অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর অসহায় বৃদ্ধা হামিদা বেগমের পাশে এগিয়ে এসেছে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। হামিদা বেগমকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরের বন্দোবস্ত করে দেওয়ার আশ্বাসের পাশাপাশি নগদ অর্থসহ শুকনো খাবার সহায়তা করা হয়েছে।

রোববার (১ অক্টোবর) সকাল ৮টা ৫৩ মিনিটে ‘খুঁটির সঙ্গে শাড়ি দিয়ে ঘেরা ঘরে দুই নাতিসহ হামিদার বসবাস’ শিরোনামে একটি মানবিক সংবাদ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট। সংবাদটি প্রকাশের পর রোববার দুপুরে পারুল ইউনিয়নের জগৎপুর গ্রামে ওই বৃদ্ধার বাড়িতে যান পীরগাছা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুসা নাসের চৌধুরী ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আব্দুল আজিজ।

সশরীরে উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা বৃদ্ধা হামিদা বেগমের অস্থায়ী বাড়িতে গিয়ে তার খোঁজখবর নেন। এ সময় তারা বৃদ্ধাকে সরকারের আশ্রয়ণ প্রকল্পে নতুন ঘর দেওয়ার প্রস্তাব দেন। কিন্তু এতে আপত্তি তুলেন ওই বৃদ্ধা। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে থাকতে অনীহা প্রকাশ করে হামিদা বেগম বলেন, এখন তো ছেলের বউসহ এলাকার লোকেরা কিছু হলেও সহযোগিতা করে। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে থাকার বন্দোবস্ত হলে গ্রাম ছেড়ে আরেক গ্রামে যেতে হবে। সেখানে তো এ ধরনের সহযোগিতা পাবো না।

হামিদা আরও বলেন, আমাকে দেখার কেউ নাই। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে গেলে কেউ দেখবে না। না খেয়ে মারা যাব। এখানে আশেপাশের লোকজন দেখে, মাঝে মাঝে খাবার দেয়। আমার বড় কষ্ট থাকার ঘর। আপনারা আমাকে একটি থাকার ঘর করে দেন।

এ সময় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে হামিদা বেগমকে কিছু শুকনো খাবার এবং নগদ অর্থ সহায়তা করা হয়। আশপাশের কেউ যদি তাকে জমি দান করেন তাহলে বৃদ্ধা হামিদার বসবাসের জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়ার আশ্বাস দেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মুসা নাসের চৌধুরী।

উল্লেখ্য, রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়নের জগৎপুর গ্রামে প্রতিবেশী আনারুল ইসলামের বাড়ির এক কোণায় খুপরি ঘর তুলে থাকেন ৭৬ বছর বয়সী হামিদা বেগম। ছোট্ট ১০ হাত টিনের চালা ঘরে নেই বেড়া, নেই দরজা। পরনের পুরোনো শাড়ি কাপড় দিয়ে ঘেরা ঘরটিতে রয়েছে ছোট একটি খাট। একটি ভাঙা টেবিল আর কয়েকটি পাতিল রয়েছে সংসারে। সেখানে হামিদার সঙ্গে তার ছেলের বউ মনোয়ারা বেগম, দুই নাতি শামীম মিয়া (৮) ও সাকিব মিয়াকে (৬) নিয়ে গাদাগাদি করে থাকেন তারা। হামিদার মানসিক ভারসাম্যহীন একমাত্র ছেলে আব্দুল হামিদ তাদের সঙ্গে থাকেন না।

হামিদা বেগম আজও স্বামীর মায়ায় পড়ে আছেন বাস্তুভিটাহীন এই গ্রামে। শুধু বিধবা ভাতা ছাড়া তার কপালে এখন পর্যন্ত জোটেনি কোনো সরকারি সুযোগ-সুবিধা। তার এক হাত প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হয়ে অচল। তাই তিনি কোনো কাজকর্ম করতে পারেন না। কয়েক মাস পর শুধু বিধবা ভাতার টাকা পান। ওই টাকা দিয়ে ৪ জনের সংসার চালানো কষ্ট হয়ে যায়।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএএ