আশা ছিল সোনালী ধান ঘরে তোলার। কিন্তু সবকিছুই তছনছ করে দিল কালবৈশাখী ঝড়। ধানের কাছে এসে কানতে কানতে বাড়ি চলে যাই। একদিকে করোনার পরিস্থিতি ভয়াবহ। অন্যদিকে ঝড়ের তাণ্ডবে সবকিছুই লন্ডভন্ড। কী করব ভেবে পাচ্ছি না। এভাবেই কষ্টগুলো  প্রকাশ করলেন বোরো ধানচাষি রত্না বৈরাগী।

বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার কালশিরা গ্রামের শুধু রত্না বৈরাগীই নয়, একই অবস্থার মুখে পড়েছেন এ এলাকার বোরো আবাদকারীরা।
  
রত্না বৈরাগী বলেন, গত বছর খাল খননের ফলে জমিতে ধান চাষ করতে পারিনি। ফলে অর্ধাহারে আর অনাহারেই কেটেছে বছর। এ বছর স্বপ্ন দেখেছিলাম ঘুরে দাঁড়ানোর। তাই খুব আশা করে ধান রোপন করেছিলাম। এক মাস বাদেই ধান কেটে ঘরে তুলতে পারতাম। কিন্তু গরিব মানুষেরা ভাবে এক আর হয় আর এক। হঠাৎ করে ঝড়ে আমার সব কিছু শেষ হয়ে গেল। ধানের মধ্যে সব চিটা, ধানে কিছু নেই।

চিতলমারী উপজেলার শ্রীরামপুর বিলে ধান লাগানো কৃষক লোপা মন্ডল বলেন, নগদ-বান্দায় (লিজ) জমি রেখে ধান লাগিয়েছিলাম। কিন্তু ধানগুলো নষ্ট হয়ে গেল। ধানের কাছে এলে চোখ থেকে শুধু জল বের হয়। কীভাবে চলব এখন। সংসারে ৬ জন লোক প্রতিদিন কাজ না করলে পেটে ভাত জোটে না। শুধু তো আমার নয়, এলাকার অনেকেই এই অবস্থা। কী যে হবে ভগবানই জানে।
একই অবস্থার মধ্যে পড়ে হতাশায় ভুগছেন চাষি সাথী মন্ডল, রনজিত কুমার, স্বপ্না রাণী সহ আরো অনেক বোরো ধান আবাদকারীরা।

হঠাৎ ঝড় ও অতিরিক্ত তাপমাত্রায় বাগেরহাটের বিভিন্ন উপজেলায় বোরো ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দূর থেকে ধান গাছগুলোকে স্বাভাবিক মনে হলেও ছড়ায় থাকা ধানগুলো চিটে হয়ে গেছে। বাতাসের তোড়ে কিছু ক্ষেতের ধান মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। গত রোববার (৪ এপ্রিল) রাতে হঠাৎ ঝড়ো বাতাসে কৃষকদের ক্ষেতের ধানের এ ক্ষতি হয়। ফলন্ত ধানের এমন ক্ষতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন চাষিরা।

তবে কৃষি বিভাগ বলছে, ফের বড় ধরনের ঝড় বৃষ্টি ও অতিরিক্ত তাপমাত্রা না হলে কৃষকরা ক্ষতি অনেকটাই পুষিয়ে উঠতে সক্ষম হবেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাগেরহাটের উপ-পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বাগেরহাটের ৯টি উপজেলায় ৫৫ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ঝড়ো বাতাসে এবং হিট স্ট্রেজের ফলে বাগেরহাটের ৯টি উপজেলায় ৪৪২ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে চিতলমারী উপজেলায় সবচেয়ে বেশি ২শ হেক্টর জমির ধানের ক্ষতি হয়েছে। আমরা চাষিদেরকে পরিমিত সেচ প্রদান ও যৌক্তিক পটাশ সারের স্প্রে করার পরামর্শ দিয়েছি।

তানজীম আহমেদ/এমএএস