মূল্য বাড়ায় খরচ দ্বিগুণ হয়েছে। এদিকে গত এক সপ্তাহ আগে বেগুনের মণ ১৬০০ থেকে ১৭০০ টাকায় বিক্রি করলেও এ সপ্তাহে বেগুনের দাম কমে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা মণ বিক্রি হচ্ছে। বেগুনের দাম না বাড়লে লাভ তো দূরের কথা খরচও তুলতে পারব কি না সে চিন্তায় আছি।

আঙ্গারপাড়া ইউনিয়নের সুবর্ণখুলি এলাকার বেগুন চাষি শেফাউল ইসলাম বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে প্রতি বছর বেগুনের চাষ করেছি। এ বছর তিন বিঘা জমিতে বেগুনের চাষাবাদ করেছি। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় বেগুনের ফলন ভালো হয়েছে। আর ১০ দিনের মধ্যে খেতের বেগুন বিক্রি শুরু করব। কিন্তু হঠাৎ করে বাজারে বেগুনের দাম কমায় খুব দুশ্চিন্তায় আছি।

একই এলাকার বেগুনচাষি আবু তালেব বলেন, এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় বেগুনের বাম্পার ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে প্রায় টানা ১ মাস বেগুনের দাম ভালো ছিল। এখন অর্ধেকে নেমে এসেছে। প্রতি বিঘায় বেগুন চাষে খরচ হয় কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বেগুনখেতে রোগ মুক্ত ও আবহাওয়া অনুকূলসহ বেগুনের ভালো দাম থাকলে ১ বিঘায় ৮০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করা সম্ভব। যাবতীয় খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আয় হয়। এ বছর বেগুন চাষে খরচের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় সব জিনিসপত্রের দাম দ্বিগুণ। প্রথম দিকে দাম থাকলেও এখন বাজার না থাকায় লাভ করতে পারছি না উল্টো ক্ষতির আশঙ্কা করছি।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইয়াসমিন আক্তার বলেন, চাষিদের বেগুন চাষে উদ্বুদ্ধ করা ও বিভিন্ন সহযোগিতা দেওয়ায় এ অঞ্চলের চাষিরা বেগুন চাষে ঝুঁকছেন। এ অঞ্চলের মাটি বেগুন চাষের উপযোগী হওয়ায় চলতি মৌসুমে প্রায় ২৪০ হেক্টর জমিতে বেগুন চাষ হয়েছে। অধিকাংশ কৃষক বেগুন বিক্রি করতে শুরু করেছেন। এ বছর খরার মাত্রা বেশি থাকায় বেগুনের পাশাপাশি অন্যান্য ফসলও ব্যাপক চাষাবাদ হয়েছে। এখান কার বেগুন জেলার চাহিদা পূরণ করে ঢাকাসহ দেশে বিভিন্ন জেলায় পাঠায় কৃকরা। তবে প্রথম দিকে বেগুনের বাজার ভালো ছিল। গত দুই থেকে তিন দিনে একটু দাম কমলেও চাষিদের লোকসান হবে না।

ইমরান আলী সোহাগ/আরকে