খুঁটির সঙ্গে শাড়ি দিয়ে ঘেরা ঘরে দুই নাতিসহ হামিদার বসবাস
নড়বড়ে বাঁশের খুঁটির সঙ্গে পরনের শাড়ি পেঁচিয়ে দেওয়া ঘরের বেড়া। সকাল কিংবা রাত, রোদ-বৃষ্টি-শীত সারাবছর মাত্র ১০ হাতের এই খুপড়ি ঘরে নানা দুর্ভোগে দিন কাটে হামিদা বেগম ও তার পরিবারের।
রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের জগৎপুর গ্রামে প্রতিবেশী আনারুল ইসলামের বাড়ির এক কোণায় খুপরি ঘর তুলে থাকেন ৭৬ বছর বয়সী হামিদা বেগম। তার সঙ্গে থাকেন তার ছেলের বউ ও দুই নাতি।
বিজ্ঞাপন
ছেলের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম, দুই নাতি শামীম মিয়া (৮) ও সাকিব মিয়াকে (৬) নিয়ে ওই খুপরি ঘরে চলছে তার সংসার। হামিদার মানসিক ভারসাম্যহীন একমাত্র ছেলে আব্দুল হামিদ তাদের সঙ্গে থাকেন না।
হামিদা বেগম আজও স্বামীর মায়ায় পড়ে আছেন বাস্তুভিটাহীন এই গ্রামে। শুধু বিধবা ভাতা ছাড়া তার কপালে এখন পর্যন্ত জোটেনি কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে দেখা যায়, প্রতিবেশী ভ্যানচালক আনারুল ইসলামের বসতভিটার এক কোণায় ছোট্ট ১০ হাত টিনের চালা। তাতে নেই বেড়া, নেই দরজা। পরনের পুরনো কাপড় দিয়ে ঘেরা ঘরটিতে রয়েছে ছোট একটি খাট। একটি ভাঙা টেবিলে রাখা কয়েকটি পাতিল। সেখানে গাদাগাদি করে থাকেন চারজন।
ছেলে আব্দুল হামিদের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার স্বামী পাগল। সে বাড়িতে থাকে না। আমি অসুস্থ শাশুড়ি, ছেলে শামীম ও সাকিল মিয়াকে নিয়ে এই ঘরে এক খাটেই গাদাগাদি করে রাত পার করি। বৃষ্টি হলে পানি ঢুকে বিছানা ভিজে যায়। তখন সারা রাত বসে পার করতে হয়।
তিনি বলেন, আমাদের পরিবারে আয়-রোজগারের লোক নেই। আমি মানুষের বাসায় কাজ করে যা পাই, তা দিয়ে খেয়ে না খেয়ে কোনোমতে আমাদের দিন চলে। কখনো কাজ না থাকলে না খেয়ে থাকতে হয়। আশপাশের মানুষ মাঝেমধ্যে আমাদের খাবার দেয়। আমি সরকারসহ বিত্তবানদের কাছে সাহায্য কামনা করছি।
বৃদ্ধা হামিদা বেগম জানান, তার এক হাত প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে অচল। তাই তিনি কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। কয়েক মাস পর শুধু বিধবা ভাতার টাকা পান। ওই টাকা দিয়ে ৪ জনের সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দা হারুন মিয়া বলেন, আমরা জন্মের পর থেকেই তাদের দেখছি। কোনো জমিজমা নেই। অন্যের জমিতে জীবন পার করছেন। তিনি এলাকার মায়ায় কোথাও যেতেও চান না। বর্তমান যুগেও পরিবারটির যে করুণ দশা, তা খুবই দুঃখজনক। আমরা চাই তার অন্তত একটা নিরাপদ ঘরের ব্যবস্থা হোক। সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা পেলে অন্তত খেয়ে-পরে বাঁচতে পারবে পরিবারটি।
ইউপি সদস্য নুরুল আমিন বলেন, আমি যতটুকু পারি নিজে থেকে বৃদ্ধাকে সহযোগিতা করে থাকি। ঈদের সময় ওই পরিবারকে ভিজিএফ চালও দেওয়া হয়েছে। আমি তাদেরকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের ব্যবস্থা করে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু বৃদ্ধা যেতে রাজি হননি।
পারুল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, আমি ওই বৃদ্ধার ব্যাপারে তেমন কিছু জানি না। কেউ এ বিষয়ে আমাকে আগে জানায়নি। এখন জানতে পারলাম দেখি কোনো ব্যবস্থা করা যায় কিনা।
পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাজমুল হক সুমন বলেন, ওই পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোনো সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেনি। আবেদন করলে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/আরকে