সরকারি নিয়মানুযায়ী বিশেষ দিনে হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের খাসির মাংসসহ ভালোমানের খাবার পাওয়ার কথা থাকলেও সেই ভালো খাবার জোটেনি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া (সদর) ৩০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি থাকা রোগীদের। এ ঘটনায় অন্যের ওপর দোষ চাপিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছেন ঠিকাদার ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে খাসির মাংসের জায়গায় রোগীদের কপালে জুটেছে ব্রয়লার মুরগির মাংস। এ ছাড়াও দেওয়ার কথা থাকলেও জোটেনি সবজি, সালাদ, বুটের ডাল ও মিষ্টি। কারণ হিসেবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অবহেলা ও উদাসীনতাতেই দায়ী করছেন সবাই। 

বৃহস্পতিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে উল্লাপাড়া (সদর) ৩০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ওয়ার্ডে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এমন দৃশ্য। দুপুর ২টা বেজে গেলেও বিশেষ এই দিনে তখনো দুপুরের খাবার দেওয়া হয়নি রোগীদের। দায়িত্বরত নার্সরা জানান- দুপুরের খাবারের রান্না চলছে।

এ সময় রোগীদের কাছে সকালের খাবার সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসপাতালে ভর্তি থাকা উপজেলার উল্লাপাড়া পশ্চিম পাড়ার ৯৪ বছয় বয়সী রজব আলী, পূর্ব দেলুয়া গ্রামের সলিম উল্লাহ ও সোনতলা নতুন পাড়া গ্রামের মো. নজরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে জানান, সকালে পাউরুটি, কলা ও ডিম দেওয়া হয়েছিল। যদিও নিয়মানুযায়ী ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষ্যে খাবার দেওয়ার কথা রান্না রুটি, ডিম, সুজিসহ উন্নতমানের নাস্তা। তারা এ সব খাবার পাননি। এমনকি তখনো তারা দুপুরের খাবারও পাননি। 

দুপুর আড়াইটার দিকে বিশেষ এই দিনের খাবার নিয়ে ওয়ার্ডে আসেন ঠিকাদারের বাবুর্চি আমিনা খাতুন। তিনি তখন বিশেষ দিনের খাবার হিসেবে নিয়ে আসেন এক পিচ করে ব্রয়লার মুরগির মাংস, পাতলা ডাল ও নিম্নমানের চালের পোলাও। যদিও তালিকায় বিশেষ দিনের খাবার হিসেবে উল্লেখ আছে খাসির মাংস, পোলাও, বুটের ডাল, সবজি ও সালাদ। 

খাবারের ঠিকাদারের বাবুর্চি আমিনা খাতুন খাবার দেরিতে দেওয়ার বিষয়ে ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রথমে মাছ ও ভাত রান্না করা হয়েছিল। পরে ঠিকাদার এসে বলেছেন পোলাও ও মাংস রান্না করে দিতে হবে। পরে ব্রয়লার মুরগির মাংস ও পোলাও রান্না করতে দেরি হয়ে গেল। 

হাসপাতালে ভর্তি থাকা এক বৃদ্ধার মেয়ে মোছা. ফিরোজা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুপুরের খাবারে দেওয়া হয়েছে এক পিস ব্রয়লারের মাংস, অল্প পরিমাণ পোলাও ও পাতলা ডাল। 

তিনি বলেন, হাসপাতালে মানুষ বাধ্য হয়ে আসে, তাই তারা যা দেবে তাইতো খেতে হবে। 

এ ব্যাপারে খাবারের ঠিকাদার উল্লাপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি বিদ্যুৎ ভূইয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আজকে যে বিশেষ দিন ও বিশেষ খাবার দিতে হবে এটা আমি জানতাম না। আমাকে দুপুর পৌনে ১টার দিকে হাসপাতালের বড় বাবু (অফিস সহকারী) ফোন দিয়ে বললেন যে আজ বিশেষ খাবার দিতে হবে। কিন্তু সেই মুহূর্তে আমি খাসির মাংস কোথায় পাব? তাই অল্প সময়ে যেটুকু পেরেছি সেটুকুই দিয়েছি।

তিনি কাজ পাওয়া ঠিকাদারি লাইসেন্সের ব্যাপারে বলেন, মেসার্স আল মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ নামে যে লাইসেন্সের মাধ্যমে কাজটি নেওয়া হয়েছে সেটি উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মাহমুদের। তার লাইসেন্স দিয়ে কাজটি নিয়ে আমিই এটা পরিচালনা করি। তবে আমরা ছাত্রলীগ করি জন্য ক্ষমতা দেখিয়ে এমনটা করা হয়েছে এটা সত্য নয়। 

এ ব্যাপারে আল মাহমুদ এন্টারপ্রাইজ নামে লাইসেন্সের স্বত্বাধিকারী উল্লাপাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের তারা আগে জানাননি যে আজ বিশেষ দিন এবং ভালো খাবার দিতে হবে। যার ফলে আমরা সেভাবে দিতে পারিনি। পরে যেটুকু সম্ভব হয়েছে সেটুকুই দেওয়া হয়েছে। 

এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া (সদর) ৩০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের অফিস সহকারী মো. গোলাম কিবরিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি গতকাল সিভিল সার্জন অফিসে মিটিংয়ে ছিলাম। সেখান থেকেও আমাকে কিছু জানানো হয়নি। এ ছাড়াও আমি গতকাল অফিস করলে এমনটা হতো না। 

উপর থেকে কোনো অফিস আদেশ পাননি জানিয়ে তিনি বলেন, আজ বিশেষ দিন ও বিশেষ খাবার দিতে হবে এটা সত্য। কিন্তু আমাকে ওপর থেকে বা আরএমও (আবাসিক মেডিকেল অফিসার) এমন কোনো চিঠি দেননি। পরে জানার পরে ঠিকাদারকে ফোনে জানিয়েছি ও বিশেষ খাবার দিতে বলেছি। 

এ ব্যাপারে উল্লাপাড়া (সদর) ৩০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার অফিস সহকারী আমাকে জানিয়েছেন এমন কোনো মেইল তিনি পাননি। তবে আজকে বিশেষ খাবার দেওয়ার কথা এটাও সত্য। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝির কারণে এটা হয়নি। আমি শনিবারে অফিসে গিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো। তবে ঠিকাদার আমাকে বলেছেন তিনি অল্প সময়ে যেটুকু পেরেছেন সেটুকুই করেছেন। 

এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. রাম পদ রায়ের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

শুভ কুমার ঘোষ/আরএআর